আর সাংসদ নন রাহুল গান্ধি! জেল ঘোষণার এক রাতের মধ্যেই কেন সাংসদ পদ খারিজ?

Rahul Gandhi Jail: দেশের সব চোরদের কেন মোদি পদবি- এই প্রশ্ন তোলার অভিযোগে রাহুল গান্ধীকে সুরাটের একটি আদালত দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়।

মাত্র একদিনের নোটিশ! লোকসভায় সাংসদ হিসাবে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো রাহুল গান্ধিকে! কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধিকে ২০১৯ সালের একটি মানহানির মামলায় সুরাটের আদালত দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় বৃহস্পতিবারই। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই মোদির বিরুদ্ধে মন্তব্য করার জন্য দোষী সাব্যস্ত রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজ করা হলো। ওয়ানাড়ের সাংসদ রাহুল গান্ধি 'কেন সব চোরের পদবি মোদি' মন্তব্য করে দোষী সাব্যস্ত হন।

"C.C./18712/2019 মামলায় সুরাটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের কংগ্রেস সাংসদকে দোষী সাব্যস্ত করে। যার ফলে, কেরলের ওয়ানাড়ের সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্বকারী লোকসভার সদস্য রাহুল গান্ধির, তাঁর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তারিখ অর্থাৎ ২৩ মার্চ, ২০২৩ থেকে, লোকসভার সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে। ভারতের সংবিধানের ১০২(১)(ই) ধারার বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১-র অষ্টম ধারা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে লোকসভার বিজ্ঞপ্তিতে।

দেশের সব চোরদের কেন মোদি পদবি- এই প্রশ্ন তোলার অভিযোগে বৃহস্পতিবার, প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান রাহুল গান্ধিকে সুরাটের একটি আদালত দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়। আদালত কংগ্রেস নেতাকে জামিন মঞ্জুর করে এবং আপিল দায়ের করার লক্ষ্যে এক মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে।

আরও পড়ুন- সবই কর্মের ফল! দশ বছর আগের এই কাজের শাস্তিই এখন পাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী?

২০১৯ সালের এপ্রিলে সুরাট পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক এবং গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেশ মোদির দায়ের করা একটি অভিযোগের বিষয়ে রাহুল গান্ধির মন্তব্যের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০-এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওয়ানাড়ের লোকসভা সাংসদ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের কোলারে একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় চোর মোদি বিষয়ক মন্তব্যটি করেছিলেন।

 

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি জানিয়েছেন, লোকসভা সচিবালয় কোনও সাংসদকে অযোগ্য ঘোষণা করতে পারে না। রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ এনে শুক্রবার সকাল থেকেই রাজ্য কংগ্রেসের বেশ কয়েকটি শাখা একযোগে বিক্ষোভ শুরু করেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গের মতে, কংগ্রেস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, দেশের জনগণের টাকা নিয়ে কে পালিয়েছে তার উত্তর খোঁজার। আর অন্যদিকে বিজেপি মূল ইস্যু থেকে মানুষের মনোযোগ সরানোর চেষ্টায় এই গ্রেফতারি, পদ খারিজের খেলা খেলছে। বিজেপির বিরুদ্ধে অনগ্রসর শ্রেণিকে অপমানের অভিযোগও এনেছেন মল্লিকার্জুন। "কংগ্রেস সবসময় অনগ্রসর শ্রেণি, তপশিলি জাতি এবং সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং লড়াই করেছে। এই লোকজন, যারা মনুতে বিশ্বাস রাখে, তারাই আবার অনগ্রসর শ্রেণির কথা বলে!” এই কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েও রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে এক ইঞ্চিও ছাড়েননি খাড়গে।

আরও পড়ুন- “সব মোদিই চোর!” দু’বছরের সাজা রাহুল গান্ধীর, জেলেই থাকতে হবে প্রধান বিরোধী নেতাকে?

রাহুল গান্ধি এখন এই সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। কংগ্রেস নেতারা এই পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইতিমধ্যেই। তবে উচ্চ আদালতের রায় বাতিল না হলে রাহুল গান্ধি আগামী আট বছর নির্বাচনে লড়তে পারবেন না। দলের অন্দরের খবর বলছে, কংগ্রেস নেতা এই রায়কে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করার পরিকল্পনাই করছেন।

দলের বর্ষীয়ান নেতা জয়রাম রমেশ আদালতের এই রায়কে 'গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যা' বলেই মনে করছেন। দেশে মোদি বিরোধিতার 'দোষে' যদি একজন সাংসদের অবস্থা এমন হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে স্বাধীনভাবে বিরোধিতা করবেন রাষ্ট্রের, প্রশ্ন উঠছেই! মোদি সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি, হুমকির রাজনীতি, ভয় দেখানোর রাজনীতি এবং হয়রানির রাজনীতির এটি একটি বড় উদাহরণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিরোধীদের বড় অংশ।

শ্রমমন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব বলেছেন, রাহুল গান্ধি অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা ওবিসি নামে পরিচিত বর্ণ গোষ্ঠীর সদস্যদের অপমান করেছিলেন। কারণ মোদি পদবিটি ওই গোষ্ঠীরই। "কোনও পদবিকে অপমান করা বাক স্বাধীনতা নয়," দাবি ভূপেন্দরের।

More Articles