বিজেপির 'আচ্ছে দিন', রাহুল গান্ধির হাতছাড়া হবে ওয়ানাড় আসন?

Rahul Gandhi Wayanad Seat: উচ্চতর আদালত রাহুল গান্ধির সাজা বাতিল না করলে তিনি সম্ভবত আট বছরের জন্য আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

গেরুয়া দাপটে সারা দেশে কংগ্রেসের অবস্থা এমনিতেই দুর্বল। গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোটবাক্স স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, জিততে গেলে যে ম্যাজিকমন্ত্র দরকার, তা হারিয়েছে কংগ্রেস। সবেধন নীলমণি ছিল কেরলের ওয়ানাড় আসনটি। রাতারাতি সেই আসনের সাংসদ পদ থেকে উৎখাত করা হয়েছে রাহুল গান্ধিকে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধিকে সাংসদ হিসাবে অযোগ্য ঘোষণা করার পরেই কেরলের ওয়ানাড় লোকসভা আসন সাংসদহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তাহলে কি এবার উপনির্বাচনের পথেই হাঁটতে হবে এই আসনটিকে? সূত্রের খবর, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কেরলের ওয়ানাড়ে উপনির্বাচন করা হতে পারে।

বৃহস্পতিবার গুজরাতের সুরাটের একটি আদালত রাহুল গান্ধিকে মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে এবং দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়। যার জেরেই লোকসভায় তাঁর সদস্য পদ খারিজ হয়ে যায়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য কংগ্রেস নেতাকে ৩০ দিনের জন্য জামিন দেওয়া হয়েছে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ২০১৫-এর ধারা ১৫১এ অনুসারে, আসন শূন্য হয়ে গেলে সংসদ ও রাজ্য বিধানসভার শূন্য আসনের উপনির্বাচন হতে হবে ছয় মাসের মধ্যেই। এই আইন অনুযায়ীই রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ বাতিল করা হয়েছে। আইনের ধারা ৮(৩) অনুসারে, একজন সাংসদ যখন দোষী সাব্যস্ত হন এবং কমপক্ষে দুই বছরের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন তখনই তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

লোকসভার সচিবালয় শুক্রবার রাহুল গান্ধিকে সাংসদ হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করে এবং এখন উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে নির্বাচন কমিশনের। উল্লেখ্য, লোকসভায় এখন দু'টি আসন খালি রয়েছে - জলন্ধর এবং ওয়ানাড়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের আমেথি আসন কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়। সেবার দু'টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন রাহুল। তাঁর দ্বিতীয় আসন ওয়ানাড় থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন- আর সাংসদ নন রাহুল গান্ধি! জেল ঘোষণার এক রাতের মধ্যেই কেন সাংসদ পদ খারিজ?

ওই বছরেই, মানে ২০১৯ সালের এপ্রিলে সুরাট পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক এবং গুজরাতের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেশ মোদির দায়ের করা একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাহুল গান্ধির মন্তব্যের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০-এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ওয়ানাড়ের লোকসভা সাংসদ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের কোলারে একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন, দেশের সব চোরের পদবি কেন মোদি!

রাহুল গান্ধি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেরলের ওয়ানাড় সংসদীয় আসনে, সিপিআই প্রতিদ্বন্দ্বী পিপি সুনীরকে ৪.৩১ লক্ষেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। নিয়ম অনুযায়ী, লোকসভা সচিবালয় সাংসদপদ বাতিলের বিজ্ঞপ্তি জারি করার সঙ্গে সঙ্গে, ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে রাহুল গান্ধির ওয়ানাড় নির্বাচনী আসনকে 'শূন্য' ঘোষণা করা হবে।

পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের জন্য আর বাকি মাত্র এক বছর। তা সত্ত্বেও, নির্বাচন কমিশনকে আগামী দিনে ওয়ানাড়ে নতুন করে উপনির্বাচন করতেই হবে কারণ, কোনও আসন ছয় মাসের বেশি খালি রাখা যাবে না। অন্যদিকে, উচ্চতর আদালত রাহুল গান্ধির সাজা বাতিল না করলে তিনি সম্ভবত আট বছরের জন্য আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

একই ঘটনা ঘটে আজম খানের সঙ্গে

রাহুল গান্ধির সাংসদ পত বাতিলের মতোই একটি ঘটনা ঘটে সমাজবাদী পার্টির বরিষ্ঠ নেতা আজম খানের সঙ্গে। ২০১৯ সালের ঘৃণাত্মক বক্তৃতার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে, ২০২২ সালের অক্টোবরে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। আজম খানকে সাংসদ/বিধায়ক আদালত তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে, যার ফলে রামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের প্রয়োজন পড়ে। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান ওই আসনে জিতেছিলেন।

নির্বাচন কমিশন ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর রামপুর আসনে উপনির্বাচন ঘোষণা করে যাতে বিজেপি জয়ী হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয়, রামপুর আজম খানের দুর্গ হিসেবে বিবেচিত হতো।

আরও পড়ুন- “সব মোদিই চোর!” দু’বছরের সাজা রাহুল গান্ধীর, জেলেই থাকতে হবে প্রধান বিরোধী নেতাকে?

সাংসদ পদ বাতিলের আইন কী?

অনুচ্ছেদ ১০২(১) এবং ১৯১(১) যথাক্রমে একজন সাংসদ এবং একজন বিধায়কের অযোগ্যতার বিচারের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সংবিধান অনুসারে, একজন সাংসদ ও বিধায়ককে তিনটি মূল পরিস্থিতিতে অযোগ্য ঘোষণা করা যেতে পারে:

ক) আর্থিক লাভের অবস্থানে গেলে, পদাধিকারের বলে ব্যক্তি যদি নিজে আর্থিক লাভ করতে থাকেন

খ) মানসিকভাবে অস্থির প্রমাণিত হলে

গ) কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত এবং দুই বা ততোধিক বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে

রাহুল গান্ধির সামনে এখন যে পথ খোলা

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুরাট আদালতের রায় বাতিল করতে কংগ্রেস উচ্চ আদালতে যেতে পারে। যদি উচ্চ আদালত সাজা স্থগিত না বা বাতিল না করে তবে রাহুল গান্ধি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতা হারাবেন।

জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে, দুই বা ততোধিক বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত একজন সাংসদ বিচারের তারিখ থেকে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন এবং কারাবাসের মেয়াদের পরে অতিরিক্ত ছয় বছরের জন্য অযোগ্যই থাকবেন।

রাহুল গান্ধি ফের সাংসদ পদ ফিরে পেতে পারেন যদি উচ্চ আদালত সাজার পরিমাণ কমিয়ে দুই বছরের নিচে করে। তবে সাজা স্থগিত, কমানো বা মামলায় খালাস না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

More Articles