ভোটে মহুয়া-কাঁটা তুলতে অমৃতার পাশে খোদ মোদি, কোন পথে কৃষ্ণনগরের লড়াই?
Lok Sabha Election 2024: বিজেপি প্রার্থী অমৃতার পাশেই রয়েছে বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব। বুধবার অমৃতাকে ফোন করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
লোকসভা ভোট এসে গিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে ইতিমধ্যেই প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে দিয়েছে বিভিন্ন দল। বিজেপিরও প্রার্থীতালিকা ঘোষণা প্রায় শেষ। বাংলার যে যে লোকসভা কেন্দ্রে এবার নজর রাজ্যবাসীর, তার মধ্যে অন্যতম কৃষ্ণনগর। যেখানে তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়ছেন বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তার বিপরীতে বিজেপির প্রার্থী সেখানকারই ভূমিকন্যা ও স্থানীয় রাজপরিবারের সদস্য অমৃতা রায়। একদিকে মহুয়া হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের লড়াই, অন্যদিকে বিজেপির জমিদখলের চেষ্টা। কার দিকে যেতে চলেছে কৃষ্ণনগরের মানুষের রায়?
যদিও বিজেপি প্রার্থী অমৃতার পাশেই রয়েছে বিজেপির শীর্ষনেতৃত্ব। বুধবার অমৃতাকে ফোন করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 'রাজমাতা' অমৃতা রায়কে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়েছেন, তিনি আইনি পথ খুঁজছেন, যাতে গরিবদের থেকে লুঠপাট করা টাকাপয়সা তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। দুর্নীতিগ্রস্তদের টাকা ও সম্পত্তি নিয়ে গরিবদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ইডি, তেমনটাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ফেসবুক থেকে টার্গেট সংসদ! দেবাংশু ভট্টাচার্যের উত্থানের গতি অবাক করবে…
স্বাভাবিক ভাবেই সেই প্রসঙ্গে রাজ্যসরকারের নিয়োগদুর্নীতির কথাও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, রাজ্য মানুষের কাছ থেকে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছে চাকরি দেওয়ার নাম করে। অমৃতাকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি যাতে মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর সেই অবস্থানের কথা জানান। পাশাপাশি ক্ষমতায় ফিরে সেই সব গরিব মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন বলেও জানান মোদি। সেখান থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে আইনি পথও খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
অমৃতার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র। দলের স্বপ্রতিভতম নেত্রী, সুবক্তা এবং উচ্চশিক্ষিতও বটে। সম্প্রতি টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন মামলায় জড়িয়ে সাংসদপদ খোয়ান মহুয়া। তার পরেও অবশ্য রেহাই মেলেনি। এবার তাঁর পিছনে পড়েছে ইডি। বুধবার মহুয়াকে সমনও পাঠিয়েছে ইডি। দেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের একটি মামলায় তাঁকে দিল্লিকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৮ মার্চই ইডির সদর দফতরে মহুয়াকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে বলে খবর। এর আগেও ওই মামলায় ইডি তলব করেছিল মহুয়াকে। তবে সেবার হাজিরা এড়ান তৃণমূলনেত্রী।
দিন কয়েক আগেই আবগারি দুর্নীতি মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। তার আগে একই ভাবে ঝাড়খণ্ডে পদ খুইয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। তবে পদ বাঁচাতে না পারলেও রাজ্যের শাসন নিজেদের দলের হাতেই রাখতে পেরেছেন হেমন্ত। কেজরি অবশ্য পদত্যাগের পথে না হেঁটে জেলে থেকেই সামলাচ্ছেন রাজ্যের শাসনভার। গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশও দিচ্ছেন সেখান থেকেই। অভিজ্ঞদের একাংশের দাবি, লোকসভা ভোটে দেশ জুড়ে নিরঙ্কুশ জয় ছিনিয়ে আনতে অবিজেপি রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে দিয়ে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে বিজেপি। আর সেই তালিকায় কেজরির পরেই রয়েছে মহুয়ার নাম।
সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে বুধবারই ইডি সমন পাঠিয়েছে মহুয়াকে। তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। সেই মামলায় মহুয়া গ্রেফতার হতে পারেন বলেও আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতাকে এমন সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ফোন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আইনি পথে পাশে থাকার কথা বলে কি আসলে কৃষ্ণনগরে অমৃতার পথের কাঁটা সরানোর ইঙ্গিতই আগেভাগে দিয়ে রাখলেন প্রধানমন্ত্রী? সাংসদ পদ খোয়ানোর পরেও মাথা নোয়াননি মহুয়া। বরং গোড়া থেকেই লড়াই করার বার্তাই শোনা গিয়েছে তাঁর কণ্ঠে। খানিকটা স্বেচ্ছাচারী ভাবেই তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করেছিল এথিকস কমিটি। বিরোধীদের কাগজপত্র পড়ার সময়টুকু পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: কেজরিওয়ালের পরে কে? ইডি-সিবিআই অস্ত্রের নিশানায় এবার কারা?
সেই ঘটনায় মহুয়ার পাশেই ছিল দল। সেই কারণেই ফের কৃষ্ণনগর থেকেই লোকসভা ভোটে মহুয়াকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। ফলে মহুয়ার জন্য এই লড়াই শুধুমাত্র লোকসভা ভোটের লড়াই নয়। হৃত গৌরব ও মানসম্মান ফেরানোর লড়াই এই কৃষ্ণনগর কেন্দ্র। গতবারের সাংসদ মহুয়ার পাশে কৃষ্ণনগরের মানুষের সমর্থনও রয়েছে বলেই আন্দাজ করা যায়। আর সেই লড়াইকে কাটতে এবার একের পর এক সুতো ছাড়া শুরু করেছে বিজেপি। ভূমিকন্যা, তার উপরে সেখানকার রাজবাড়ির সদস্য অমৃতাকে প্রার্থী করা ছিল তার শুরু। কৃষ্ণনগর দখলের লড়াইয়ে এর পর আর ঠিক কী কী কৌশল নিতে চলেছে বিজেপি, সেটাই এখন দেখার।