নদী-উপত্যকায় ছিল প্রাচীন সভ্যতা? লালগ্রহের যে আশ্চর্য খোঁজ চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের

Ancient Life On Mars: সম্প্রতি নাসার পারসিভারেন্স রোভার মঙ্গলগ্রহে আশ্চর্য একটি জিনিস খুঁজে বের করেছে। কী সেটি? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সেটি নাকি এক ধরনের পাথরের নমুনা। যার নাম রাখা হয়েছে 'চেয়াভা জলপ্রপাত'।

সিনেমা-কল্পবিজ্ঞানের দৌলতে প্রায়শই আমরা ভিনগ্রহীদের কথা শুনি-পড়ি। কিন্তু সত্যিই কি রয়েছে ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব? থাকলে কোথায়? এ নিয়ে অবশ্য বিতর্কের শেষ নেই। কেউ কেউ তো রীতিমতো বিশ্বাস করেন, তাঁরা রয়েছেন, বহাল তবিয়তেই রয়েছেন, এমনকী তাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন আমাদের আশপাশেই। তবে সে ভিনগ্রহীরা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াক ছাই না বেড়াক, ভিনগ্রহে এবং উপগ্রহে প্রাণের খোঁজ পেতে মরিয়া মহাকাশবিজ্ঞানীরা। চাঁদ থেকে শুরু করে মঙ্গল, সর্বত্র জারি রয়েছে সেই খোঁজ। কিছুদিন আগেই চাঁদের মাটিতে নতুন করে জলের অণু খুঁজে পেয়েছিলেন চিনা মহাকাশচারীরা। এবার লালগ্রহে আরও এক বিস্ময়কর জিনিসের খোঁজ মিলল নাসার বিজ্ঞানীদের হাত ধরে।

পৃথিবীর বাইরে পৃথিবীবাসীর জন্য কি দ্বিতীয় ঘরবাড়ি বানানো সম্ভব? এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। লালগ্রহ নিয়েও পৃথিবীর আগ্রহের শেষ নেই। সেখানে মানুষকে পাঠানোর জন্য নানারকম পরীক্ষানিরিক্ষা চালিয়ে আসছেন গবেষকেরা। তবে আদৌ কি সেইসব গ্রহ বা উপগ্রহ প্রাণ বসবাসের উপযোগী। সে নিয়ে সংশয় কাটেনি এখনও। যেভাবে পৃথিবীর সম্পদ বাড়ন্ত, তার উপর গ্লোবাল ওয়ার্মিং, ক্লাইমেট চেঞ্জের মতো সমস্যা পৃথিবীর আয়ু নিয়েই প্রশ্ন তুলে যাচ্ছে অনবরত, সেখানে মানুষ বসবাসের উপযুক্ত একটি অন্য গ্রহের খোঁজ পেলে যে মন্দ হয় না, তা আর কে না জানে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বার মঙ্গলে অভিযান করেছে বিভিন্ন দেশ। মুখ থুবড়েও পড়েছে একাধিক মিশন।

আরও পড়ুন: লালগ্রহে ৩৭৮ দিন! নাসার কৃত্রিম অভিযানে মঙ্গলের মাটিতে ফলল শাকসবজিও

তবে মঙ্গলে নাকি কখনও না কখনও ছিল প্রাণের অস্তিত্ব, তেমনটাই দাবি এবার নাসার বিজ্ঞানীদের। ২০০৩ সালে ব্রিটিশ নভোযান বিগল-২ মঙ্গলের আবহাওয়া মণ্ডলে সফল ভাবে প্রবেশ করে। এমনকী মঙ্গলপৃষ্ঠেও নামে সেটি। তবে সেখানেই থামে তার যাত্রা। পৃথিবীর সঙ্গে যোগসাধনে ব্যর্থ হয়েছিল সেই মহাকাশযান। তার পর রাশিয়া, আমেরিকা থেকে শুরু করে ভারত, একে একে সকলেই মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠিয়েছে।

সম্প্রতি নাসার পারসিভারেন্স রোভার মঙ্গলগ্রহে আশ্চর্য একটি জিনিস খুঁজে বের করেছে। কী সেটি? বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সেটি নাকি এক ধরনের পাথরের নমুনা। যার নাম রাখা হয়েছে 'চেয়াভা জলপ্রপাত'। সেই পাথরের নমুনায় মিলেছে এক ধরনের জৈব অনু ও মাইক্রোবায়াল কাঠামোর খোঁজ। বিজ্ঞানীদের অনুমান, সেই দুটি উপাদান দিয়ে আসলে কোনও মাইক্রোবায়াল প্রাণ গঠিত হতে পারে। প্রাচীন একটি নদী উপত্যকা থেকে মিলেছে সেই পাথরটি। যা থেকে বিজ্ঞানীদের অনুমান, কোনও এক কালে সেই নদী উপকূলেই ছিল প্রাণের বসতি।

মঙ্গলগ্রহ থেকে মেলা সেই পাথরটির রাসায়নিক গঠন ও কাঠামো পর্যবেক্ষণ করে অনুমান করা যাচ্ছে, কয়েক বিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়েছে ওই পাথর। এবং ওই পাথরটি যেখান থেকে মিলেছে, সেখানে বহমান জলের অস্তিত্ব রয়েছে বলেও রোভার থেকে পাওয়া তথ্য় বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

তবে এই ঘটনাকে সরাসরি প্রাণের খোঁজ, এমনটাও বলে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। তবে একে এক বড় সম্ভাবনা বলেই দেখছেন তাঁরা। নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবের প্রিসার্ভেশন ডেপুটি প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট কেটি স্ট্যাক মর্গান তেমনটাই জানাচ্ছেন। গত ২১ জুলাই রোভার ওই পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে। নেরেটভা ভ্যালির উত্তর প্রান্তে একটি প্রাচীন একটি নদী-উপত্যাকা থেকে মিলেছে সেটি। 'চেয়াভা জলপ্রপাত' এখনও পর্যন্ত মঙ্গল থেকে পাওয়া সবচেয়ে জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ নমুনা বলেই মনে করছেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির মিশনের প্রকল্প বিজ্ঞানী কেন ফার্লে।

জল মানেই জীবনের খোঁজ, এমন একটা বধ্যমূল্য ধারণা গেঁথে রয়েছে মানুষের মনে। ফলে জল মিললেই সেখানে এক ধরনের আশার প্রদীপ দেখতে পান বিজ্ঞানীরা। আর মঙ্গল বা চাঁদ, দু'য়ের ক্ষেত্রেই সমান সত্য। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওই নমুনা পরীক্ষা করে পাথরের উপরে এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি হওয়া এক রঙিন দাগের সন্ধান মিলেছে। যা মাইক্রোবায়াল জীবন শক্তির উৎস হলেও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পাথরের মধ্যে দিয়ে জল পরিবাহিত হয়েছে, তা-ও নমুনাটি থেকে পরিষ্কার।

আরও পড়ুন:আকারে মাউন্ট এভারেস্টের থেকেও বড়! মঙ্গল গ্রহের আগ্নেয়গিরিকে ঘিরে শোরগোল সারা বিশ্বে

তবে কি সত্যিই একদিন মঙ্গলে ছিল প্রাণের খোঁজ, যারা ওই নদী অববাহিকায় গড়ে তুলেছিল নিজস্ব সভ্যতা। তবে এখনই এতটা এগিয়ে ভাবতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। আপাতত এই বিশেষ পাথরটিকে নিয়ে আরও পরীক্ষানিরিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন তাঁরা। আর সেই কাজটিই মন দিয়ে করতে চাইছেন আপাতত। নাসা সূত্রের খবর, ভবিষ্যতের গবেষণাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে এই আবিষ্কার।

কিছুদিন আগেই নকল নাসার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল নাসার তরফে। যেখানে সফল ভাবে ৩৭৮ দিনের সফর শেষ করেছেন এক দল অভিযাত্রী। সব ঠিক থাকলে আর্টেমিস প্রোগ্রামের আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে নাসা। আর সেই মিশনের আগে এই আদিম প্রাণের খোঁজকে একটি বিশাল মাইলস্টোন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

More Articles