লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত মহুয়া মৈত্র! কেন একটি কথাও বলতে দেওয়া হলো না সাংসদকে?

Mahua Moitra expelled from Lok Sabha : এথিক্স কমিটির প্রতিবেদনকে শিরোধার্য করেই, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই বহিষ্কার করা হয় মহুয়া মৈত্রকে।

কী হতে চলেছে তা একপ্রকার জানাই ছিল। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা ছিল মাত্র। টাকা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মহুয়া মৈত্র। লোকসভায় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী যে প্রস্তাব পেশ করেন, তা ধ্বনিভোটে পাস হয়ে যায়। 'ক্যাশ ফর কোয়ারি', দীর্ঘদিন ধরেই এই অভিযোগ বিজেপি তুলে এসেছে সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে। এথিক্স কমিটির প্রতিবেদন আসা মাত্রই লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে মহুয়াকে। অভিযোগ ছিল, সংসদে নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করার জন্য, আক্রমণ করার জন্য ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে নগদ ২ কোটি টাকা নিয়েছেন মহুয়া। এর পাশাপাশি বিবিধ 'বিলাস সামগ্রী'-ও উপহার হিসেবে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷

শুধু তাই নয়, সংসদের ওয়েবসাইটে একটি গোপন অ্যাকাউন্টে লগ-ইন বিষয়ক তথ্যও তিনি বাইরের ব্যক্তির সঙ্গে শেয়ার করেছেন বলে অভিযোগ যাতে হিরানন্দানি সরাসরি প্রশ্ন পোস্ট করতে পারেন। বরাবরই মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন মহুয়া। তৃণমূল কংগ্রেসের এই মুখ বিজেপি বিরোধী তীব্র স্বর হিসেবে নিজেকে স্থাপন করেছিলেন দাপটেই। বহিষ্কারের ঘটনার আগে মহুয়া মৈত্র নিজেই জানিয়েছিলেন লগ-ইন তথ্য তিনি শেয়ার করেছিলেন ঠিকই কিন্তু ঘুষের অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা।

এথিক্স কমিটি প্রায় ৫০০ পাতার এক রিপোর্ট পেশ করে। এই প্রতিবেদন ঘিরে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিরোধীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপিত হওয়ার পরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয় তা নিয়ে। বিরোধী সাংসদরা কমিটির এই ফলাফল খতিয়ে দেখার জন্য আরও সময় দাবি করেন। সংসদে মহুয়া মৈত্রকে বলতে দেওয়ার দাবিও ওঠে প্রবল। দাবি ধোপে টেকে না। এথিক্স কমিটির প্রতিবেদনকে শিরোধার্য করেই, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই বহিষ্কার করা হয় মহুয়া মৈত্রকে।

আরও পড়ুন- মহুয়া মৈত্রের ‘চরিত্র’ নিয়েই চর্চা স্রেফ! কোথায় গেল আদানির দুর্নীতির প্রশ্নগুলি?

লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা মহুয়া মৈত্রকে কথা বলার অনুমতি দিতে চাননি। ২০০৫ সালের একটি ঘটনার উদাহরণ টানেন তিনি। সেবার বিজেপির ছয়জন সহ ১০ জন সাংসদকে বহিষ্কার করা হয়েছিল এমনই এক বিতর্ক ওঠায়। সেইসময় লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, রিপোর্ট পেশ হয়ে যাওয়ার পর অভিযুক্ত সাংসদদের সংসদে কথা বলার কোনও অধিকার নেই।

মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে এথিক্স কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, "অবৈধ উপহার গ্রহণের অভিযোগগুলি স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং অনস্বীকার্য", এবং "সেই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপহার নেওয়া, যার সঙ্গে তিনি লগ-ইন ডিটেইলস শেয়ার করেছেন তা একজন সংসদ সদস্যের অসামাজিক এবং অনৈতিক আচরণ"।

বহিষ্কারের পর মহুয়া মৈত্র বলেন, এথিক্স কমিটি প্রমাণ ছাড়াই কাজটা করেছে। "... যদি এই মোদি সরকার মনে করে যে আমাকে বহিষ্কার করে তারা আদানি ইস্যুটি থামিয়ে দিতে পারে, তবে বলি যে তাড়াহুড়ো এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করেছেন আপনারা তা প্রমাণ করে যে আদানি আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।"

এথিক্স কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশ ছিল, "সাংসদ মহুয়া মৈত্র সপ্তদশ লোকসভার সদস্যপদ থেকে বহিষ্কৃত হতে পারেন"। কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তেওয়ারি, তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জেডিইউ সাংসদ গিরিধারী যাদব কমিটির সুপারিশের বিরোধিতা করেছিলেন। অন্যদিকে, বিজেপি সাংসদ ডাঃ হিনা ভি গাভিত এবং অপরাজিতা সারঙ্গি এথিক্স কমিটির সুপারিশকে সমর্থন করেন। ওই রিপোর্টে মহুয়া মৈত্রের "অনৈতিক, জঘন্য এবং অপরাধমূলক আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কর্তৃক আইনি প্রাতিষ্ঠানিক তদন্তের" আহ্বানও জানানো হয়েছে।

More Articles