লিভ-ইন করলেও রেজিস্ট্রি করতে হবে এবার? অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে যা করতে চাইছে বিজেপি
Uniform Civil Code : উত্তরাখণ্ডের জন্য প্রস্তাবিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে সকলকেই দত্তক গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়েছে, মুসলিম মহিলাদেরও।
সকলের জন্য একই সামাজিক বিধি, পোশাকি নাম অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড। উত্তরাখণ্ড বিধানসভা মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) সংক্রান্ত আইন পেশ করেছে। বিজেপির আমলে আনা বিভিন্ন বিধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। উত্তরাখণ্ডে বিজেপির সরকার। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেইছেন, এই ইউসিসি শুধুমাত্র সব মানুষের মঙ্গলের জন্যই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'সব কা সাথ, সব কা বিকাশ'-এর লক্ষ্যেও নির্মিত। বিজেপি যে ন্যারেটিভগুলি সামনে এনেছে তারই অন্যতম হচ্ছে 'এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত।' এই বৈচিত্র্যের ভারতকে এক করা হবে কী দিয়ে? ইউনিফর্ম সিভিল কোড তারই এক মাধ্যম।
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে একটি সরকার-নিযুক্ত প্যানেল, বেশ কয়েকটি সুপারিশ সম্বলিত চার খণ্ডের, ৭৪৯-পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই প্যানেল অনলাইনে ২.৩৩ লাখ লিখিত প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করেছে। ৭০টিরও বেশি পাবলিক ফোরাম সংগঠিত করেছে। এই বিধির খসড়া তৈরি করার আগে প্রায় ৬০,০০০ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এই প্যানেল। ইউনিফর্ম সিভিল কোডে কী বলা হচ্ছে?
আরও পড়ুন- সারা বিশ্বের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেল নরেন্দ্র মোদির নির্বুদ্ধিতা
অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিভিন্ন প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বহুবিবাহ এবং বাল্যবিবাহের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা, সমস্ত ধর্মের মেয়েদের জন্য একই বিবাহযোগ্য বয়স এবং বিবাহবিচ্ছেদের জন্য একই অভিন্ন প্রক্রিয়া। লিঙ্গসাম্য এবং সামাজিক সংহতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে শুরু হওয়া বিশেষ চার দিনের বিধানসভা অধিবেশনে আলোচনা করা হবে এই সুপারিশগুলি।
অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খসড়াতে নাগরিক জীবনের বিভিন্ন দিককেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো উত্তরাধিকারের অধিকার, বাধ্যতামূলক বিবাহ নিবন্ধন, এবং মেয়েদের বিবাহযোগ্য বয়সের সীমা বৃদ্ধি, বিয়ের আগে তাদের শিক্ষা অর্জনের সুবিধা প্রদানের সুপারিশ রয়েছে এতে। যে দম্পতিদের বিয়ের আইনি রেজিস্ট্রি নেই তারা সরকারি সুবিধাপত্র পাবেন না বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে। খসড়াটিতে সুনির্দিষ্ট করে কী কী রয়েছে তা এখনও জনসাধারণের কাছে অপ্রকাশিতই। তবে এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে ধর্মীয় অনুষঙ্গ নির্বিশেষে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, জমি, সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকার আইনকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি আইনি কাঠামো তৈরির কথা উঠে আসছে। যদি এই খসড়া বিল পাস হয়ে আইন হয়ে যায় তাহলে উত্তরাখণ্ডই স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের প্রথম রাজ্য হয়ে উঠবে যেখানে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হবে। এখানে উল্লেখ্য, গোয়াতে এই বিধি আছে পর্তুগিজ শাসনের দিন থেকেই।
উত্তরাখণ্ডের জন্য প্রস্তাবিত অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে সকলকেই দত্তক গ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়েছে, মুসলিম মহিলাদেরও। এতে হালালা এবং ইদ্দতের (ইসলামিক রীতি যা একজন মহিলাকে বিবাহবিচ্ছেদ বা স্বামীর মৃত্যুর পরে পালন করতে হয়) মতো আচারকে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। লিভ-ইন সম্পর্ককে সহজ করা এবং দত্তক নেওয়ার পদ্ধতিগুলিকে সহজ করার কথাও বলা আছে এতে।
আরও পড়ুন- কোনও ধর্মের জন্য আর আলাদা বিধি নয়! অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নামে কী চাইছেন মোদি?
ইদ্দত প্রথাটি নিয়ে সম্প্রতি পাকিস্তানের রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে। জেলবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা খান তাঁর আগের স্বামীকে তালাক দেওয়ার পরে এবং ২০১৮ সালে ইমরান খানকে বিয়ে করার পরে ইদ্দত শেষ না করার জন্য অভিযুক্ত। প্রস্তাবিত ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু হয়ে গেলে লিভ-ইন সম্পর্ককেও আইনের অধীনে নিবন্ধিত করতে হবে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন হলে তা মহিলা ও পুরুষ দুই পক্ষেরই উপকারে আসবে।
এই বিধির খসড়ায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং তপশিলি উপজাতিদের অবশ্য বাদ দেওয়া হয়েছে, উত্তরাখণ্ডের জনসংখ্যার ৩ শতাংশ হচ্ছেন তারা। ইউসিসির অন্যান্য বিধির মধ্যে রয়েছে পুত্র ও কন্যাদের সমান সম্পত্তির অধিকার, বৈধ ও অবৈধ শিশুদের মধ্যে পার্থক্য শেষ করা এবং দত্তক নেওয়া ও নিজের সন্তানের জন্য সমান আচরণ। কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর ক্ষেত্রে, প্রস্তাবিত এই বিধিতে স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মায়ের জন্য সমান সম্পত্তির অধিকারকে নিশ্চিত করা হয়েছে।