ভুল সংশোধন নাকি নয়া কৌশল! ক্ষমতায় বসেই কৃষকদের ভাবনা কেন ভাবছেন মোদি?
Modi 3rd Term: সোমবার কৃষি সম্মান নিধির ফাইলে সই করার পরে প্রধানমন্ত্রী মোদি জানিয়েছেন, "দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম যে সই করলাম সেটা কৃষক কল্যাণের জন্য। আমরা কৃষকদের জন্য আরও বেশি করে কাজ করতে চাই।
ভোটে জিতে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলেন মোদি। রবিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে মহা ধূমধাম করে হয়ে গেল তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিন, মোদির তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রথম দিন। এই লোকসভা ভোটে জয় এলেও সেই পরিমাণ ভালো ফলাফল করতে পারেনি বিজেপি। পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ-সহ বহু রাজ্যেই লোকসভা ভোটে তেমন আসন জিততে পারেনি গেরুয়া শিবির। তার নেপথ্যে কৃষক বিক্ষোভের মতো ঘটনা রয়েছে বলেই অনেকের মত। তা-ই কি তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই বেশি করে মন দিতে চাইছেন তিনি? কৃষক বিক্ষোভের ক্ষেত্রে যে মোদি কার্যত কাঠের পুতুলের মতোই হাত-পা গুটিয়ে বসেছিলেন, সেই মোদিই ক্ষমতায় এসেই কিনা সই করে ফেললেন 'কিসান সম্মান নিধি' প্রকল্পে। নয়া দফায় পুরনো ভুল সংশোধন করে নিতে চাইছেন মোদি, নাকি এ-ও নতুন কৌশল?
কী রয়েছে এই 'কিসান সম্মান নিধি' প্রকল্পে? সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে মাধ্যমে ৯.৩ কোটি কৃষককে ২০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করবে মোদি সরকার। ১০ জুন, সোমবার মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ওই কিসান নিধি যোজনা ১৭তম কিস্তি ছাড়ল। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি মন্ত্রকের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে একটি বিজ্ঞপ্তিও। যেখানে জানানো হয়েছে, ওই ১৭তম কিস্তির সুবিধা পেতে চলেছেন দেশের প্রায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষ কৃষক। এর জন্য় বরাদ্দ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। যা বিলি করা হবে ওই কৃষকদের মধ্যে।
আরও পড়ুন: কৃষক-ক্ষোভের আঁচ! যে যে ভুলে ৩৮টি আসন খোয়াতে হল বিজেপিকে?
হিন্দুত্ববাদী ভাবধারার ধারক ও বাহক গেরুয়া শিবিরের সবচেয়ে বড় জোরের জায়গাই ছিল উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাধিক রাজ্য। আর সেই রাজ্যগুলিতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে মোদি ম্যাজিক। পঞ্জাবে একটিও আসন পায়নি বিজেপি। হাতছাড়া হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বড় অংশও। যে প্রত্যাশা আদপেই ছিল না মোদি সরকারের। কিন্তু মানুষের রায় বড় রায়। এর নেপথ্যে খুব বড় একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে কৃষক বিদ্রোহ, তেমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। কৃষক আন্দোলনকে হয়তো একটু বেশিই হালকা ভাবে নিয়ে ফেলেছিল গেরুয়া শিবির। তার জের যে বিজেপিকে শেষপর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতার নম্বর থেকে ছিটকে ফেলে দিতে পারে, তেমনটা বোধহয় প্রত্যাশা ছিল না একেবারেই। কিন্তু কার্যত হয়েছে তেমনই। সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বিজেপি। যদিও জোটসঙ্গীদের কৃপায় এই ভোটের দরিয়া কোনও মনে উতরে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল।
ন্যূনতম সহায়ক মূল্য-সহ একাধিক দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে কৃষক সমাজ। বারবার দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে কৃষক আন্দোলনের জেরে। রাস্তা অবরোধ করে মিটিং মিছিল করে তাঁরা নিজেদের দাবি জানিয়েছেন। বিজেপির তিন বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বারংবার। সেই আইন যে আসলে বড় কৃষক এবং সংস্থার উপকারেই আসবে কেবল, তা বারবার জানিয়েছিল কৃষক সমাজ। তবে তাতে কান দেয়নি বিজেপি সরকার। সেই ভুল কি তৃতীয় দফায় এসে শুধরে নিতে চাইছে মোদি 3.O?
সোমবার কৃষি সম্মান নিধির ফাইলে সই করার পরে প্রধানমন্ত্রী মোদি জানিয়েছেন, "দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম যে সই করলাম সেটা কৃষক কল্যাণের জন্য। আমরা কৃষকদের জন্য আরও বেশি করে কাজ করতে চাই। কৃষকক্ষেত্রের জন্য কাজ করতে চাই।" প্রধানমন্ত্রী মোদি টুইট করেও জানান, আমাদের সরকার সারা দেশে আমাদের কৃষক ভাই-বোনদের জীবন সহজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয় যে, টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি তার জন্য প্রথম কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এর অধীনে, প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধির ১৭তম কিস্তি সম্পর্কিত ফাইল স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দেশের ৯ কোটিরও বেশি কৃষক উপকৃত হবে। আগামী দিনেও আমরা কৃষকদের কল্যাণে এবং কৃষি খাতের উন্নয়নে কাজ করে যাব।
আরও পড়ুন: কৃষককে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার সময়, নৈতিকতা কোথায় যায়?
পরিসংখ্যান বলছে, এখনও প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন করে কৃষক আত্মহত্যা করেন। ঋণের বোঝা সামলে ভবিষ্য়তে কৃষিকাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছেন বহু কৃষিজীবীই। বাধ্য হয়ে চাষবাস ছাড়ছেন তাঁরা। ভারতীয় সভ্যতা বরাবরই কৃষিভিত্তিক সভ্যতা। সেই আদিমতম পেশা থেকে বহু কৃষক আজ বিদায় নিচ্ছেন। যারা দেশের মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দেন মাঠে খেটে, শ্রম ঢেলে, তাদের পথে নামতে হয়েছে ন্যায়ের আশায়। সেই কৃষকদের জন্য এতদিন কার্যত কিছুই করেনি এ দেশের সরকার। তৃতীয় দফায় সেই ভুল শুধরে নতুন পথে চলতে চান মোদি সরকার, তেমন বার্তাই কি দিতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী। নাকি এ সবটাই আসলে আইওয়াশ, হারিয়ে যাওয়া ভোটবাক্স পুনরুদ্ধারের। প্রশ্ন ওঠেই।