'ঘুষ' দিতে চেয়ে বিজেপি প্রার্থীর ফোন কুণাল ঘোষকে? কতটা সত্য লুকিয়ে ফোন রেকর্ডে?

Kunal Ghosh vs Kalyan Chaubey: কল্যাণ চৌবে স্বীকার করেছেন, কুণাল ঘোষ যে ফোন রেকর্ড প্রকাশ করেছেন তাতে তাঁর গলাই রয়েছে।

লোকসভা নির্বাচন মিটতেই উপনির্বাচন। রাজ্যের একাধিক বিধানসভা আসনই বিভিন্ন কারণে বিধায়কহীন। রাজ্যের ১০ টি এমন আসনের মধ্যে ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন বুধবার, ১০ জুলাই। উপনির্বাচনে রাজ্যে শাসক তৃণমূল বনাম বিরোধী বিজেপির মধ্যেকার লড়াই গুরুত্বপূর্ণ কারণ সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির অত্যন্ত খারাপ পারফরম্যান্স। নির্বাচন শুরুর ঠিক আগের দিন এই লড়াইকে আরও পোক্ত করে দিলেন তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ। কুণালের দাবি, উপনির্বাচনে সাহায্য চেয়ে স্বয়ং বিজেপি প্রার্থী ‘ঘুষের বিনিময়ে অন্তর্ঘাতের প্রস্তাব’ দিয়েছেন তাঁকে।

বিধানসভা উপনির্বাচনের ঠিক তিন দিন আগে নাকি কুণাল ঘোষকে এই প্রস্তাব দিয়েছেন মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী। কুণালের দাবি, ‘‘গত ৭ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার সময় আমাকে ফোন করেছিলেন মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী কল্যাণ চৌবে। তিনি আমাকে প্রস্তাব দেন, তাঁর হয়ে কাজ করলে রাজ্য বা জাতীয় স্তরে খেলার জগতে বড় পদ দেবেন।’’ এই দাবির সপক্ষে তিনি ফোন রেকর্ডও প্রকাশ করেছেন (এই রেকর্ডের সত্যতা যাচাই করেনি ইনস্ক্রিপ্ট)। কুণাল আরও বলেন, ‘‘ভোটের প্রচারে পিছিয়ে রয়েছেন বুঝে বিজেপির প্রার্থী প্রলোভন দেখাচ্ছেন জয়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূলকে। প্রস্তাব দিচ্ছেন দলের সঙ্গে বেইমানি করার। এটাই বিজেপি। এমনই ওদের নোংরা মানসিকতা।’’

আরও পড়ুন- নক্ষত্রের দোষ নাকি শত্রুর বাড়বাড়ন্ত, কেন বারবার খাদের অতলে তলিয়ে যান কুণাল ঘোষ?

সত্যিই কি কল্যাণ চৌবে ফোন করেছিলেন কুণাল ঘোষকে? কল্যাণ চৌবে স্বীকার করেছেন, কুণাল ঘোষ যে ফোন রেকর্ড প্রকাশ করেছেন তাতে তাঁর গলাই রয়েছে। কিন্তু বাকি অভিযোগ তিনি একেবারেই অস্বীকার করেছেন। মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবের দাবি, কুণালকে তিনি ফোন করেছিলেন ঠিকই কিন্তু যে রেকর্ডিং প্রকাশ করা হয়েছে তা গোটাটা নয়। খণ্ডসত্য তুলে ধরা হচ্ছে। মজার বিষয় হলো, কুণালও বলছেন, হ্যাঁ, তিনি আংশিক কথোপকথনের রেকর্ডিংই প্রকাশ করেছেন। কুণাল ঘোষ বলছেন, "কল্যাণ যদি চান, তবে ফোনের রিং বাজা থেকে ফোন রাখা পর্যন্ত রেকর্ডিং প্রকাশ করে দেব। যে রেকর্ডিংয়ের শেষে ক্ষমা চাইতেও শোনা গিয়েছে ওঁকে।’’

মঙ্গলবার কুণাল নিজের এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘কল্যাণ চৌবের পুরো অডিও এক ঘণ্টা পর। দেখবেন— ১। ধর্মেন্দ্র প্রধান ইস্যুতে ক্ষমা চেয়েছে। ২। আমার বিজেপি যোগের গল্প নিয়ে একটি শব্দ নেই। ৩। ভোটে সাহায্য চেয়ে বিনিময়ে পদ দেওয়ার কথা বলেছে। রাত আটটায় মিলিয়ে নেবেন।’’ রাত ঠিক ৮টায় ফোন রেকর্ডটি পোস্ট করে দেন কুণাল। কল্যাণকে সেখানে কুণালের 'বৃহৎ ভূমিকা'-র 'টোপ দিতে শোনা যায়। 

মানিকতলা, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ এবং রায়গঞ্জের উপনির্বাচনে বিজেপি জিততে মরিয়া কারণ তাতে লোকসভা নির্বাচনে হারানো ভোটগুলি কিছুটা হলেও ফিরে পেয়ে জমি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর তৃণমূল তথা রাজ্যের শাসকদল স্বাভাবিকভাবেই এই আসন দখলে রাখতে চাইবে যাতে বিজেপির উপর চাপ আরও বাড়ে। তৃণমূলই মানিকতলায় ভোট সামলানোর দায়িত্ব দেয় কুণাল ঘোষকে। কুণাল বলছেন, তিনি মানিকতলার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনেই মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে তাঁকে ফোন করেন ও সাহায্য চান।

কুণাল বলছেন, ‘‘যদি ধরে নিই গণতান্ত্রিক পরিবারের সৌজন্যের খাতিরে তিনি প্রতিপক্ষের কাছে সাহায্য চাইছেন, তবে আমার কিছু বলার ছিল না। তিনি সেটাই করতে পারতেন। কিন্তু এর পরে তিনি বললেন, ওঁর হয়ে কাজ করলে ক্রীড়াক্ষেত্রে রাজ্য বা কেন্দ্রে বড় পদে নিয়ে যাবেন। এ তো ঘুষ! ‘মোহনবাগান সহ-সভাপতিকে ঘুষের কথা বলবেন, আর আমি নাচতে নাচতে যাব? অফার বাতিল করে দিয়েছি।’’ বিজেপির মানিকতলা প্রার্থী তথা অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌবে অবশ্য বলছেন, অফার বাতিলের জায়গাই নেই কারণ এমন 'অফার' তিনি দেননি। রেকর্ডিংয়ে এডিট করে তাঁর বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ৪ কেন্দ্রে উপনির্বাচন! দেশের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হতে পারবেন মতুয়া কন্যা মধুপর্ণা?

কল্যাণ বলছেন, ‘‘আমি একজন প্রার্থী হিসাবে সবার কাছেই গিয়েছি। তাঁদের কাছে সাহায্য চেয়েছি। ওঁকেও সে ভাবেই ফোন করেছিলাম কিন্তু কোনও ঘুষের প্রস্তাব দিইনি। বরং তিনিই এক সপ্তাহ আগে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন তিনি বিজেপির নেতৃত্বের সঙ্গে বসতে চান। এর আগে তিনি বহুবার আমার বাড়িতে এসেছেন। ২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দিতেও চেয়েছিলেন। সেই সূত্রেই আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলি। কারণ যিনি আমার দলেই আসার কথা ভাবছেন, তাঁর কাছে আমি সাহায্য চাইতে পারি বলে মনে হয়েছিল।’’

কল্যাণ চৌবে যেই কুণালের বিজেপি যোগ নিয়ে সওয়াল তোলেন, পাল্টা কুণালও নেমে পড়েন ইমেজ বাঁচাতে। কুণাল ঘোষ বলছেন, ‘‘তিনি বলেছেন, প্রার্থী হিসাবে আমাকে ফোন করেছেন কিন্তু আমি তো মানিকতলার ভোটারই নই। ফলে ভোট চেয়ে আমাকে ফোন করার প্রশ্ন নেই। আসলে আমি তৃণমূলের ভোট ম্যানেজার বলেই আমাকে ফোন করেছিলেন।’’ তবে বিজেপি যোগ নিয়ে সাফাই দিতে গিয়ে উপনির্বাচনে খোদ মোদিকে টেনে এনেছেন কুণাল। বলছেন, "আমার যদি বিজেপিতে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, তা হলে মনে রাখবেন নরেন্দ্র মোদি আমাকে চেনেন। আমার কাকা মোদি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন। বিজেপিতে যোগ দিতে চাইলে ওই পচা কল্যাণকে আমার দরকার হবে না।’’

More Articles