শংসাপত্র দিয়ে কেবল মুসলিমদেরই ওবিসি করা হয়েছে? শেষ দফার আগে যে তাস খেলছেন মোদি
Modi OBC Votes: মোদি বলছেন, সমস্ত মুসলিমদের শংসাপত্র বিলিয়ে ওবিসি করা হয়েছে যাতে সমস্ত সুযোগ তাঁরাই পান আর প্রকৃত ওবিসিদের অধিকার কমে যায়।
ভোটের বাজারে তাঁকে শিরোনামে থাকতেই হবে। তাই কোনও সুযোগই হাতছাড়া করছেন না তিনি। কখনও বলছেন হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ তিই করেন না, কখনও বলছেন তিনি নিজেই ঈশ্বরের পাঠানো দূত। পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে গলা অবধি ডুবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবার তিনি বলছেন, বিজেপি নয়, তপশিলি জাতি (এসসি), তপশিলি উপজাতি (এসটি) এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করছে বিরোধী কংগ্রেসই! তাই পিছিয়ে পড়া জনজাতিদের রক্ষা করা দরকার।
এএনআইকে এক সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছে, সংরক্ষণ ইস্যু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। "আমি এসসি, এসটি, ওবিসি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের সতর্ক করতে চাই কারণ তাদেরকে অন্ধকারে রেখে বিরোধীরা তাদের লুট করছে" বলছেন মোদি। নরেন্দ্র মোদি আরও বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখেই তিনি দেশবাসীকে সবচেয়ে বড় সংকট সম্পর্কে সচেতন করতে চান। জনগণকে বুঝিয়ে দিতে চান, ভারতের সংবিধানের মূল চেতনাকেই অবমাননা করা হচ্ছে এবং তাও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য। মোদি বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, যারা নিজেদেরকে দলিত ও আদিবাসীদের শুভাকাঙ্খী বলে, অর্থাৎ মূলত কংগ্রেস, তারা আসলে এই অনগ্রসর জাতির কট্টর শত্রু। নরেন্দ্র মোদি, যিনি বলেছেন কিছুকাল আগেই যে তিনি হিন্দু-মুসলি ভেদাভেদ করেন না, তিনিই আবার বলছেন, "কংগ্রেসের ইস্তেহারে মুসলিম লীগের ছাপ আছে...ভোটব্যাংকের স্বার্থে আগামী প্রজন্মকেও ধ্বংস করতে চান আপনারা?...আমি আমার দলিত, উপজাতি, ওবিসি ভাই ও বোনেদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়ব।"
আরও পড়ুন- নারী-পুরুষের মিলনে জন্মাননি! খোদ ঈশ্বর প্রেরিত দূত মোদি! প্রধানমন্ত্রীর কথা বিশ্বাস করেন?
এই মুহূর্তে, লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফায় এসে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করছেন বিরোধীরা আর তাতে এসসি, এসটি এবং ওবিসি সম্প্রদায়েরই বিপদ বাড়ছে।
মোদি বলছেন, বিরোধীরা দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করছে যার ফলে সংরক্ষণ উঠে যাবে। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইউনিভার্সিটিকে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সংরক্ষণের ক্ষতি হয়েছে। পড়াশোনায় ভর্তি এবং চাকরি দুই-ই তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি মোদির। মোদির দাবি, প্রায় ১০,০০০ এই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সংখ্যালঘুদের জন্য করে দিয়ে এসসি, এসটি এবং ওবিসিদের সুরক্ষা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি সংরক্ষণের বিষয়ে কংগ্রেসের অবস্থান নিয়ে কটাক্ষ করতে গিয়ে আবারও বলেছেন, মুসলিম লীগের পদ্ধতি মেনেই নাকি নিজেদের ইস্তেহার তৈরি করেছে।
গত ৫ এপ্রিল কংগ্রেস নিজেদের ইস্তেহারে উল্লেখ করেছে, ক্ষমতায় এলে এসসি, এসটি এবং ওবিসিদের ৫০% সংরক্ষণের জন্য সাংবিধানিক সংশোধনী পাস করবে কংগ্রেস। মোদি বলছেন, কংগ্রেস বলেছে খেলাধুলোয় সংখ্যালঘুদের জন্যও 'কোটা' নির্ধারিত হবে। তাহলে উত্তরপ্রদেশের যে যুবকরা পরিশ্রম করছে, বাংলার যে যুবকেরা ভোর ৪টেয় ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তারা কোথায় যাবেন, তাঁদের কী হবে? কেন এই অযাচিত বৈষম্য গড়ে তুলতে চাইছেন মোদি? ইসলামফোবিয়ার আড়ালে তিনি কেন দলিত-প্রীতি দেখাচ্ছেন? কে না জানে, মুসলিমদের পরেই দলিতরাই, পিছিয়ে পড়া জাতিই বিজেপির হিন্দুত্ববাদের প্রধান শত্রু!
আরও পড়ুন- মোদির জয় নিশ্চিত, প্রমাণ করতে মিথ্যে অঙ্ক কষছেন প্রশান্ত কিশোর
প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের জন্য সরকারি টেন্ডার সংরক্ষণের কংগ্রেসের প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির জন্য সেই সংস্থার সঙ্গেই চুক্তি করতে হবে যাদের 'ট্র্যাক রেকর্ড’ ভালো, যাদের কাজ উৎরে দেওয়া যোগ্যতা ও ক্ষমতা আছে। মোদি স্পষ্ট বোঝাতে চাইছেন, সংখ্যালঘু কোটায় কাজ পাওয়া মানুষের হাতে ব্রিজ তৈরি হলে সেই ব্রিজ ভাঙবেই আর মানুষ তাতে মারা যাবে। কংগ্রেস সব জেনেও 'ওবিসি, এসসি, এসটি ভাই ও বোনদের' অধিকার কেড়ে সংখ্যালঘুদের বিলিয়ে দিচ্ছে।
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট একটি নির্দিষ্ট বছরের পর থেকে দেওয়া সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। মোদি বলছেন, সমস্ত মুসলিমদের এইভাবেই শংসাপত্র বিলিয়ে ওবিসি করা হয়েছে যাতে সমস্ত সুযোগ তাঁরাই পান আর প্রকৃত ওবিসিদের অধিকার কমে যায়। রামমন্দির দিয়ে শুরু করে সিএএ, তারপর হেমন্ত সোরেন ও কেজরিওয়ালের মতো বিরোধীদের গ্রেফতার, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সরাসরি উস্কানির পর এবার আস্তিনে লুকনো শেষ তাস বের করেছেন মোদি। এবার দলিত ও অনগ্রসর জাতির ভোট নিশ্চিত করতে তাঁদের লড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। অর্থাৎ এখন দলি আর শুধু দলিত নন, তারা হিন্দু দলিত, হিন্দু এসসি, হিন্দু এসটি। যাদের এখনও ব্রাহ্মণদের মন্দিরে ঢুকলে দূর দূর করে তাড়ানো হয়, যাদের এখনও নির্দিষ্ট কুয়ো থেকে জল তুলতে হয়, যাদের এখনও ধর্ষণ করে গাছে টাঙিয়ে দেওয়া হয় বা জিভ কেটে নেওয়া হয়। সামনে 'মুসলিমরা সব পেয়ে যাচ্ছে'-র টোপ ঝুলিয়ে প্রধানমন্ত্রী এখন তাঁদের ভোট চাইছেন।