অভিষেক 'টবের গাছ'! এবার নতুন কোন ভবিষ্যদ্বাণী প্রশান্ত কিশোরের?

Prashant Kishor: শুধু নীতীশ নয়, সম্প্রতি তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়েও ভবিষ্য়দ্বাণী করেছেন প্রশান্ত কিশোর।

ভারতীয় রাজনীতির শ্রীকৃষ্ণ যেন তিনি। তিনি যা বলেন, তা ফলে যায় অক্ষরে অক্ষরে। রাজনীতির কুরুক্ষেত্রে যে রাজনৈতিক দলের রথের রশি প্রশান্ত কিশোরের হাতে, সেই দলের জয় একপ্রকার নিশ্চিত। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে রাজনীতির ময়দানে এ এক চালু কথা। সম্প্রতি শোনা যায়, তাঁর সংস্থা আইপ্যাক থেকে সরে এসেছেন প্রশান্ত কিশোর। তবে আইপ্যাকের সঙ্গে সম্পর্ক তার একেবারে ঘোঁচেনি মোটেই। শিয়রে লোকসভা ভোট। তার আগে গোটা দেশ জুড়েই রাজনীতির ময়দানে নানা ধরনের শোরগোল চলছে। সেই সব পালাবদল, রাজনৈতিক অস্থিরতা সম্পর্কে কী ভাবছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর? আর এ দেশের রাজনীতিতে তাঁর ভাবনা বা ভবিষ্যদ্বাণীর যে বিশেষ একটা গুরুত্ব আছেই, তা তো আর আলাদা করে বলে দিতে হয় না।

দিন কয়েক আগেই বিহারে রাজনীতির ময়দানে বিরাট পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। হঠাৎ করেই পাল্টি খেয়ে ফের বিজেপির হাত ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। আর তার প্রভাব পড়েছে জাতীয় রাজনীতিতেই। এ বছর প্রায় ২৬টি বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল মিলে গড়ে তুলেছে বিরোধী-জোট ইন্ডিয়া। সেই ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম মুখ ছিলেন নীতীশও। ফলে তার ভোল বদলে দুর্বল হয়েছে জোটও। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ঝাড়খণ্ডে ইডি-র হাতে গ্রেফতার হন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। ফলে বিরাট রাজনৈতিক বদল হয়েছে সেখানেও। যদিও দেশের রাজ শেষপর্যন্ত জেএমএম-আরজেডি-কংগ্রেস জোটের হাতেই রাখতে পেরেছেন হেমন্ত। সোমবারই আস্থা ভোটে জিতে সেখানে সরকার গড়েছেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার পুরনো সদস্য চম্পাই সোরেন। এদিকে আবার ক্রমশ চওড়া হয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব। গোড়া থেকেই রাজ্যে 'একলা চলো' নীতির কথা বলে এসেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে মমতার বিরোধ সপ্তমে চড়েছে। রাহুলের বাংলায় 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা'য় বারবার আমন্ত্রণ পাওয়ার পরেও তা এড়িয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। এমনকী একই দিনে একই জায়গায় জনসভা করে কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি, যে কংগ্রেসকে একচুলও জমি ছাড়তে নারাজ মমতা। এদিকে পঞ্জাব ও হরিয়ানাতে মমতার দেখানো পথেই হাঁটতে চেয়েছেন ইন্ডিয়া জোটের আরেক সদস্য কেজরিবালের দল আম আদমী পার্টি।

আরও পড়ুন: ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের ফল কী, একবাক্যে যা জানালেন প্রশান্ত কিশোর

নীতীশ কুমারের এই সঙ্গ পরিবর্তনের অভ্যাস বহু পুরনো। এর আগেও একাধিক বার দল বদলেছেন তিনি। নীতীশের দলবদলের পর পরই প্রশান্ত কিশোর জানিয়েছিলেন, নীতীশের জেডিইউয়ের সঙ্গে এনডিএ-র এই সখ্য নাকি বেশিদিন টেকার নয়। খুব শিগগিরই ভাঙবে বিহারে গঠিত জনতা দল (ইউনাইটেড) আর বিজেপির এই নতুন জোট। সম্প্রতি নীতীশ কুমারকে অত্যন্ত ধূর্ত বলেও বর্ণনা করেছেন প্রশান্ত। সম্প্রতি 'আপ কি আদালত' অনুষ্ঠানে ডাক পেয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। নীতীশের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো বলে জানান পিকে। অনেকটাই পিতা-পুত্রের সম্পর্কও বলা যায়। দীর্ঘদিন নীতীশের বাড়িতে থেকেওছেন তিনি। তা সত্ত্বেও ভোটকুশলী ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞ হিসেবে পিকে নীতীশের সমালোচনা করতে ছাড়েননি তিনি। পিকে জানান, ২০১৪ সালের ভোটে নীতীশ নন, তার দল হেরেছিল। সেসময় ইস্তফা দিয়ে জিতন রাম মাঁঝির হাতে দায়িত্ব তুলে দেন তিনি। ৪২ জন বিধায়কের সমর্থন নিয়েও হেরে গিয়েছিলেন নীতীশ। বারবার এই রাজনৈতিক দলবদল তিনি করেই গিয়েছেন। বিহারে পরবর্তী বিধানসভা ভোট ২০২৫ সালে। পিকের দাবি, সেই নির্বাচনে নীতীশের দল জেডিইউ সে রাজ্যের ২৪৩টি আসনের মধ্যে ২০টির বেশি জিততে পারবে না। তিনি এ-ও বলেন, "যে জোটের হয়েই লড়ুন না কেন, নীতীশের দল যদি ২০টির বেশি আসনে জেতে, আমি আমার কাজ ছেড়ে দেব।"

Lok Sabha Election 2024 Why Prashant Kishor called Abhishek Banerjee 'badstock'

সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন, ২০২৪ লোকসভা ভোটের ফলাফল নিয়ে। অবশ্য কথা বলা ঠিক বলা যায় না তাকে। বরং ভবিষ্যদ্বাণী বললেই বোধহয় সঠিক হবে। আপাতত ২০২৪ ভোটই পাখির চোখ সব দলের। একদিকে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি সরকার, অন্যদিকে, বিজেপি বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া', যাদের মধ্যে কোনও না কোনও ভাবে মতান্তর থেকেই যাচ্ছে। যত ভোট কাছে আসছে, তত চওড়া হচ্ছে অন্দরের বিবাদ। আর তা-ই ফের বিজেপি সরকারের ফিরে আসার সম্ভাবনাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে দাবি অভিজ্ঞদের। এরই মধ্যে লোকসভা ভোটে বিজেপির নিরঙ্কুশ জয় (ক্লিন সুইপ)-রই আভাস দিলেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। তিনি জানিয়ে দেন, এই ভোটেও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিপুল জয় পেতে চলেছে এনডিএ জোট। আর তাতে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই বলেই জানিয়ে দেন প্রশান্ত কিশোর। ২০২১ সালে বাংলায় নীলবাড়ির লড়াইয়ের আগেও পিকে জানিয়েছিলেন, বিজেপি ১০০ আসনে জিতলে তিনি ‘নির্বাচনী পরামর্শদাতার’ কাজ ছেড়ে দেবেন। তাঁর সেই ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়েছিল। তবে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পরই বাংলার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান পিকে। তবে এখনও বঙ্গের ভোটের দায়িত্বে রয়েছে আইপ্যাক-ই। আনুষ্ঠানিক ভাবে আইপ্যাকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।

প্রশান্ত কিশোর যখন এমন কিছু বলেন, তখন তার যে কোনও না কোনও ভিত্তি রয়েইছে, তা ধরে নেওয়াই যায়। শুধু নীতীশ নয়, সম্প্রতি তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়েও ভবিষ্য়দ্বাণী করেছেন প্রশান্ত কিশোর। তাঁর কথায়, অভিষেকেরা টবে পোঁতা গাছ ছাড়া আর কিছুই নয়। সাম্প্রতিক কোন রাজনৈতিক মুখের উপর বাজি ধরতে চান ভোটকুশলী, এই মর্মে তাঁকে একটি প্রশ্ন করা হয়। বিকল্প হিসেবে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েকটি নাম। অখিলেশ যাদব, আদিত্য ঠাকরে, চিরাগ পাসওয়ান, কেটিআর, জন রেড্ডি, রাঘব চাড্ডা, ওমর আবদুল্লা, উদয়নিধি স্টালিন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ছিল সেই তালিকায়। তার উত্তরে পিকে জানান, তিনি কারওর উপরেই রাজনৈতিক বাজি ধরতে রাজি নন, কারণ যাদের নাম বলা হয়েছে, তাঁরা সকালেই প্লটেড প্ল্যান্টস। পাশাপাশি এদের সকলকেই 'ব্যাড স্টক' বলেও দাবি করেন প্রশান্ত কিশোর। এদের কাউকেই তিনি দক্ষ রাজনীতিক মনে করেন না বলেও জানান তিনি। সেই নিয়ে স্বভাবতই বেশ বিতর্ক শুরু হয়। তবে তিনি প্রশান্ত কিশোর। ভোট রাজনীতির চাণক্য থেকে কৃষ্ণ, সবই তিনি। তিনি যা বলেন, তার অধিকাংশই যে ফলে যায়, এ কথা বোধহয় সকলেই জানেন। সেই মতো ক্ষেত্রসমীক্ষার পরেই মুখ থেকে কোনও একটা কথা খসান পিকে।

আরও পড়ুন: বিজেপির সঙ্গে কতদিন থাকবেন নীতীশ? ভবিষ্যদ্বাণী প্রশান্ত কিশোরের…

ফলে লোকসভা ভোটের আগে পিকের মুখ থেকে খসা প্রতিটা অক্ষরেরই যে আলাদা দাম রয়েছে রাজনীতির মঞ্চে, তা তো নতুন কথা নয়। ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপেই ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যত নিয়ে আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছে কংগ্রেস। তবে প্রশান্ত কিশোরের কথা যদি ধরা যায়, তাহলে তো ইন্ডিয়া জোটের সাফল্য যথেষ্ট সংশয়ের মুখে। আদৌ ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি ঝড়ের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে এই বিরোধী জোট, নাকি স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। সেই প্রশ্নই নতুন করে চাগাড় দিয়েছে পিকে-র একগুচ্ছ ভবিষ্যদ্বাণীর পরে।

 

 

More Articles