ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কুয়েতে মৃত্যু ৪২ ভারতীয়ের, প্রশ্ন উঠছে কতটুকু সুরক্ষিত প্রবাসী জীবন

Kuwait Fire: বুধবার আগুন লাগে কুয়েতের একটি বহুতলে। সেই অগ্নিকাণ্ডে ভস্মিভূত হয়ে মৃত্যু হয়েছে যাঁদের, তার মধ্যে অন্তত ৪০ জনই ভারতীয় নাগরিক।

শ্রমিকদের থাকতে দেওয়ার জায়গা যেন সাক্ষাৎ জতুগৃহ। আর সেই জতুগৃহতেই বন্দি হয়ে কুয়েতে মৃত্যু হল অন্তত ৫০ জনের। বুধবার আগুন লাগে কুয়েতের একটি বহুতলে। সেই অগ্নিকাণ্ডে ভস্মিভূত হয়ে মৃত্যু হয়েছে যাঁদের, তার মধ্যে অন্তত ৪২ জনই ভারতীয় নাগরিক। তার মধ্যে অন্তত ২৪ জন কেরলের বলে জানা গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই ভারতে এই ঘটনায় শুরু হয়েছে যথেষ্ট চাঞ্চল্য।

রুজি-রোজগার, উপরি আয়ের আশায় বিদেশের মাটিতে কাজ করতে যান বহু ভারতীয়ই। আর সেখানে গিয়ে দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটে বহু। বুধবার তেমনই একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে কুয়েতে। ভোরে আগুন লাগে কুয়েতের দক্ষিণাঞ্চলীয় আহমাদি গভর্নমেন্টের মানগাফ এলাকার একটি আবাসিক বহুতলে আগুন লাগে। ওই বিল্ডিংটি ভাড়া নিয়েছিল এনবিটিসি নামে একটি সংস্থা। সেখানেই ওই সংস্থাটি ওই বিল্ডিংটির একটি ভবনে শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করেছিল। কম করে হলেও সেখানে প্রায় দু'শো মানুষ সেখানে ঠেসেঠুসে থাকছিলেন বলে অভিযোগ। তবে সেই ভবনটির ধারণক্ষমতা তার চেয়ে অনেক কম বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, সংস্থাটি চাপ দিয়ে শ্রমিকদের ওই ভবনেই কোনও মতে থাকতে বাধ্য করছিল। ওই বহুতলেই ছিল ভারতীয় লেবার ক্যাম্প। সেই ক্যাম্পের অন্তত ৪০ জন ভারতীয় বলে জানা গিয়েছে। তবে তার মধ্যে কতজন বাঙালি তা এখনও স্পষ্ট।

আরও পড়ুন: সাত সকালে বিধ্বংসী আগুন পার্কস্ট্রিটে, ঘটনাস্থলে দমকলের ১৫ ইঞ্জিন

ঘটনার দিন নাইট শিফটের কাজ করে এসে শ্রমিকেরা অঘোরে ঘুমোচ্ছিলেন। বুধবার ভোর চারটের দিকে ছয় তলা ভবনের রান্নাঘরে আগুম লাগে। ক্রমে সেই আগুন ছড়িয়ে যায় গোটা বিল্ডিংয়ে। আগুন থেকে পালানোর সুযোগটাও অনেকে পাননি। ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু হয় অনেকের। অনেকে পালাতে গিয়ে ঝাঁপ পর্যন্ত মারেন বিল্ডিং থেকে। সূত্রের খবর, ওই ভবনের প্রবেশদ্বার ছিল একটিই। ফলে পালানোর তেমন রাস্তাও পাননি ওই বিল্ডিংয়ে থাকা শ্রমিকেরা। অনেকে ছাদে উঠে সেখান থেকেও পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু উঁচু ওই বিল্ডিং থেকে পালানো সহজ হয়নি তাঁদের পক্ষে।

বেশিরভাগ মৃত্যুই শ্বাসরোধের কারণে হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বিল্ডিংটির মালিকের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই ওই বিল্ডিং মালিক ও এনবিটিসি গ্রুপের কর্তাব্যক্তিদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছে কুয়েত সরকার। কুয়েতের উপপ্রধানমন্ত্রী শেখ ফাহাদ ইউসুফ সৌদ আল-সাবাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এই ঘটনার জন্য তিনি নির্মাণ ব্যবসায়ীদের লোভকেই দায়ী করেছেন।

ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ভারতেও। কুয়েতে অবস্থিত ভারতীয়দের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুধবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নিহত ভারতীয়দের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকার করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:দিল্লি থেকে শুরু করে পোল্যান্ড, ফ্রান্স! কৃষিবিক্ষোভের আগুনে পুড়ছে যে সব দেশ

কুয়েতের ঘটনায় উদ্বিগ্ন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে বাংলার শ্রমিকদের খোঁজ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিদেশ মন্ত্রক, মুখ্যসচিব এবং রেসিডেন্ট কমিশনারকে যোগাযোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে শোকবার্তা জ্ঞাপন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে শ্রমিকদেক প্রাণের মূল্য নিয়ে। প্রতিবছর অজস্র ভারতীয় বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে খাটতে যান দুটো টাকা অতিরিক্ত আয়ের আশায়। সেখানে গিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দুর্ঘটনা, খারাপ ব্যবহার, ন্যূনতম নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়াই অন্য দেশে গিয়ে বেঘোরে মরেন তাঁরা। সেই শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কী ভাবছে নতুন সরকার? বারবার সেই প্রশ্ন উঁকি দেয় বৈকি!

More Articles