কেউ সন্তানের অপেক্ষায়, কেউ ঝলসে গিয়েছে, গুলিস্তানের বিস্ফোরণের পর শুধুই হাহাকার
Explosion in Dhaka Gulistan : অধিকাংশের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। পরিস্থিতি এমনই যে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে পুলিশ প্রশাসন।
হাসপাতালের মেঝেয়, বেডে সার দিয়ে রাখা মৃতদেহের সারি। কেউ ঝলসে গিয়েছেন, কারও আবার মুখ চেনাই দায়। একু রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছেন। হাসপাতালের করিডোরে ছুটে বেড়াচ্ছেন মা। অনবরত ফোন করছেন, কান্নাধরা গলায় সবাইকে জিজ্ঞেস করছেন নিজের ছেলের সম্পর্কে। কেউ কি দেখেছে তাঁকে?
৭ মার্চ, মঙ্গলবার সন্ধ্যের পর এমনই মর্মান্তিক ছবি ভেসে এল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। দোলের দিন বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রস্থল গুলিস্তানের সিদ্দিকি বাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। এক লহমায় ঝলসে যায় অসংখ্য মানুষ। এখনও অবধি হিসেব অনুযায়ী, ১৬ জন মারা গিয়েছেন। বিস্ফোরণে আহতের সংখ্যা ১২০-রও বেশি। তাঁদের অধিকাংশের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। পরিস্থিতি এমনই যে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে পুলিশ প্রশাসন।
ঠিক কী হয়েছিল? ঢাকার গুলিস্তান চত্বর এমনিতেই জমজমাট। মানুষের ভিড়, দোকান বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতার ছড়াছড়ি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশনের বাস কাউন্টারের পাশেই ছিল একটি সাততোলা বিল্ডিং। নিচের তলায় স্যানিটারি দোকান, আর ওপরে চারটি তলা জুড়ে ব্রাক ব্যাঙ্কের গুলিস্তান ব্রাঞ্চ অফিস। বিকেল নাগাদ ওই স্যানিটারি দোকানেই তীব্র বিস্ফোরণ হয়। যার জেরে গোটা বিল্ডিংটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দু-তিনটে তলা একেবারে ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, একটু দূরে থাকা মানুষজন সাময়িকভাবে বধির হয়ে গিয়েছিলেন। কাচের টুকরো আর কংক্রিট, পাথর এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে। তার আঘাতেও বেশ কয়েকজন আহত হন।
বিস্ফোরণ কতটা ভয়াবহ ছিল, তার বর্ণনা পাওয়া যায় সেলিনা বেগমের কাছ থেকে। বাংলাদেশের দৈনিক ‘প্রথম আলো’-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তাঁর ছেলে জাহান গুরুতর আহত হয়েছে। শরীরের একপাশ একেবারে ঝলসে গিয়েছে। যখন বিস্ফোরণ হয়, তখন জাহান বাসে ছিল। বিস্ফোরণ স্থলের সামনেই ছিল সেটি। তীব্রতা আর ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, বাসের অধিকাংশ যাত্রীই ঝলসে গিয়েছেন।
সেভাবেই স্যানিটারি দোকানে জিনিস কিনতে গিয়েছিলেন ৪০ বছর বয়সি মনসুর হোসেন। সেটাই যে তাঁর শেষ যাওয়া, কে জানত! ওই দোকানেই বিস্ফোরণ হয়, আর তিনি মারা যান। একইভাবে স্যানিটারি সামগ্রী দিতে এসে বিস্ফোরণের কবলে পড়ে মাত্র ১৭ বছরের কিশোর সাখাওয়াত হোসেন রাহাত। কংক্রিটের বিশাল চাঁই তাঁর মাথার ওপর ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। এরকম অজস্র ঘটনা আর কান্না ছড়িয়ে রয়েছে গুলিস্তানে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে আপাতত আহতদের চিকিৎসা চলছে। মৃতদেরও সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কিন্তু কেন এই বিস্ফোরণ? এখনও সেই সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশের ফায়ার ব্রিগেড ও পুলিশ প্রশাসনের প্রাথমিক অনুমান, এর পেছনে কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর হাত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ, যে তীব্রতায় বিস্ফোরণ হয়েছে, তা যথেষ্ট ভয়াবহ। তবে এখনও কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু করেছে পুলিশ প্রশাসন। আপাতত, দোলের দিন কান্নায় আর আর্তনাদে ভেসে আছে গোটা ঢাকা।