হাসিনা বিরোধিতার অনলাইন শাস্তি? কীভাবে 'হ্যাক' হলো উপদেষ্টা-সমন্বয়কদের পেজ?
Crack Platoon-Bangladesh Cyberforce: একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের ভিতর থেকে জুলাই ষড়যন্ত্রের অন্যতম নৈরাজ্যকারী, জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাসনাত আবদুল্লাহর আইডি উড়িয়ে দেওয়ার পর ভয় পেয়ে তিনি ডিজেবল করে রেখেছেন।
একদিকে হাসিনা ও আওয়ামী লীগ পরবর্তী বিক্ষিপ্ত বাংলাদেশ নতুন করে স্থিতিশীল হওয়ার পথ খুঁজছে। চেষ্টা চলছে দেশের আইনি ও প্রশাসনিক স্তরে ভারসাম্য ফেরানোর। দেশে নির্বাচন কবে হবে, অন্তর্বর্তী সরকার নতুন বাংলাদেশ সামলাতে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে এই নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব রাজনীতিই নজরে রাখছে সমস্তটা। তবে শুধু প্রশাসনিক স্তরে বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ নয়, দেশের মধ্যে বা আন্তর্জাল জগতেও নানা সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও খান তালাত মাহমুদ রাফি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিবির সভাপতি সাদিক কায়েম, সম্পাদক এস এম ফরহাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের পড়ুয়া সৈয়দ আব্দুল্লাহর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সাইবার আক্রমণের কবলে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের কারও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না সামাজিক মাধ্যমে।
নতুন বছরের গোড়ার দিনটিতেই এই বিপত্তি নজরে এসেছে। পরে জানা যায়, স্ক্যামার গ্রুপ কর্তৃক আইডি ডিজেবলের আশঙ্কা থেকে বাঁচতে সতর্কতা হিসেবেই তাঁরা আইডি ডি-অ্যাক্টিভেট করে রেখেছেন। Crack Platoon-Bangladesh Cyberforce নামে একটি পেজ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত থাকা অনেকের আইডি ও পেজ ডিজেবল করা হয়েছে বলে দাবি। পেজ থেকে বলা হয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধী প্রচারণায় জড়িত থাকার অভিযোগে সৈয়দ আবদুল্লাহ পেজটি ফেসবুক থেকে 'রিমুভ' করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু পরিচিতিই দরকার পড়বে না! জাতীয় সংলাপে যা বললেন ইউনূস
বিষয়টি এত সহজ নয়। কেন বেছে বেছে সরকারের উপদেষ্টার পদে থাকা মানুষদের আইডি-ই পাওয়া যাচ্ছে না? আন্তর্জাতিক সাইবার অপরাধচক্রের সঙ্গে কি বিষয়টি জড়িত? হোসাইন রিয়াদ নামের এক আইডি থেকে দাবি করা হয়েছে, নিঝুম মজুমদারের দেওয়া ২০ হাজার মার্কিন ডলাবের বিনিময়ে কোনও একটি দল সাইবার অ্যাটাক শুরু করছে। যে কারণে সৈয়দ আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও তালাত রাফির আইডি 'ডিস-এবল' করে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে বাকি সবার আইডি-ও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
তবে এই বিষয়টি সত্য নয় বলেই জানিয়েছে Crack Platoon-Bangladesh Cyberforce। এই পেজে এক পোস্টে বলা হয়, "আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং সেই চেতনা লালন করি। ব্যক্তি উদ্যোগে আমরা এসব রাজাকারদের ঘুম হারাম করছি। আমাদের সঙ্গে ATeam বা Nijhum mujomdar এর Crack Platoon-Bangladesh Cyberforce ও রাজ্যসভার কোনও সম্পর্ক নেই"।
আরও পড়ুন- গণঅভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধদের জন্য যে বিশেষ পদক্ষেপ মহম্মদ ইউনূসের
Crack Platoon-Bangladesh Cyberforce-এর আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের ভিতর থেকে জুলাই ষড়যন্ত্রের অন্যতম নৈরাজ্যকারী, জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাসনাত আবদুল্লাহর আইডি উড়িয়ে দেওয়ার পর ভয় পেয়ে তিনি ডিজেবল করে রেখেছেন। তাঁর অপরাধ, তিনি পুলিশ হত্যায় জড়িত এবং মেট্রোরেলসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। বাংলাদেশের আইন অনুসারে তাঁর বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব না হওয়ায় অনলাইনে তাঁকে শাস্তি দেওয়া হলো। ওই পেজে একটি পোস্টে বলে হয়েছে,
আমরা ক্র্যাক প্লাটুন—শপথ অন্যায়ের বিরুদ্ধে, লক্ষ্য ২০২৫-এ ষড়যন্ত্র আর রাজাকারদের চিরতরে প্রতিহত করা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের প্রেরণা। ইনশাআল্লাহ, ১৯৭১-এর মতোই প্রতিটি ষড়যন্ত্র আর অন্যায়ের দাঁতভাঙা জবাব দেব। আমাদের প্রতিজ্ঞা স্পষ্ট—ন্যায়ের পথে অটল থেকে মানুষের অধিকার রক্ষা করব এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
২০২৫ আমাদের, ভবিষ্যৎ আমাদের। সবাইকে জানাই সংগ্রামের শপথে শুভ নববর্ষ। জয় বাংলা!
বিভিন্ন পোস্ট ও কমেন্টের বয়ানে নিজেদের হাসিনাপন্থী অবস্থান স্পষ্ট করেছে এই Crack Platoon-Bangladesh Cyberforce। একটি কমেন্টে লেখা হয়েছে,
সকল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে আবারো হুঁশিয়ার করে দিতে চাই।
সময় থাকলে ভালো হয়ে যান।
নতুবা আমাদেরকে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।
মুক্তিযুদ্ধের দেশে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমান করা হয়, আপনারা চুপ করে দেখেন, আর নিজেকে দাবি করেন শুভাকাঙ্ক্ষী, দেশ প্রেমিক?
অনেক হয়েছে নাটক, জুলাই আগস্টের ষড়যন্ত্র মানুষের সামনে স্বীকার করুন। নিজেদের ভুল স্বীকার করুন।
নতুবা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সম্পাদক এস এম ফরহাদ জানিয়েছেন, "আমি ও সভাপতি সাদিক কায়েম ভাইসহ অন্যান্যরা আইডি ডি-অ্যাক্টিভেট করে রেখেছি। আওয়ামী লীগের সাইবার টিম কয়েকটি আইডি ডিজেবল করে দিয়েছে। তাই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে হাসনাত, সারজিস, আসিফ মাহমুদও আইডি ডি-অ্যাক্টিভেট করে রেখেছে। স্ক্যামার গ্রুপকে শনাক্ত করে নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আইডি অ্যাক্টিভেট করা হবে।" প্রশ্ন উঠছে, এই Crack Platoon-Bangladesh Cyberforce-এর নেপথ্যে কি রয়েছে কোণঠাসা হওয়া আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সদস্যরাই? উপদেষ্টাদের ফেসবুক আইডি 'হ্যাক' হলে অন্তর্বর্তী সরকারের নিজস্ব পেজ বা ওয়েবসাইট কতটা নিরাপদ? বাংলাদেশের সরকার কি সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় সত্যিই দক্ষ?