ফুরিয়ে যাচ্ছে চাঁদ! বাড়ছে ভূমিকম্প, যে ভয়াবহ আশঙ্কার কথা জানাল নাসা
Moonquake: ক্রমশ কমছে চাঁদের পরিধি। প্রতিদিনই নাকি একটু একটু করে রোগা হচ্ছে চাঁদ। গত ২৫ জানুয়ারির একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চাঁদের পরিধি ১৫০ ফুটেরও বেশি সংকুচিত হয়েছে।
চাঁদ। কেউ সেখানে ধর্মরাষ্ট্র গড়তে চায়, কেউ বা সেখানে গড়ে তুলতে চায় নয়া বসতি। ইতিমধ্যেই চাঁদে প্রথম বার সফল ভাবে পাড়ি জমিয়ে ফেলেছে ভারত। এদিকে নাসা আবার জানিয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যেই চাঁদে নতুন ঘরবাড়ি বানাতে চায় নাসা। ফের সেখানে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে মার্কিন এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থার। তবে যাকে নিয়ে এত হইচই, সেই চাঁদ নাকি কেঁপেই অস্থির। ঠিকই শুনেছেন। ঘনঘন ভূমিকম্প নাকি লেগেই রয়েছে চন্দ্রপৃষ্ঠে। আর তার জন্য দায়ী নাকি এই পৃথিবীই। তেমনটা জানিয়েছে খোদ নাসা।
ক্রমশ কমছে চাঁদের পরিধি। প্রতিদিনই নাকি একটু একটু করে রোগা হচ্ছে চাঁদ। গত ২৫ জানুয়ারির একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চাঁদের পরিধি ১৫০ ফুটেরও বেশি সংকুচিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, চাঁদের কেন্দ্র নাকি ধীরে ধীরে শীতল হচ্ছে। যার ফলে এই সংকোচন বাড়ছে। আর এই ক্রমাগত সংকোচনের ফলেই চাঁদে কম্পন সৃষ্টিকারী ফল্ট তৈরি হচ্ছে। আর এই সমস্ত ঘটনাই নাকি চাঁদকে বন্ধুর করে তুলছে চন্দ্রাভিযানকারীদের জন্য।
২০২৩ সালে প্রথম বার চাঁদের মাটি ছোঁয় ভারত। বার তিনেকের চেষ্টা, ইসরোর শত সহস্র বিজ্ঞানীর এত বছরের পরিশ্রম শেষ পর্যন্ত সফল হয়। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গিয়ে নামে চন্দ্রযান ৩-র ল্যান্ডার। চাঁদ জয়ের ইতিহাসে ভারত চতুর্থ দেশ। তার আগে রয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন। তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখার নিরিখে কিন্তু ভারত প্রথম দেশ। ইতিমধ্যেই চাঁদে ফের একবার মানুষ পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে নাসা। ইতিমধ্যেই সেই আর্টেমিস মিশনের পথে পা-ও বাড়িয়েছে তারা। ২০৪০ সালের মধ্যে চাঁদে বসতি গড়ার কথাও ঘোষণা করেছে এই মার্কিন গবেষণা সংস্থা। মহাকাশ গবেষণা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে এই ঠান্ডা লড়াই কোনও নতুন কথা নয়। তবে চাঁদের মাটি যেভাবে ক্রমশ বহরে ছোটো হচ্ছে, যেভাবে বারবার ভূমিকম্পের কবলে পড়ছে, তাতে আগামীদিনে চন্দ্রাভিযান আরও কঠিন হতে চসেছে বলেই আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।
আরও পড়ুন: চাঁদ এখন শ্মশান! কেন চাঁদের মাটিতে মানবভস্ম, ডিএনএ পাঠানোর এমন ধূম জানেন?
আসলে চাঁদের মাটি অনেকটাই শুকিয়ে যাওয়া নদীর তলের মতো, ভঙ্গুর। সেখানে এই সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের ভূত্বক চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গভীর গিরিখাত এবং থ্রাস্ট ফল্ট তৈরি করে। যার ফলে চন্দ্রপৃষ্ঠে ভূমিকম্প দেখা যায়। পৃথিবীতে ভূমিকম্প যেমন ক্ষণস্থায়ী, অর্থাৎ খুবই সামান্য সময়ের জন্য তা অনুভূত হয়, চাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয় মোটেই। বরং চাঁদে এই ধরনের কম্পন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলতে পারে। যার ফলে নামতে পারে ধস।
১৯৬৯ সালে প্রথম বার চাঁদে পা রেখেছিল আমেরিকা। না, কোনও যন্ত্রপাতি নয়। বরং একদল নভোশ্চারী স্বয়ং চাঁদের মাটি ছুঁয়েছিলেন। তবে সেই অভিযান নিয়ে আজও প্রবল বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সেই চাঁদজয়ের ঘটনা আসলে মিথ্যে, গোটাটাই স্টুডিওয় শুটিং। মহাকাশ যুদ্ধে নিজেদের জায়গা বুঝিয়ে দিতেই সেই মিথ্যা খেলাটি রচেছিল আমেরিকা। তখন মহাকাশ গবেষণায় এতটা অগ্রগতি করেনি বিজ্ঞান। তবে সেই দিন কেটেছে। এত বছর পর ফের চাঁদে মানুষ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাসা। ২০২৬ সালেই আর্টেমিস III-র চাঁদের মাটিতে অবতরণ করার কথা নভোশ্চারীদের নিয়ে। তবে তাঁদের লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরুর যে জায়গাটা, সেখানেই নাকি সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটছে হাল আমলে। স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি কপালে ভাঁজ ফেলেছে নাসার। এমনটা চলতে থাকলে আর্টেমিস মিশনের জন্য তো বটেই, পরবর্তী কালে যে কোনও মিশনের জন্যই চাঁদ কঠিন গন্তব্য হয়ে দাঁড়াবে।
ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীরা চাঁদের মাটিতে এমন একাধিক সিসমিক হটস্পট চিহ্নিত করেছেন। ভবিষ্যতে চন্দ্রাভিযানের জন্য কোন কোন অঞ্চলগুলি বেশি নিরাপদ, সেগুলিকে শনাক্তও করেছেন। ইতিমধ্যেই মহাকাশচারীদের নিরাপদে রাখতে তৈরি হচ্ছে ভূমিকম্পরোধী কাঠামো ও প্রোটোকল।
এই যে ক্রমশ সরু হচ্ছে চাঁদ, তা হয়তো অতি ধীর একটা প্রক্রিয়া, তবে এর প্রভাব সুদূর প্রসারী বলেই মনে করেছেন বিজ্ঞানীরা। ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ার ইনস্টিটিউশনের এই গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। নাসার লুনার রেকনাইসেন্স অরবিটার ক্যামেরায় ইতিমধ্যেই চাঁদের মাটিতে হাজার হাজার থ্রাস্ট ফল্টের ছবি ধরা পড়েছে। যা অনেকটাই নাকি চন্দ্রপৃষ্ঠে ছোট সিঁড়ির মতো দেখতে। অনেকেই মনে করছেন, এই ভূমিকম্পের সঙ্গে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিরও একটা যোগ রয়েছে। নাসার মার্শাল স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের গবেষকেরা মনে করছেন, চাঁদের মাটির এই ভূমিকম্প সম্পর্কে বোঝার জন্য শুধু চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ডেটা যথেষ্ট নয়। গোটা চাঁদ এমনকী পৃথিবীর সিসমিক ডেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: মোবাইলের চেয়েও সস্তা চাঁদের জমি! সত্যিই কি চাঁদের মালিক হতে পারেন আপনি?
যে চাঁদে ভবিষ্যতে ঘরবাড়ি গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর একাধিক দেশ, সেই চাঁদ ক্রমশ ছোট হচ্ছে। তবে কি চাঁদ নিয়ে দেখা সেই স্বপ্ন ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে মানুষের থেকে। ইতিমধ্য়েই তো চাঁদের জমির বিক্রিবাটাও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে চাঁদের মাটির সেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি আদৌ থাকবে তো ভূমিকম্পের দাপটে! ঘনিয়েছে অনেক আশঙ্কাই।