নিয়মের মধ্যেই রয়েছে ফাঁক, হোম লোনের চড়া সুদ কমতে পারে আজই, মেনে চলুন এসব পদ্ধতি
Home loan : মধ্যবিত্তের বাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণ করতে হোম লোনই ভরসা? জানেন ঠিক কিভাবে চড়া সুদের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারবেন আপনি?
মাথার ওপর একচিলতে পাকাপোক্ত ছাদ, এটুকু স্বপ্ন নিয়েই ছোট থেকে এতো লড়াই এত যুদ্ধ। পড়াশোনা শেষ করে একটা নিশ্চিন্ত চাকরি, তারপর সেটুকুর ভরসাতেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা। মধ্যবিত্ত সংসারে অবশ্য একটা নিয়মিত চাকরির মাইনে থেকে পাওয়া নিয়মিত অর্থে বাড়ি করা অলীক স্বপ্ন মাত্র, আর তাই এই বিষয়ে পাশে থাকে ব্যাংক লোন। একটা সময় ছিল, যখন বাংলায় অস্তিত্ব ছিল মহাজনদের, যারা সুদের ব্যবসা করতেন। জমি, বাড়ি অথবা অন্য কিছুর বিনিময়ে ধার দিতেন নগদ অর্থ। তার ওপর চাপানো হতো চড়া সুদ। কিন্তু একটা সময়ের পর থেকে এই ব্যবস্থারও আধুনিকীকরণ ঘটে, মহাজনদের জায়গা নেয় রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলি। সুদের হিসেব অবশ্য এখানেও বহাল। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের ওপর শতকরা হারে আরোপিত হয় সেই সুদ।
‘হোম লোন’ এই শব্দটির সঙ্গে অবশ্য আজকাল কমবেশি সবাই পরিচিত। শুধু বাড়ি কেন, গাড়ি অথবা অন্যান্য কোনও তুলনায় বেশি দামী জিনিস ক্রয় করার জন্যই এখন চালু হয়ে গিয়েছে লোন নেওয়ার সুযোগ। চলতি কথায় যাকে বলে EMI। যাই হোক জানা যাক, এই হোম লোন কী? এটি হল এমন একটি আর্থিক উৎস যা আপনার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার পাশাপাশি আয়কর কম করতেও সহায়তা করে। বিষয়টা হল, বাড়ি করার জন্য ব্যাংক থেকে নগদ যে অর্থ পাওয়া যায়, তা শোধ করতে হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। সেই মতোই মোট পরিশোধিত অর্থের পরিমাপ হয়। ১৯৬১ সালের আয়কর আইনে প্রথম সংযুক্ত হয় এই হোম লোন বিষয়টি। এই হোম লোন পরিশোধের দুটি অংশ থাকে : ১. মূল অর্থের পরিমাণ এবং ধার করা অর্থের পরিমাণের উপর প্রদত্ত সুদ৷ ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের ধারা ৮০সি এবং ২৪বি,-এর অধীনে, আপনি এই বিভাগের প্রতিটিতে কর সুবিধা পাওয়ার যোগ্য। যখন একটি আর্থিক বছরের জন্য ট্যাক্স প্রস্তুতির কথা আসে, তখন সমস্ত হোম লোনের ট্যাক্স সংক্রান্ত সুবিধাগুলি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে। বেশ কয়েক জন বিশেষজ্ঞের কথায় উঠে আসা আলোচনার ভিত্তিতে, এখানে এমন কিছু উপায় অথবা নিয়মের মধ্যে থাকা ফাঁকের কথা জানা গিয়েছে, যা ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে FY২৩-এ হোম লোনের উপর তাদের প্রদেয় ট্যাক্সের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুন - নতুন কোন লাভের হদিশ দিচ্ছে RBI, জানেন কোথায় টাকা রাখলে পাবেন বেশি সুদ?
১. চার্টার অ্যাকাউন্টেড অনামিকা রানা জানিয়েছেন, বাড়ি কেনা বা নির্মাণের জন্য হোম লোন নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে হোম লোনের প্রদত্ত সুদের উপর কর ছাড় পেতে পারেন। অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে। কোনও একটি আর্থিক বছরে আয়কর আইনের ধারা ২৪ বি, আপনার হোম লোনের জন্য প্রদত্ত সুদের উপর দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদ কাটার অনুমতি দেয়৷ এই অর্থের পরিমাণ কমানোর জন্য সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনি সম্পত্তির নির্মাণ বা অধিগ্রহণ সম্পন্ন করেছেন কিনা। উপরন্তু, সম্পত্তি স্ব-দখল করা উচিত বা ছাড়ের জন্য যোগ্য হতে ভাড়া দেওয়া উচিত। পাশাপাশি এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি যদি অন্য কারও সঙ্গে যৌথভাবে এই হোম লোন নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনারা উভয়েই প্রদত্ত সুদের উপর প্রত্যেকে আলাদা আলাদা করে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় দাবি করতে পারেন। এই ছাড় দাবি করার জন্য, আপনাকে আপনার নিয়োগকর্তা বা আয়কর বিভাগে প্রাসঙ্গিক কিছু নথি জমা দিতে হবে। এই নথিগুলির মধ্যে পড়ে ঋণ চুক্তি, সুদের শংসাপত্র এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথি। সুতরাং, আপনি যদি আপনার সম্পত্তির জন্য হোম লোন নিয়ে থাকেন তবে এই বিকল্প পথটি অন্বেষণ করতে ভুলবেন না। এর জেরে কমতে পারে প্রদেয় সুদের পরিমাণ।
২. অন্যদিকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং DigiWhistle-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা দীপক ভাটি বলেছেন, ২০২৩ সালে, RBI দ্বারা রেপো রেট বৃদ্ধির জেরে সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও যারা নতুন বাড়ি কেনার কথা ভাবছেন, তারা জেনে নিতে পারেন কীভাবে সুদের হার খানিক কমাতে পারবেন।
মূল পরিমাণের পরিশোধ : কোনও হোম লোনের মূল অর্থের পরিমাণের পরিশোধ করা টাকার ওপরও ৮০সি ধারার অধীনে বার্ষিক দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় গ্রাহ্য হতে পারে।
স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন চার্জ : একটি বাড়ি কেনার জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন চার্জের জন্য যে খরচ হয়েছে তাও ৮০সি ধারার অধীনে ছাড় পেতে পারেন।
প্রাক-নির্মাণ সুদ: সম্পত্তি নির্মাণের সময়কালে প্রদত্ত সুদ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার বছর থেকে শুরু করে পাঁচটি সমান কিস্তিতে কর ছাড়ের যোগ্য। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে সম্পত্তিটি স্ব-অধিকৃত হলেই এই ছাড়গুলি পাওয়া যায়।
৩. ফাইন্যান্স কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নিধি নগর বলেছেন, যদি এটিই সবার প্রথম হোম লোনের ভিত্তিতে বাড়ি কেনা হয়ে থাকে তবে ইরুরিখ কিছু ছাড়ও পেতে পারেন আপনি। আয়কর বিভাগের ২৪বি -এর অধীনে আমরা হোম লোনের সুদের উপর ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় পেতে পারি তবে আপনি ধারা ৮০EEA-এর অধীনে ১,৫o,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় দাবি করতে পারেন। এই বিভাগটি চালু করা হয়েছিল ধারা ৮০EE -এর অধীনে অনুমোদিত সুবিধাগুলি বাড়ানোর জন্য যা আগে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছিল। ৮০EEA হল তুলনায় কম দামের বাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এতে মোট লোনের পরিমাণ ৪৫ লক্ষের কম হতে হবে। ১ এপ্রিল ২০১৯ থেকে ৩১ মার্চ ২০২২ সময়কালের মধ্যে আপনার নেওয়া ঋণ মঞ্জুর করা হলে তবেই আপনি এই ছাড়টি দাবি করতে পারেন।
ধরা যাক কোনও ব্যক্তি ২৯২০ সালের মার্চ মাসে ৪৫ লক্ষ মূল্যের একটি বাড়ি কিনেছেন এবং বার্ষিক ৪,০০,০০০ টাকা সুদ পরিশোধ করেছেন। এখন সেই ক্ষেত্রেই ২৪ ধারার অধীনে হোম লোনের সুদের জন্য দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় দাবি করতে পারেন তিনি। এবং বাড়ির স্ট্যাম্পের মূল্য ৪৫ লক্ষ হওয়ায় সেক্ষেত্রেও ৮০EEA-এর অধীনে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় দাবি করতে পারেন। সুতরাং সব মিলিয়ে মোট সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত চার মিলতে পারে হোম লোনের ওপর।
আরও পড়ুন - সহজেই লোনের প্রলোভন! এই অ্যাপগুলি হয়ে উঠতে পারে মৃত্যুফাঁদ
৪. ফাইন্যান্স কনটেন্ট ক্রিয়েটর তরুণ মালহোত্রা বলেছেন, গৃহঋণের উপর ট্যাক্স বাঁচানোর বিভিন্ন উপায় আছে যার মধ্যে সবথেকে সহজ বিষয়টি হল যৌথ লোন নেওয়া। প্রথমত যৌথ গৃহ ঋণের সুদের হার ব্যক্তিগত ঋণের তুলনায় তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাছাড়া pযদি স্বামী স্ত্রী একযোগে লোন নেন, বা অন্য দুই ব্যক্তি একসঙ্গে লাইন নেন সেক্ষেত্রে এই ছাড়ের দাবি দুইজন ব্যক্তি পৃথক প্রথম ভাবে করতে পারেন। যার ফলে মোট ছাড়ের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। যদিও মনে রাখতে হবে যে কোনও সাধারণ হোম লোনে ট্যাক্স সাশ্রয়ের সূক্ষ্মতা বোঝার জন্য কর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সবসময়ই বাঞ্ছনীয়।
৫. সবশেষে, ফিনান্স কনটেন্ট ক্রিয়েটর আদর্শ গুপ্তা বলেছেন, ভারতের রিয়েল এস্টেট সেক্টর বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পগুলির মধ্যে একটি৷ তাই, সরকারি নীতির বিভিন্ন কারণে একটি হোম লোনে রিয়েল এস্টেট কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে৷ যার অন্যতম কারণ হল মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধি এবং রেপো রেট বাড়ায় প্রদেয় সুদের হার বৃদ্ধি। তাই অবশ্যই হোম লোন নিয়ে বাড়ি কেনা অথবা তৈরি করা আগে খুব ভালো করে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া প্রয়োজন। ঠিক কোন কোন খাতে কী কী সুবিধা পেতে পারেন, এবং কতটা ছাড় পেতে পারেন সুদের ওপর সবদিক ভালো করে বিবেচনা করে তবেই নতুন অর্থ বছরে নতুন স্বপ্ন পূরণের পরিকল্পনা করুন।