৩৭১ দিন কক্ষপথে ঘুরপাক! অবশেষে বাড়ি ফিরলেন ৩ মহাকাশচারী

Astronaut Frank Rubio: নাসার মহাকাশচারী ড. ফ্র্যাঙ্ক রুবিও, রুশ মহাকাশচারী সের্গেই প্রকোপিয়েভ ও দিমিত্রি পেটেলিন গত ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে কাজাকিস্তানের কাছে এসে পৃথিবীতে নামেন।

৩৬৫ দিনে একঘণ্টা। তার থেকেও ৬ দিন বেশি। এই এতগুলো দিন পৃথিবীতে ছিলেন না তিনি। মানুষ কাজের জন্য ভিনরাজ্যে যায়, ভিনদেশে যায়। কিন্তু এই ভদ্রলোককে কর্মসূত্রে যেতে হয়েছিল একেবারে পৃথিবীর বাইরে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। মহাকাশে ৩৭১ দিন কাটানোর পরে অবশেষে ঘরের ছেলে ফিরেছেন ঘরে। তিনিই প্রথম মার্কিন মহাকাশচারী, যিনি এত দীর্ঘ সময়ে মহাকাশে থেকেছেন। এর জন্য রেকর্ডও গড়েছেন তিনি।

নাসার মহাকাশচারী ড. ফ্র্যাঙ্ক রুবিও, রুশ মহাকাশচারী সের্গেই প্রকোপিয়েভ ও দিমিত্রি পেটেলিন গত ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে কাজাকিস্তানের কাছে এসে পৃথিবীতে নামেন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে সোয়ুজ এমএস-২২ স্পেসক্র্যাফ্টে করে মহাকাশের উদ্দেশ্যে রওনা হন। যদিও মহাকাশে থাকা বর্জ্যের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেই সোয়ুজ ক্যাপসুলটির ক্ষতি হয়। অন্য একটি সোয়ুজ মহাকাশযান পাঠানো হয় তাঁদের কাছে।

আরও পড়ুন: চাঁদ নয়, মহাকাশচারী রাকেশ শর্মাকে কী বলেছিলেন ইন্দিরা?

স্বাভাবিক ভাবে সেটা ওই গন্তব্য পৌঁছতে ভালোই সময় লেগেছে। যান্ত্রিক এই অসুবিধার কারণেই ১৮০ দিনের অভিযান দীর্ঘ হয় ৩৭১ দিনের মহাকাশযাপনে। এতদিন পর্যন্ত মহকাশে দীর্ঘ সময় থাকার রেকর্ড ছিল নাসার মহাকাশাচীর মার্ক ভ্যান্ডে হেইয়ের কাছে। তবে সেই রেকর্ডকে চূর্ণবিচূর্ণ করে তাঁর চেয়েও ২ সপ্তাহ বেশি মহাকাশে কাটিয়ে এসেছেন রুবিও।

রাশিয়াকে অবশ্য এ ব্যাপারে টেক্কা দিতে পারেনি আমেরিকা। এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দিন মহাকাশে কাটানোর হিসেবে গোটা বিশ্বের মধ্যে এগিয়ে রাশিয়াই। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি সময়েই সেই রেকর্ড ঘরে তুলে ফেলেছিল রাশিয়া। আর সেই রেকর্ড অপ্রতিরোধ্য ৪৩৭ দিনের।

রুবিওদের ফেরৎ আনতে বিকল্প মহাকাশযানটি রওনা হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারি মাসে। রুশ ইঞ্জিনিয়ারেরা মনে করছেন, গত বছর শেষের দিকেই ওই মহাকাশযানটি ধাক্কা খায় মহাকাশ-বর্জ্যের সঙ্গে। যে মিশনটি ছিল ৬ মাসের, তাতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়। আদতে মহাকাশবর্জ্যের ধাক্কায় যানটির কুল্যান্ট অংশগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ওই অংশগুলি ছাড়া এতদিন কীভাবে কাজ করবে মহাকাশযানটি, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। সেই কারণেই ওই মহাকাশযানটিকে ফাঁকা অবস্থাতেই ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যে কারণে রওনা করা হয় দ্বিতীয় আরেকচি সোয়ুজ মহাকাশযানকে।

এই কয়েকটা মাস প্রতিমুহূর্তে উদ্বেগে কেটেছে রুশ ও মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলির। উদ্বেগে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ারেরাও। সত্যিই ফেরা হবে তো রুবিওদের? নাকি কল্পনা চাওলাদের মতো গল্পটা অসমাপ্ত থেকে যাবে সেখানেই। তবে সমস্ত আশঙ্কার মুখে দুয়ো দিয়ে শেষপর্যন্ত পৃথিবীর মাটিতে ফিরে এসেছেন দু'দেশের তিন মহাকাশচারী। আমেরিকার জন্য এ আনন্দ দ্বিগুণ, কারণ এর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা ঢুকে পড়েছে ইতিহাসে, গড়ে ফেলেছে নতুন রেকর্ড।

Record-breaking astronaut Frank Rubio finally home after over a year in orbit

কাজাকস্থানে মহাকাশযানটি অবতরণের পরেই আনন্দের ঢল নামে দু'দেশে। রুবিও পেশায় একজন হেলিকপ্টার চালক এবং সেনা ডাক্তার। বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি, জানিয়েছেন রুবিও। জানিয়েছেন, এক বছরের জন্য় মহাকাশে থাকতে হবে জানলে হয়তো এই মিশনে রাজিই হতেন না রুবিও। এই এক বছরে পরিবারের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে পারেননি তিনি। চার ছেলেমেয়ে মার্কিন নাভাল অ্যাকাডেমিতে প্রথম বছর কাটিয়ে ফেলেছে, তা নিজে চোখে প্রত্যক্ষ করতে পারেননি। সেই সমস্ত দিকেই এবার মন দিতে চান তিনি।

আরও পড়ুন:মহাকাশে ঘুরছে ‘দ্বিতীয় পৃথিবী’, হদিশ মিলেছে জলেরও, মিলতে পারে নতুন প্রাণের সন্ধান?

অন্য় দুই মহাকাশচারী পেটিলিন ও প্রোকোপিয়েভ পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ও পাইলট। রুবিওর মতো পেটিলিনের এটাই প্রথম মহাকাশযাত্রা। গত বছর ডিসেম্বরে কাজাকস্থান থেকে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল রুবিওদের মহাকাশযান। ফিরে এসেছে ২৭ সেপ্টেম্বর, কাজাকস্থানেই। এই সময়ের মাঝে অন্তত ৬ হাজার বার পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করেছেন রুবিওরা। পাড়ি দিয়েছেন মোট ২৫৩ মিলিয়ন কিলোমিটার।

More Articles