লাদাখকে দেওয়া কথা রাখেননি মোদি! রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে জম্মু-কাশ্মীর?
PM Modi on Jammu and Kashmir: আর কিছুদিন বাদেই দেশ জুড়ে লোকসভা নির্বাচন। ঠিক এ সময়ে কাশ্মীরকে খুব শিগগিরই রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে লাদাখকে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তবে ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগে তাদের জানিয়ে দেওয়া হল, তাদের দাবিপূরণ সম্ভব নয় মোটেই। এবার কি তেমন প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পালা কাশ্মীরের। আর কিছুদিন বাদেই দেশ জুড়ে লোকসভা নির্বাচন। ঠিক এ সময়ে কাশ্মীরকে খুব শিগগিরই রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানালেন, সেখানে বিধানসভা ভোটের আর দেরি নেই।
২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই বড় পদক্ষেপ করেছিল মোদি সরকার। অগস্ট মাসে হঠাৎ করেই বাতিল করে দেওয়া হয় ৩৭০ ধারা। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা তো খর্ব করাই হয়, পাশাপাশি কেড়ে নেওয়া হয় উপত্যকার পূ্রণ রাজ্যের মর্যাদাও। জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখকে নিয়ে দু'টি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল কাশ্মীর।
শুক্রবার জম্মুর উধমপুরের একটি সভায় গিয়ে ফের সেই ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির কথা তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেসকে দুষে বললেন, ক্ষমতার লোভে ৩৭০ ধারা প্রাচীর তৈরি করে রেখেছিল কংগ্রেস। তবে ৩৭০ ধারা নিয়ে কথা বলে তিনি যত না নজর কাড়লেন, তার চেয়ে অনেক বেশি লাইমলাইট কাড়ল তাঁর প্রতিশ্রুতি। উধমপুরের জনসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলে ফেললেন, সেই সময় নাকি খুব বেশি দূরে নয়, যখন জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হবে। ফের রাজ্যের মর্যাদা পাবে জম্মু ও কাশ্মীর। উধমপুরের সভা থেকে উপত্যকার মানুষের চোখে নতুন করে স্বপ্ন বুনলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন,"আপনারা নিজেদের মন্ত্রীদের দিয়ে আপনাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। … দেশ বিদেশ থেকে বড় সংস্থা , কোম্পানি আরও বেশি করে আসবে এখানে।"
আরও পড়ুন: ‘জারি হতে পারে রাষ্ট্রপতি শাসন’! দিল্লির দখল নিতে নয়া ছক বিজেপির?
মোদি এদিন দাবি করেছেন, তিনি নাকি কথা রেখেছেন। ৩৭০ ধারার দেওয়াল গুঁড়িয়েই দেননি শুধু, তার ধ্বংসাবশেষ মাটিতে পুঁতে দিয়েছেন। একই সঙ্গে কংগ্রেসকে চ্যালেঞ্জ ঠুকে তাঁর বক্তব্য,দেশের কোনও রাজনৈতিক দল সাহস নিয়ে আসুক.. তারা ঘোষণা করুক, যে তারা ৩৭০ ধারা ফের লাগু করবে, দেশ তাদের মুখও দেখতে প্রস্তুত হবে না।'
কিন্তু মোদি যা বলছেন, তা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতির পর্দা, না সত্যিই এর কোনও সারবত্তা রয়েছে। কাশ্মীরে ৩৭৯ ধারা বাতিলের পর পরই সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপ নাকি একেবারেই সাংবিধানিক ও বৈধ। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য ছিল, কাশ্মীর যে সময় ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, সে সময়েই তা ভারতের সার্বভৌমত্ব মেনে নিয়েছিল। এই অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনেই কাশ্মীরের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক সভা তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে যা উঠে যায়। ফলে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা স্থায়ী ছিল না, অস্থায়ী বা সাময়িক ছিল। সুপ্রিম কোর্ট বিধানসভা নির্বাচন করারও নির্দেশ দিয়েছিল সেখানে।
বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ মনে করছে, দেশে লোকসভা ভোটের পর্ব মিটলেই নাকি কাশ্মীরে ভোটের তোড়জোড় শুরু হবে। মোদির এদিনের নির্বাচনী ভাষণ আসলে সেই সম্ভাবনাতেই সিলমোহর দিচ্ছে। তবে এর মধ্যে বিজেপি সরকার বা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কোনও বিশেষ তৎপরতা নেই বলেই তোপ দেগেছেন ভূস্বর্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমন আবদুল্লা। তাঁর কথায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে, তাই বিধানসভা নির্বাচন করানো ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা নেই মোদির কাছে। যদি প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকেই কাশ্মীরের বিধানসভা ভোটের ব্যবস্থা করতেন, তাহলে বোঝা যেত। তবে প্রশ্ন, ভোট করলেই কি ফিরবে রাজ্যের মর্যাদা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপত্যকায় বিধানসভার ভোট করানোর নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন:মাইনাস ঠান্ডায় খোলা আকাশের নীচে টানা অনশন! যে দাবিতে লাদাখে সরব বাস্তবের ‘ব়্যাঞ্চো’
আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফাতেই ভোট রয়েছে উধমপুরে। ফলে সেখানে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে যে কোনও কসুর করবেন না নরেন্দ্র মোদি, তাতে আর নতুন কী! তবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেই কথা কি রাখবে বিজেপি সরকার আদৌ। কবে থেকেই তো পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা চেয়ে আসছে লাদাখ। ২০১৯ ভোটের আগে সেখানে নিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিল বিজেপি। লাদাখে ষষ্ঠ রক্ষাকবচ দেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু পাঁচ বছর পর, ২০২৪ ভোটের আগে আগে অমিত শাহের দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, ষষ্ঠ তফসিল হবে না। প্রতিবাদে বিক্ষোভ-অনশনে বসলেন লাদাখের অসংখ্য বাসিন্দা। যার নেতৃত্ব দিলেন বিশিষ্ট পরিবেশবিদ-বিজ্ঞানী সোনম ওয়াংচুক। লাদাখকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখেনি মোদি সরকার। ভোটে জিতে এই পাহাড়ের মানুষজনকে ভুলেছে বিজেপি। জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও কি সেই একই ঘটনা ঘটতে চলেছে। মোদির প্রশ্নের পরেই উঠে গিয়েছে প্রশ্ন।