ঘুমের মধ্যেই ৫০০-রও বেশি মৃত, শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পে যে বীভৎস ছবি দেখল তুরস্ক

Turkey Massive Earthquake : পরপর দুটো ভূমিকম্পের রেশ বেশ কয়েক সেকেন্ড ধরে চলে। আর তার ফলেই ঘটে চরম বিপর্যয়।

একের পর এক বাড়িঘর ভেঙে পড়ছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়েছে গাড়ি। চারিদিকে মানুষের আর্তনাদ, যে যেখানে পারছে ছুটে বেড়াচ্ছে। আপাতত তুরস্ক ও সিরিয়ার চেহারাটা ঠিক এমনই। ৬ ফেব্রুয়ারি, সোমবার, ভোররাতে তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয় সেখানে। রিখটার স্কেলে যার মান ছিল ৭.৮। কেবল তুরস্ক নয়, সিরিয়া, লেবানন, ইজরায়েল, সাইপ্রাস, গ্রিসেও সেই ভূমিকম্পের প্রভাব পড়ে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় একটা গোটা এলাকা। স্থানীয় প্রশাসন, সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের সংখ্যা এখনও সঠিকভাবে জানা যাচ্ছে না। তবে এখনও অবধি ৫০০-রও বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ধ্বংসস্তূপ থেকে। ২৩০০-এরও বেশি মানুষ গুরুতর আহত। এই সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে, আশঙ্কা প্রশাসনের।

৬ ফেব্রুয়ারি, তুরস্কের স্থানীয় সময় ভোর ৪ টে ১৭ মিনিট। অধিকাংশ মানুষই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তখনই তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক, সিরিয়া। গাজিয়ানতেপের নুরদাগি শহরের ২৬ কিমি দূরে ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল। ঠিক তারপরেই আরও একটি ভূকম্প হয়, যার মান ছিল ৬.৭। আগেরটার তুলনায় তীব্রতার বিচারে একটু কম হলেও, একেবারে নিরীহ ছিল না। পরপর দুটো ভূমিকম্পের রেশ বেশ কয়েক সেকেন্ড ধরে চলে। আর তার ফলেই ঘটে চরম বিপর্যয়। কারও কারও মতে, পুরো কম্পন অন্তত ২-৩ মিনিট ধরে হয়।

এর ফলে তুরস্কের ১০ টি শহর প্রবল ক্ষতির মুখে পড়ে। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় জানান, অন্তত ১৭০০ টি বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। সমস্যা আরও বাড়ে অন্য জায়গায়। যে সময়ে ভূমিকম্প হয়, তখন অধিকাংশ মানুষই ঘুমিয়েছিলেন। ফলে কম্পন টের পাওয়ার পর চট করে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেননি। একের পর এক বাড়ি, ফ্ল্যাট ভেঙে যায়, ব্রিজ ভেঙে যায়। আর মানুষ ঘুমের মধ্যেই সেই বিশাল ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন। এখনও অনেকেই সেখানে চাপা পড়ে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যত সময় যাচ্ছে, মৃত ও আহতের গ্রাফ ততই বাড়ছে। এর জেরেই আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে তুরস্ক ও সিরিয়া প্রশাসন।

এই ঘটনা ঘটার পরই রীতিমতো আতঙ্ক শুরু হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও সেই রেশ এসে পড়ে। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কীরকম হয়েছে, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। ১৯৯৯ সালে তুরস্ক এরকমই একটি ভূমিকম্প দেখেছিল। অবশ্য তার তীব্রতা ছিল ৭.৬। সেই সময় ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন এই ঘটনায়। খাতায় কলমে তীব্রতার বিচারে সেই ভূমিকম্পের থেকে বেশি তীব্রতা দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিক এই কম্পনে। কাজেই মৃত আর ক্ষয়ক্ষতির হিসেব আরও বাড়বে বলেই মনে করছে প্রশাসন।

ইতিমধ্যেই জানা যাচ্ছে, ভূমিকম্পের জেরে তুরস্কের শতাব্দীপ্রাচীন, ঐতিহাসিক গাজিয়ানতেপ দুর্গ ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে। প্রায় ধ্বংসই হয়ে গিয়েছে বলা যায়। এছাড়াও সতেরোশো শতকে তৈরি ঐতিহাসিক সিরভানি মসজিদের ডোম আর দেওয়ালের একাংশও ভেঙে পড়েছে। ফলে দেশের ঐতিহ্যও ভয়ংকরভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্ক সরকার।

ইতিমধ্যে সুনামির সতর্কতাও জারি হয়েছে। ইতালির উপকূল এবং উপকূল সংলগ্ন অঞ্চলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কাউকে উপকূলের কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। যদি সুনামি হয়, তাহলে সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তৈরি রাখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে তুরস্ক, সিরিয়া ও সংলগ্ন দেশগুলিতে এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি।

More Articles