ভাগাড় কাণ্ড মনে আছে? ওয়েব সিরিজ ফেরাচ্ছে পচা মাংসের গন্ধ

ফিরে দেখা আজ থেকে চার বছর আগের সেই ঘটনা, যে ঘটনায় গোটা বাংলা কেঁপে উঠেছিল।

ওটিটিতে আসছে নতুন চমক। ২০১৮ সালের ভাগাড় কাণ্ডের কথা নিশ্চয়ই এখনও ভোলেনি পশ্চিমবঙ্গবাসী। সেই ভাগাড় কাণ্ডের প্রেক্ষিতেই Klikk OTT তে আগস্ট মাসের শেষে স্ট্রিমিং হবে স্কাইপ্যানস কমিউনিকেশন প্রযোজিত 'ভাগাড়'। অম্লান মজুমদারের কাহিনি ও চিত্রনাট্য অবলম্বনে রাজদীপ ঘোষের পরিচালনায় অভিনয় করতে দেখা যাবে সব্যসাচী চৌধুরী, রজতাভ দত্ত, ঐন্দ্রিলা শর্মা, মৌ ভট্টাচার্য ও সুমন্ত মুখোপাধ্যায়কে। দেখা যাক ঠিক কীভাবে পরিচালক গড়েছেন ছবির বয়ান। একই সঙ্গে ফিরে দেখব আজ থেকে চার বছর আগের সেই ঘটনা।

কাহিনির প্রেক্ষাপট

২০১৮ সালের ভাগাড় কাণ্ডে কেঁপে উঠেছিল সারা বাংলা।সেই ভাগাড় কাণ্ডের শিকার হয়েছিল কাহিনির প্রধান চরিত্র নোনাডাঙার পরেশ। বিরিয়ানিতে থাকা পচা বিড়ালের মাংস কেড়ে নিয়েছিল তাঁর একমাত্র সন্তানের জীবন। তারপর থেকেই ভীতু, শিরদাঁড়াহীন, গোবেচারা নিম্নবিত্ত মানুষটাকে আর সহ্য করতে পারে না তাঁর স্ত্রী।

ওয়েব সিরিজের একটি দৃশ্যে রজতাভ দত্ত

ক্ষতবিক্ষত পরেশ তাই একদিন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।কিন্তু তাঁর আত্মহননের যাবতীয় ব্যর্থ হয়ে যায়। আর ঠিক তখনই খবরের কাগজে পড়েন এক ব্যক্তি সুপারি কিলার ঠিক করে ৫০ হাজার টাকার বিনিমেয় বেছে নিয়েছেন যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর পথ। কিন্তু শেষ অবধি কী পরিণতি হয় পরেশের?

Bhagar scene

একটি দৃশ্যে সব্যসাচী চৌধুরী

ইউটিউবার অনির্বাণ তাঁর নিজস্ব চ্যানেলের জন্য ভিডিও বানাতে গিয়ে এক জাল বেবিফুড ফ্যাক্টরির হদিস পায়, যার মালিক ইকবাল শাহেরিয়া। তাঁর ছবি দেখে চমকে ওঠে অনির্বাণ। নোনাডাঙ্গা ভাগাড়কাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত কুখ্যাত সমাজবিরোধীই যে ইকবাল তা বুঝতে খুব দেরি হয়নি অনির্বাণের। আজ যেমন সে সুপারি কিলার, তেমনই গোপনে চলে তাঁর জাল বেবিফুডের ব্যবসা। তাঁর কাছেই সুপারি দিতে আসে নোনাডাঙার পরেশ। যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর রফা হয় ৫০ হাজার টাকায়। মরার আগে শেষ খাওয়ার খেতে পরেশ ঢোকে ফুটপাতের হোটেলে। সেখানেই পরেশ কে লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইকবালের গুন্ডারা। কিন্তু দুর্ভাগ্য গুলিতে মৃত্যু হয় অন্য এক ব্যক্তির। চোখের সামনে মৃত্যু যন্ত্রনা কত ভয়ংকর তা আজ হারে হারে বুঝতে পারে পরেশ। তাই এবার বাঁচতে চায় পরেশ। কি হবে এবার?তাঁর পিছনে ছুটছে সুপারি কিলারের দল।

একটি দৃশ্যে প্রীতম দাস ও ঐন্দ্রিলা শর্মা

অন‍্য দিকে অর্নিবানকে সামলাতে মাঠে নামেন ইন্সপেক্টর লাহা। জাল বেবী ফুডের ভিডিও ফুটেজ যদি একবার জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে যায় তাহলেই সর্বনাশ।অর্নিবান কি পারবে ইকবাল ও লাহার সমস্ত পরিকল্পনা বানচাল করতে? কী ভাবে ঘটেছিল ভাগাড়কান্ড? তার ইতিহাসই বা কী?এসব যাবতীয় অজানা কাহিনী উঠে আসবে ক‍্যানভাসে।

ফিরে দেখা ভাগাড় কান্ড

২০১৮ সালের মার্চ মাসে পুলিশের কাছে খবর পৌঁছায় বাজারে পচা মাংস বিক্রি নিয়ে। সেই মতো কলকাতা পুলিশ ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার পুলিশ নারকেলডাঙ্গা এলাকার একটি হিমঘর থেকে প্রায়  ২০ কেজি ওজনের প্রায় এক হাজার কেজি মাংসের প্যাকেট উদ্ধার করেন প্রথম। জানা যায় উদ্ধার হওয়া মাংস আসলে মৃত প্রাণীর পচা মাংস। শহর জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশের হাতে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসতে থাকে। সেই সময় পুলিশ আধিকারিকেরা জানিয়েছিলেন যে কলকাতা এবং শহরতলীর একাধিক নামিদামি রেস্তোরাতেও সরবরাহ করা হয়েছে এই মাংস। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে মাংস সরবরাহ করার আগে সেগুলির পচন ও দুর্গন্ধ রুখতে বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছিল। ভাগাড় থেকে সংগ্রহ করা মৃত প্রাণীর দেহ থেকে মাংস কেটে সেগুলি বিক্রি করা হতো বাজারে। পচা মাংস ভর্তি একাধিক রেফ্রিজারেটর ও উদ্ধার করে পুলিশের তদন্তকারী দল।

সংগ্রহ করা মাংস প্রথমে ফরমালিনে ধুয়ে তা থেকে চর্বি আলাদা করে দেওয়া হত মাংসের পচন রুখতে। এরপর তাতে দেওয়া হত ক্যালশিয়াম প্রোপেনয়েট ইনজেকশন। দুর্গন্ধ রুখতে মাংসে অ্যালুমিনিয়াম সালফেট এবং সীসা সালফেট ব্যবহার করা হয়। এরপর সেই মাংসগুলি বাজার এবং রেস্তোরাঁয় সরবরাহ করা হতো। নিউটাউন এলাকার স্থানীয় মানুষেরা পচা মাংস ভর্তি একটি ট্যাক্সি হাতে নাতে ধরেন। ভাগাড় থেকে মাংস সংগ্রহ করে বেরোনোর মুখে স্থানীয়রা আটকে দেয় ওই ট্যাক্সিকে। তদন্ত করে জানতে পারে যে ভাগাড়ে মৃতদেহ ফেললেই তাঁর খবর চলে যেত ভাগাড় মাংসের ব্যবসায়ীদের কাছে। সেইমত লোক পাঠিয়ে মৃতদেহ থেকে মাংস সংগ্রহ করে তা হিমঘরে প্রসেসিং ও স্টোরেজের জন্য পাঠানো হত। তারপর চাহিদা মতো পৌঁছে দেওয়া হত বাজার কিংবা রেস্টুরেন্টগুলিতে। পচা মাংস উদ্ধারের ঘটনায় হতবাক হয়ে যায় শহরবাসী। শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ঘটনার সাথে জড়িত মোট বারো জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেবছরই আগস্ট মাসে কোর্টে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। তবে পরবর্তী সময়ে তদন্তের ভার পড়ে সিআইডি কাঁধে।

বিভীষিকাময় সেই দিনগুলির কাহিনি কীভাবে ফুটে ওঠে ওয়েব সিরিজ 'ভাগাড়'-এ, এখন তার অপেক্ষাতেই দর্শকেরা।

More Articles