রাহুল অতীত? এবার দেশে কংগ্রেসের মুখ কি প্রিয়াঙ্কা গান্ধিই?
Rahul Gandhi and Priyanka Gandhi: রাহুলের এই ঘটনা প্রিয়াঙ্কা গান্ধির জন্যও নতুন সূচনার সম্ভাবনা তৈরি করছে।
একরাতের মধ্যেই তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল রাহুল গান্ধির রাজনৈতিক জীবন। ওয়ানাড়ের সাংসদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা, দু'বছরের জেল আর তার জেরেই সাংসদ পদ বাতিল! এই ঘটনার আইনি প্রতিকার চাইতে হলে রাহুল গান্ধিকে আদালতে আপিল করতে হবে। আপিলের জন্য এক মাস সময়ও দেওয়া হয়েছে। তবু, এখনও কংগ্রেসের কোনও হেলদোল নেই আইনি পথে! রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস কর্মীরা রাহুল গান্ধিকে দোষী সাব্যস্ত করা এবং লোকসভা সাংসদ হিসাবে তাঁকে অযোগ্য ঘোষণার প্রতিবাদ করছেন। ভারতের প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ নিয়েও জল্পনা কল্পনা চলছে। কিন্তু আইনি পথে এখনও এগোচ্ছে না রাহুলের দল। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে কেন এখনও আপিল করেননি রাহুল?
রাজনৈতিক বিবিধ সূত্র বলছে, কংগ্রেস এখনও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে আদালতে আপিল দায়ের করতে পারেনি কারণ রাহুলের আইনি দল গুজরাতি ভাষা থেকে এই আদেশের অনুবাদ করছে, যাতে অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে। আর এই সময় লেগে যাওয়ার মধ্যেও 'আশার আলো' দেখছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। মোদির বিরোধিতার জেরে রাহুলের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা আর সাংসদ পদ বাতিলের মতো ঘটনা আসলে 'বিরোধী ঐক্য' তৈরি করেছে বলে মনে করছেন তিনি। শশীর দাবি, আঞ্চলিক নানা দলগুলি নিজেদের রাজ্যে কংগ্রেসকে প্রতিপক্ষ হিসেবে গণ্য করেছে। কিন্তু এই সংকটের সময় তারা কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে। আপ আহ্বায়ক এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও সহ অনেক বিরোধী নেতাই রাহুল গান্ধির সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন।
আরও পড়ুন- “আমার নাম সাভারকর নয়…”, সাংসদ পদ খারিজের পর সাংবাদিক বৈঠক, কী বললেন রাহুল গান্ধী?
নিঃসন্দেহে কংগ্রেসের দুর্বল স্বাস্থ্যকে রাহুলের এই ঘটনা আরও অনেকটাই নড়বড়ে করে দিয়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা দেশে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এখন রাহুল গান্ধি নিজের আসন বাঁচাবেন কীভাবে, কীভাবেই বা দেশের প্রধান বিরোধী দল নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবে?
আইনি পথ
কংগ্রেস রাহুলের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে কিছু আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। যদিও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এখনও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে আপিল করা হয়নি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির আইনজীবীরা কম শাস্তির হয়ে সওয়াল করেছেন। তাঁদের যুক্তি, কাউকে অপমান করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ 'ত্রুটিপূর্ণ'। কেন এই রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে দলের পক্ষ থেকে বিলম্ব হচ্ছে তার ব্যাখ্যাও রয়েছে তাঁদের কাছে। রাহুল গান্ধি এখন দায়রা আদালত বা উচ্চতর আদালতে যেতে পারেন, বা আপিলের মাধ্যমে তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার উপর স্থগিতাদেশ চাইতে পারেন।
সাংসদ পদ খারিজের বিরুদ্ধে লড়াই
সাংসদ হিসেবে রাহুলের অযোগ্যতার বিষয়ে অতীতের একটি রায় মাথায় রাখা দরকার। লিলি থমাস বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া মামলা ২০১৩ সালের ঐতিহাসিক রায়ে, সুপ্রিম কোর্ট জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৪) ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। আদালত জানায়, শুধুমাত্র একটি আপিল দায়ের করলেই তা যথেষ্ট নয় আর। দোষী সাব্যস্ত সাংসদকে অবশ্যই ট্রায়াল কোর্টের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশের একটি নির্দিষ্ট আদেশ পেতে হবে।
আরও পড়ুন- বিজেপির ‘আচ্ছে দিন’, রাহুল গান্ধির হাতছাড়া হবে ওয়ানাড় আসন?
দেশজুড়ে প্রতিবাদ
কংগ্রেস সদ্যই নিজের 'ভারত জোড়ো যাত্রা' শেষ করেছে। দেশজুড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আন্দোলন আরও মারমুখী হবে বলেই আশা করা যায়। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে, রাহুলের এই ঘটনা দেশে মোদিবিরোধী হাওয়াকে আরও গতি দিতে পারে। এই মুহূর্তে শাসক দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে 'সত্যাগ্রহ' করছে কংগ্রেস। তবে এই আন্দোলন টিকবে কিনা তা নির্ভর করবে আইনি ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর।
সত্যিই কি রাহুলের সাজার ঘটনায় কংগ্রেস আশার আলো দেখছে?
এই সাজা দলের জন্য ভালো প্রমাণিত হতে পারে কিনা তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে রাহুলের ভাবমূর্তির জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। জোট গঠনের সময় কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গিও কিছুটা বদলাতে পারে এক্ষেত্রে। শুক্রবার, রাহুলের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার একদিন পরেই, ১৪ টি দল ইডি এবং সিবিআইয়ের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করেছে। বলা হচ্ছে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে যদি নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেন তবে বিজেপি বিরোধী দলগুলির সঙ্গে জোট বিষয়ক আলোচনা আরও কার্যকরী হবে। রাহুলের এই ঘটনা প্রিয়াঙ্কা গান্ধির জন্যও নতুন সূচনার সম্ভাবনা তৈরি করছে। প্রিয়াঙ্কা সুবক্তা, দৃঢ় এবং কঠোর পরিশ্রমী। প্রিয়াঙ্কা যদি নেতৃত্ব দেন তাহলে বিজেপি কিছুটা হলেও কোণঠাসা হতে পারে।