৪৫ দিনে ১১ বিলিয়ন ডলার ধার! যে ভাবে ডুবছে পাকিস্তান
Pakistan Economy: এই প্রথম যে তফসিলি ব্যাঙ্ক থেকে পাকিস্তান সরকার ধার নিল, তা কিন্তু নয়। ২০২৩ অর্থবর্ষে ৩.৭১৬ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি মুদ্রা তফসিলি ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিয়েছিল সরকার। ২০২৪ সালে সেই ধারের অঙ্ক বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ...
আজ থেকে নয়, বছর কয়েক ধরেই পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা বেহাল। এর মধ্যে ক্ষমতায় এসেছে নয়া সরকার। তবে তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি পাকিস্তানে। বাজার আগুন। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সমস্ত জিনিসের দামই আকাশছোঁয়া। মানুষের বেঁচে থাকা দায় হয়ে যাচ্ছে দেশে। এদিকে সরকার গলা অবধি ঋণে ডুবে। অন্য দেশ থেকে নেওয়া ধার, অর্থসাহায্য তো রয়েইছে। এর মধ্যে নাকি নিজের দেশের তফসিলি ব্যাঙ্ক থেকেও বিরাট অঙ্কের ধার নিয়ে রেখেছে পাক সরকার। সূত্রের খবর, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষেরই ১৫ মে থেকে ২৮ জুনের মধ্যে তফসিলি ব্যাঙ্ক থেকে ৩.২ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি মুদ্রা ধার করেছে পাকিস্তান সরকার। এবং তা-ও আবার ২২ শতাংশ সুদের হারে।
অথচ চলতি বছর সরকারের আয় গত বছরের তুলনায় অন্তত ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকারের ব্যায়ের প্রবণতা এতটাই বেশি, যে দেশ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে শাহবাজ সরকার। এরই মধ্যে আগামী অর্থবর্ষে সরকারের আয় আরও বাড়বে বলেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার জন্য বাড়ানো হতে পারে সাধারণ মানুষের করের পরিমাণ। সেখান থেকেই আয়বৃদ্ধির ফন্দি এঁটেছে পাক সরকার। কিন্তু কোনও ভাবে সরকারি খরচ কমিয়ে আর্থিক ভারসাম্য টানার দিকে মন নেই সরকারের, অভিযোগ ওয়াকিবহাল মহলের।
আরও পড়ুন: শাহওয়াজ প্রধানমন্ত্রী, জারদারি প্রেসিডেন্ট! পাকিস্তানের হাল ফেরাবে জোট সরকার?
এই প্রথম যে তফসিলি ব্যাঙ্ক থেকে পাকিস্তান সরকার ধার নিল, তা কিন্তু নয়। ২০২৩ অর্থবর্ষে ৩.৭১৬ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি মুদ্রা তফসিলি ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিয়েছিল সরকার। ২০২৪ সালে সেই ধারের অঙ্ক বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। চলতি অর্থবর্ষে প্রায় ৮. ৫৬৪ ট্রিলিয়ন পাক মুদ্রা ধার করেছে সরকার। কার্যত ২০২৩ সালের ঋণের পরিমাণকেও ছাপিয়ে যেতে বসেছে গত ৪৫ দিনে নেওয়া ঋণের পরিমাণ। তা-ও আবার ২২ শতাংশের চড়া সুদের হার।
পাকিস্তানের যা অর্থনৈতিক রেকর্ড, তাতে প্রশ্ন জাগে, আদৌ ওই ধারের অঙ্ক কোনওদিনও কি শোধ করতে পারবে সে দেশের সরকার। নাকি তার আগেই নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করার পরিস্থিতি তৈরি হবে। পাকিস্তানের এই মুহূর্তে এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, যে তারা রামের থেকে টাকা চেয়ে শ্যামের ধার মেটায়। চলতি বছরে পাকিস্তানের ঘরোয়া ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬.৫৫ ট্রিলিয়ন পাক মুদ্রার কাছাকাছি। সেই ঋণ শোধ করতেই নিজের কাঁধে একের পর এক ঋণের বোঝা বাড়িয়েই চলেছে পাকিস্তান সরকার।
এরই মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (IMF)- কাছ থেকে আরও অর্থ ধার করার পরিকল্পনা রয়েছে পাক সরকারের। যা তাদের বেঁধে দেবে আরও নানান শর্তের পাকে, সুদের বোঝায়। তাতে কী? সে সবেও রাজি পাক সরকার। তবু কোনও ভাবে খরচ কমিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় ভারসাম্য আনার পথে হাঁটতে চাইছে না তারা।
মাঝেমধ্যেই পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষেপে ওঠেন সাধারণ মানুষ। মাস কয়েক আগেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অতিরিক্ত বিদ্যুতের বিল, অগ্নিমূল্য বাজারদরের বিরুদ্ধে পথে নামেন বাসিন্দারা। এ দৃশ্য পাকিস্তানে বিরল কিছু নয়। গত কয়েক দশক ধরে এমন ছবি প্রায়শই দেখা যায় দেশটিকে। বিভিন্ন দেশের আর্থিক সাহায্যের উপর নির্ভর করে থাকা দেশটি কৃষি ছাড়া অন্য কোনও ভাবে আয় বাড়ানোর কোনও চেষ্টাই তেমন করেনি এতগুলো বছরে। মধ্যিখানে অবশ্য শোনা গিয়েছিল, তেড়ে গাধার ব্যবসা শুরু করেছে পাকিস্তান। চিনে নাকি গাধার খুব চাহিদা। সেই গাধা চিনে রফতানি করেই আয়ের পথ সুগম করতে চেয়েছিল পাক সরকার।
অথচ শিল্প আনা বা অর্থনৈতিক ভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও সদিচ্ছা দেখা যায়নি সে দেশের সরকারের মধ্যে। আর্থিক অনটনের অভিযোগ দেখিয়ে সরকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পে রাশ টেনেছে। তেমন ভাবে ব্যবসায় লগ্নি করার দিকে ঝোঁকেনি। এদিকে বেসরকারি সেক্টরগুলোও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে চড়া সুদের কারণে। আর তার জায়গায় নিজের দেশের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিচ্ছে কারা? না সরকার।
আরও পড়ুন: ৩৬ টাকার টিকিটে পাকিস্তান থেকে ভারত! এই কাগজের টুকরোয় জড়িয়ে রয়েছে মর্মান্তিক ইতিহাস
২০২৫ অর্থবর্ষের মধ্যে প্রায় ৩.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে পাক সরকার। এদিকে নানা কারণ মিলিয়ে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার থমকে গিয়েছে ২.৩৮ শতাংশেই। তবে যে ভাবে ঋণের বোঝা নিজের কাঁধে বাড়িয়েই চলেছে পাক সরকার, তার উপর বাড়তি চাপ চড়া সুদের হার। মুদ্রাস্ফিতি কম হওয়া সত্ত্বেও এই চড়া সুদের কারণে বেসরকারি সংস্থাগুলির পক্ষে সেই আর্থিক লক্ষ্যমাত্রার পৌঁছনো সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে সম্প্রতি আবার ট্রেজারি বিল নিলাম করে ৪৪২ বিলয়ন পাক মুদ্রা ঘরে তুলেছে সরকার। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫০ বিলিয়ন পাক মুদ্রার।
প্রশ্ন ওঠে, যাচ্ছে কোথায় এত এত টাকা? সাধারণ মানুষের পকেট খালি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম চড়া। অথচ সরকার বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা নিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠছে। এদিকে দেশে শিল্প নেই। অর্থনৈতিক ভাবে বেড়ে ওঠার রাস্তা নেই। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেই যায়, সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা নিয়ে। আদৌ কি কোনও দিন স্বাভাবিক জায়গায় ফিরতে পারবে পাকিস্তান? আদৌ কি ঋণের বোঝা নামাতে পারবে পিঠ থেকে পাক সরকার? অন্য দেশের মতো অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হতে পারবে, সংশয় থেকেই যায়।