ব্রিটেনের মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ! মাসি শেখ হাসিনার সঙ্গে দুর্নীতিতে যুক্ত টিউলিপ সিদ্দিকও?
Tulip Siddiq resigns: টিউলিপ সিদ্দিক ছিলেন নগর ও দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী। শেখ হাসিনার শাসনামলে তাঁকে ও পরিবারকে দেওয়া সম্পত্তি ব্যবহারের বিষয়ে বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। সম্পর্কে তিনি শেখ হাসিনার বোনের কন্যা। এই পরিচয়, বাংলাদেশের অস্থিরতা এবং ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়া — তিনটি মিলে এক জটিল সমীকরণ যে রয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। শেখ হাসিনার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্কের বিষয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই নানা অভিযোগ উঠেছিল টিউলিপের বিরুদ্ধে। অবশেষে পদত্যাগ করলেন টিউলিপ। গত বছর অগাস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। তারপর থেকে তার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নাম জড়িয়ে যায় টিউলিপ সিদ্দিক্কেরও। টিউলিপ বারবারই কোনওধরনের অপরাধ বা অন্যায়ের কথা অস্বীকার করেছেন। এমনকী প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে টিউলিপের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে তাঁর। তবু পদত্যাগ এড়ানো গেল না। শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে স্বীকার করে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন টিউলিপ।
আর্থিক পরিষেবার নীতির দায়িত্ব ছিল টিউলিপের হাতে। টাকা নয়ছয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়ভারও ছিল তাঁরই দায়িত্বে। এক বিবৃতিতে টিউলিপ সিদ্দিক বলেছিলেন, যদিও তাঁর আর্থিক বিষয়গুলির তদন্তে দেখা গেছে যে তিনি মন্ত্রীর আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি, তবে তাঁর অবস্থান "সরকারের কাজে বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। "তাই আমি মন্ত্রীর অবস্থান থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি," জানিয়েছেন তিনি।
টিউলিপ সিদ্দিক ছিলেন নগর ও দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী। শেখ হাসিনার শাসনামলে তাঁকে ও পরিবারকে দেওয়া সম্পত্তি ব্যবহারের বিষয়ে বেনিয়মের অভিযোগ ওঠে। মন্ত্রীদের মানদণ্ড বিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের তদন্তের পরে সরে দাঁড়ালেন টিউলিপ।
আরও পড়ুন- ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ! যে ভয়াবহ অভিযোগ উঠছে হাসিনা ও পরিবারের বিরুদ্ধে
তবে বাড়ির ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনও নিয়মভঙ্গ করেছেন বলে মনে করেননি ম্যাগনাস। এমনকী টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পত্তির বৈধ উপায় ছাড়া অন্য কোনওভাবে ব্যবহৃত হয়েছেন বলেও কোনও প্রমাণ তিনি পাননি। তদন্তে মস্কোতে টিউলিপের মাসি শেখ হাসিনা এবং ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ২০১৩ সালের পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের সময় টিউলিপের উপস্থিতির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হয়। উপদেষ্টা ম্যাগনাস জানান, টিউলিপ সেখানে কেবল সামাজিকভাবে এবং একজন পর্যটক হিসেবেই উপস্থিত ছিলেন।
তবে ম্যাগনাস আরও বলেছেন, নথির অভাব এবং সময়ের ব্যবধানের কারণে তিনি সংবাদমাধ্যমে উল্লিখিত যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়গুলিকে খতিয়ে দেখতে পারেননি। ম্যাগনাস প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরেই টিউলিপ পদত্যাগ করলেন এই জায়গা থেকে যে, পরিস্থিতি সরকারের জন্য বিভ্রান্তির কারণ হয়ে উঠছে। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং আওয়ামী লীগের শাসনামলে হওয়া ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষও তদন্ত করছে। এখানে উল্লেখ্য, গত বছর জালিয়াতির জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে পরিবহণ সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন লুইস হাই। প্রতিবেদনে কিছু না থাকার পরেও পদত্যাগ করে কি আখেরে অভিযোগ স্বীকারই করে নিলেন টিউলিপ?
অভিযোগ উঠেছিল, শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মানুষদের সঙ্গে যুক্ত সম্পত্তিতে থাকতেন টিউলিপ। এর মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল লন্ডনের কিংস ক্রসের কাছে একটি দুই বেডরুমের ফ্ল্যাট, যা তাঁকে ২০০৪ সালে এমন একজন ব্যক্তি উপহার দেন যিনি শেখ হাসিনার সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। টিউলিপ সিদ্দিক বলেছিলেন, এই সম্পত্তিটি তাঁর বাবা-মা তাঁকে দিয়েছিলেন এবং ম্যাগনাসকে তিনি বলেন, সম্প্রতিই নাকি টিউলিপ জানতে পেরেছিলেন যে ফ্ল্যাটটি আসলে একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপহার হিসাবে পাওয়া।
টিউলিপ হ্যাম্পস্টেডে একটি ফ্ল্যাটেও থাকতেন যা ২০০৯ সালে তাঁর বোনকে দেওয়া হয়েছিল। এই ফ্ল্যাটটিও প্রাক্তন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরেক ব্যবসায়ী উপহার দেন। নির্বাচনী এলাকায় নিজের একটি ফ্ল্যাট থাকা সত্ত্বেও টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে তাঁর মাসি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের যুক্তরাজ্য শাখার সঙ্গে যুক্ত একজন ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন সম্পত্তিতে বসবাস করছেন।
আরও পড়ুন- লক্ষ কোটি টাকার ঘুষ, অনিয়ম! হাসিনার আওয়ামী লীগের দুর্নীতির যে চিত্র উঠে এল শ্বেতপত্রে
২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করেছেন শেখ হাসিনা। তাঁর সরকারের পতনের পর দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সন্দেহের ভিত্তিতে হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাংলাদেশের নানা প্রকল্পের তহবিল থেকে বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে কিনা এই সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযোগ করেছে, ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুক্তিতে কোটি কোটি ডলার নয়ছয় হয়েছে, যা আখেরে গিয়েছে শেখ হাসিনা এবং টিউলিপ সিদ্দিকের ভাঁড়ারে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূস বলেছেন, হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে সম্পত্তি ও টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশের চুরি হওয়া তহবিল বিদেশের পাচার নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে অবশ্যই সেসবের সম্পূর্ণ তদন্ত করা হবে। যদি টাকা আত্মসাৎ করে ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হওয়ার প্রমাণ মেলে, তাহলে সেই সম্পদ বাংলাদেশে ফেরানোর আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস লন্ডনের সানডে টাইমসকে বলেছেন, "টিউলিপ সিদ্দিক হয়তো লন্ডনে যে অর্থ ও সম্পত্তি উপভোগ করছেন তার উত্স পুরোপুরি বুঝতে পারেননি, তবে তিনি এখন বুঝতে পারছেন এবং এখন বাংলাদেশের লোকদের কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে তাঁকে"।