ইমরান-নওয়াজ জোর টক্কর! যে পথে এগোচ্ছে পাকিস্তানের গদির লড়াই

Pakistan election results: ভোটে দেদার কারচুপির নালিশ। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ৪০টি কেন্দ্রে ইতিমধ্যে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পুনর্নির্বাচন।

দেশ জুড়ে তীব্র বিশঙ্খলতা, বাজারে অগ্নিমূল্য। তার মধ্যেই পাকিস্তানে হয়ে গিয়েছে সাধারণ নির্বাচন। ভোট হয়েছে বৃহস্পতিবার। সেই ভোট গণনার ফল আসতে আসতে সময় লেগে গেল অন্তত ৬০ ঘণ্টা। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন। রবিবার দুপুরে শেষপর্যন্ত শেষ হয় ভোটগণনার কাজ। তবে ভোটের ফলাফল হাতে এলেও পরিষ্কার নয়, কার হাতে যেতে চলেছে পাকিস্তানের রাশ? পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ২৬৪টি আসনে গণনা শেষ হয়ে গেলেও কোনও দলই একক ভাবে ‘জাদুসংখ্যা’ ছুঁতে পারেনি। ত্রিশঙ্কু ফলাফলের সামনে পাকিস্তান। মনে করা হচ্ছে, জোট সরকারই ক্ষমতায় আসতে চলছে পাকিস্তানে। অবশ্য পাকিস্তানের চারটি প্রাদেশিক নির্বাচনের ভোটগণনা এখনও চলছে। এখনও পর্যন্ত যে প্রাথমিক ফল জানা গিয়েছে, তাতে পঞ্জাব প্রদেশে এগিয়ে রয়েছে নওয়াজের দল। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে এগিয়ে ইমরানের দল। সিন্ধ প্রদেশে নিজেদের গড় ধরে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে বিলাবলের পিপিপি। আর বালুচিস্তান প্রদেশে জোর লড়াই চলছে পিপিপি এবং পিএমএল-এনের মধ্যে।

পাকিস্তানে ফের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে চলেছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফই? এর আগে তিন তিন বার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)। ফের চতুর্থবার পাক-প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন জেল খাটা আসামী নওয়াজ? উঠেছে প্রশ্ন।  ইতিমধ্যেই দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন পাক-প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার পরেও জেলে বসেই কার্যত বিরাট জয় পেয়েছেন ইমরান। জেলে বসেই নিজের ভোট জয়ের খবর দিয়েছিলেন তিনি এআইয়ের মাধ্যমে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা পিটিআই নেতা ইমরান খানের দল পেয়েছে ৯৩টি আসন, বিরোধী পিএলএমএন পেয়েছে ৭৫টি আসন। এদিকে, নওয়াজ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াও ঘোষণা করে দেন তাঁরা জয়ী। তবে আসল ফলাফল হাতে আসতে আসতে সময় লেগে গিয়েছে অনেকটাই।

আরও পড়ুন: ফের পাশ নির্বাচন পিছনোর প্রস্তাব, আদৌ হবে পাকিস্তানে ২০২৪ ভোট?

ভোটগণনার প্রাথমিক পর্যায়েই বোঝা হয়ে গিয়েছিল, লড়াই হতে চলেছে প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী জেলবন্দি ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত নির্দল এবং আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) (পিএমএল-এম)-এর মধ্যে। তবে লড়াইয়ে ছিল প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাবল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-ও। সেদেশের সংবাদপত্র 'ডন'-এর প্রতিবেদন অনুসারে, এখনও পর্যন্ত পিটিআই সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা ৯৩টি, পিএমএল-এন ৭৩টি এবং পিপিপি ৫৪টি আসনে জিতেছে। অন্যেরা পেয়েছে ৩৩টি আসন। অন্য একটি সূত্র বলছে, পিটিআই সমর্থিত নির্দলরা ১০২টি আসনে জয়ের মুখ দেখে ফেলেছেন। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গড়ার জন্য চাই আরও ৩১টি আসন। যা সম্ভব নয়। কারণ আর গুটিকয়েক আসনে গণনা বাকি আছে।

Pakistan election results PML-N in alliance talks with PPP, MQM-P; Nawaz Sharif could be PM

 

পাকিস্তানের পিপি ১৬৪, এনএ ১১৮ কেন্দ্রে ভোটে কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগে মামলা করেছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, এই দুই কেন্দ্রে শরিফ পরিবারের শাহবাজ শরিফ ও হামজা শরিফ ছিলেন প্রার্থী। তাঁরা জিততেই ইমরান সমর্থিক নির্দলরা সরব হয়েছেন। যে কেন্দ্রে নওয়াজ শরিফ প্রার্থী ছিলেন, সেখানে রিটার্নিং অফিসার নির্দল প্রার্থী ইউসুফ মিওকে ঢুকতে বাধা দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগে কোর্টে পিটিশন দায়ের হয়েছে। প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষিত হয়েছে বলেও রয়েছে অভিযোগ। পাকিস্তান ভোটে রিগিং হচ্ছে বলে সরব হন পাকিস্তান তেহরিক এ ইনসাফ পার্টির সমর্থিত নির্দলরা। ইমরান খানের এই পার্টির সমর্থিত নির্দলরা লাহৌর হাইকোর্টে মামলা করেছেন রিগিং এর অভিযোগে। শুধু তারাই নয়, গণনায় কারচুপির অভিযোগ জানিয়ে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রের প্রার্থীরাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ৪০টি কেন্দ্রে ইতিমধ্যে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পুনর্নির্বাচনের দিন স্থির হয়েছে। তবে এই ৪০টি আসন যদি কোনও একটি দলের পক্ষে যায়, তা হলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া মুশকিল।

Pakistan election results PML-N in alliance talks with PPP, MQM-P; Nawaz Sharif could be PM

পাকিস্তানে রিগিংয়ের জন্য ইভিএমের অনুপস্থিতিকেই দায়ী করেছেন পাক প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। তিনি আবার পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) -এর সদস্য। তিনি দাবি করেছেন, পিটিআই সরকার ইভিএম চালু করার উদ্যোগ নিলেও তা আদতে রূপায়িত করা যায়নি। এই আবহে আরও এক বার বিলাবলের পিপিপি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গড়ার কথা জানিয়েছেন নওয়াজ। মাঝে শোনা গিয়েছিল বিলাবলের পিতা আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে নওয়াজের। কিন্তু এমন কোনও বৈঠকের কথা তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন বিলাবল নিজেই। তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশ মনে করছেন, ইসলামাবাদের কুর্সিতে কে বসবেন, শেষমেশ তা ঠিক করবে পাক সেনাই, আরও স্পষ্ট করে বললে সেনাপ্রধান আসিম মুনির। বিবৃতিতে মুনির বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচন শুধুমাত্র জয়-পরাজয় নির্ধারণের প্রতিযোগিতা নয়, বরং জনমত যাচাইয়ের পরীক্ষা। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং তাঁদের কর্মীদের অবশ্যই ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে এবং যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে শাসনক্ষমতা পরিচালনা এবং জনগণের সেবা করতে হবে। কার্যকরী ও স্থিতিশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভবত এটাই একমাত্র পথ।’’ মনে করা হচ্ছে ‘যৌথ প্রচেষ্টা’ বলতে সেনাপ্রধান নওয়াজ-বিলাবল জোট সরকারের দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন।

আরও পড়ুন: ৫ মাস পর ফিরলেন পাকিস্তানের সাংবাদিক-ইউটিউবার, যে ভাবে থানা থেকে নিখোঁজ হন ইমরান রিয়াজ…

দুর্নীতি মামলায় দোষীসাব্যস্ত হওয়ার পরে ৪টি ভিন্ন ভিন্ন মামলায় মোট ৩৪ বছর জেল হয়েছে ইমরান খানের। তবে জেলে বসেও নিজের ম্যাজিক প্রমাণ করে ছেড়েছেন ইমরান। সেখানে বসেই বেশ কয়েকটি আসনে সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণ করে ছেড়েছেন তিনি। তবে পাকিস্তানের গদির লড়াইয়ের রাশ অনেকটাই সেখানকার সেনার হাতে। তবে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, অতীতে দু’বার সেনার ‘হাতযশে’ ক্ষমতা খোয়ানো নওয়াজই এ বার ‘সেনার বাজি’। আপাত ভাবে তো মনে হয়েছিল হাসতে হাসতেই পাকিস্তানের গদি দখল করতে পারবেন তিনি। তবে কার্যত তেমনটা হয়নি। বরং দলীয় প্রতীক না পেয়ে নির্দল হয়ে লড়াই করে চমকে দিয়েছেন ইমরানের দলের লোকজন। আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব রয়েছে বলে দাবি করে পাক নির্বাচন কমিশন তাদের দলীয় প্রতীক দেয়নি। ফলে দলীয় প্রতীক হিসেবে 'ক্রিকেট ব্যাট' ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে পাকিস্তানে কোন দল সরকার গড়বে শেষপর্যন্ত, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। পুনর্নির্বাচনের ফলাফল হাতে আসার পরেই তা পরিষ্কার হবে।

More Articles