দেশে নিরাপদ নন সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা, উগরে দিলেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি
Minority Students of India: দেশে নিরাপদ নন সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা। উগরে দিলেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি
চলতি বছরের অগাস্ট মাসেই ঘটেছিল সেই ঘটনা। শিক্ষাজগতের পক্ষে লজ্জাজনক এক ইতিহাসের সাক্ষী থেকেছিলেন দেশবাসী। উত্তরপ্রদেশের 'নেহা পাবলিক স্কুল'-এর এক শিক্ষিকাকে দেখা গেছিল প্রকাশ্যে 'মুসলিম' ছাত্রকে চড় মারার নির্দেশ দিতে। পরে দেখা গেছিল, সেই শিক্ষিকা, তৃপ্তা ত্যাগী, তাঁর কৃতকর্মের জন্য লজ্জিতও নন। সগর্বে বলেছিলেন, গোটা গ্রামবাসী তাঁর পাশে আছেন। আদতে কেমন আছেন দেশের 'সংখ্যালঘু' পড়ুয়ারা? কীভাবে কাটছে তাঁদের দিন?
ঘটনা ১:
চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ছাত্রী সফিয়া। মনে করলেন, তাঁর দ্বিতীয় বর্ষের অঙ্গব্যবচ্ছেদবিদ্যার দুর্বিসহ ক্লাসঘরটিকে। জন্মনিয়ন্ত্রণের পাঠ দিতে গিয়ে অধ্যাপক ভরা ক্লাসে যেখানে উল্লেখ করেন, 'IUD' যা একটি গর্ভনিরোধক ডিভাইস, ব্যবহার করা হয় মূলত মুসলিম বিবাহিতাদের সন্তান উৎপাদনের সংখ্যা বেঁধে দিতে। এখানেই ক্ষান্ত হননি ঐ অধ্যাপক।পরমুহূর্তেই একজন মুসলিম ছাত্রকে ইঙ্গিত করে উল্লেখ করেছেন, বিয়ের পর তিনি যেন তাঁর স্ত্রীর গর্ভনিয়ন্ত্রণে IUD এর ব্যবহার করতে ভুলে না যান। প্রশ্ন জাগে, একটি জটিল বিষয়ের ব্যাখ্যায় এতটা সরলীকরণ কোন স্বার্থে? সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত অংশের মানুষরাই যদি এই মনোভাব পোষণ করেন, তাহলে না জানি কতটা বিদ্বেষমূলক মনোভাব প্রোথিত হয়ে আছে সমাজের গভীরে?
ঘটনা ২:
দেশের রাজধানী দিল্লির বুকে প্রতিষ্ঠিত একটি স্কুলের ঘটনা। সেখানে নবম শ্রেণির এক শিক্ষিকা একটি ভুয়ো ভিডিও ছড়িয়েছেন ছাত্রদের মধ্যে। সেই ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, একজন মুসলিম পুরুষ, একজন অ-মুসলিম মহিলাকে খুন করছেন। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে সেই শিক্ষিকা বার্তা দিয়েছেন, অবিলম্বে 'হিন্দু সন্তানদের রক্ষার স্বার্থে হিন্দু জাগরণ প্রয়োজন'। সদ্য শিক্ষকদিবসের উদযাপন সেরে উঠল ভারত। কেমন শিক্ষার বাতাবরণ ঘিরে রাখছে এই দেশকে? সংবিধান রচনার ৭০ বছরেরও বেশি দিন পর এসে, ভ্রাতৃত্ববোধের কোন পাঠ দিচ্ছে শিক্ষাজগৎ?
ঘটনা ৩:
মহারাষ্ট্রের একটি বয়েজ স্কুলের ছাত্র উমর। উগরে দিলেন ক্ষোভ। জানালেন, সকালের প্রার্থনাসভার পর, ছুটির ঘন্টা বাজলে, অথবা বিশেষ কোনও অতিথির ক্লাসের শেষে হিন্দু ছাত্রদের সমবেত 'জয় শ্রী রাম'- উন্মাদনার কথা। তাঁর কথায় মলিন বিষণ্ণতা। মুসলিম ছাত্ররা সেখানে সংখ্যালঘু। তাঁরা যে চাইলে 'আল্লাহু-আকবর' বলতে পারেন, এমন সুযোগ নেই ক্লাসঘরে।শিক্ষকরা সব দেখেও নীরব দর্শক। মুচকি হেসে এড়িয়ে যাচ্ছেন, সন্তানসম ছাত্রদের কুকীর্তি। এভাবেই সংখ্যাগুরুর 'দাদাগিরি' থাবা বসিয়েছে আগামীর আলো শিশুদের মধ্যেও।
ঘটনা ৪:
সাল ২০১৬। পড়ুয়ার নাম সেলিনা। মুজফফরনগরের এই বিভীষিকা তাঁকেও মনে করাল স্কুলজীবনের অতীতের কথা। শীতকালে একদিন চাদর দিয়ে মাথা ঢেকে স্কুলে এসেছিলেন সেলিনা। সহপাঠীরা ভেবেছিলেন হিজাব। একজন এগিয়ে এসেছিলেন হাত চেপে ধরতে, একজন এগিয়ে এসেছিলেন মাথা থেকে টেনে ঐ চাদর খুলে দিতে। জেনে শিউরে উঠতে হয়। শুধুমাত্র মৌখিক অত্যাচার নয়। এই ঘটনা তো সরাসরি শারীরিক নিগ্রহের আওতায় পড়ে!
ঘটনা ৫:
জামশেদপুরের আরেক সংখ্যালঘু ছাত্রীর অভিজ্ঞতা। তাঁকে এক সহপাঠী জঙ্গি সংগঠন 'আল-কায়দা' নামে অভিহিত করেন। সেখানেই থামেননি তিনি, বাকি তিনবছর সেই 'আল-কায়দা' নামেই পরিচিত হয়েছেন ওই সংখ্যালঘু ছাত্রী।
মুজফফরনগরের এই ঘটনা দেশজুড়ে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের দুর্বিসহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি ফের উসকে দিয়ে গেছে। ভারতের সংবিধানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের নিজস্ব মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার স্পষ্ট উল্লেখ আছে। দেশের সংবিধান সকল নাগরিকের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলার কথা বলে। কিন্তু ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে দেশনায়করাই হিন্দুধর্মকে তকমা দিচ্ছেন রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে। ধর্মনিরপেক্ষ একটা দেশ শিশুদের এই নিরাপত্তাহীনতার লজ্জা ঢাকবে কোথায়?