যৌথ খামারে শুধুই ভাত রাঁধবেন মেয়েরা?
Women Movement: মেয়েদের আমরা বরাবর দেখতে অভ্যস্ত ‘বিপ্লবীর অনুপ্রেরণা’ হিসেবে। তার সহজাত বিচরণের জায়গা রান্নাঘর, সহজাত ধর্ম পরিবার পালন।
‘শিল্পযুগ যাকে বস্তি উপহার দিল
সেই শ্রমিকগৃহিণী
প্রতিদিন জল তোলে, ঘর মোছে, খাবার বানায়
হাড়ভাঙ্গা খাটুনির শেষে রাত হলে
ছেলেকে পিট্টি দিয়ে বসে বসে কাঁদে
সেও কি শ্রমিক নয়!
আপনি বলুন মার্কস, শ্রম কাকে বলে!’
কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত গৃহশ্রমের মজুরি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন কার্ল মার্ক্স-কে। বিপ্লব- নাম ও ভাবনায় সবেতেই স্পষ্ট এক পুরুষতান্ত্রিক প্রতিচ্ছবি। রাষ্ট্রযন্ত্র সারিয়ে নেওয়ার গল্পে সবসময়ই কোদাল-কাস্তে-ছেনি হাতে এগিয়ে এসেছে বলিষ্ঠ শ্রমিক-পুরুষেরা। তারা দল বাঁধে, গান গায়, তৈরি হয় ভাঙনের পথ। এরাই বরাবর সাগর ছেঁচে এনেছে রত্ন, পাথর কেটে রাস্তা বানিয়েছে, যক্ষপুরীর খনি থেকে টেনে বার করেছে নরম সোনা। এই শ্রমশক্তির ধারক-বাহক পুরুষেরা, তারা ফসল কেটে খামার বানায়, তাদের মজবুত পেশিশ্রমেই টিকে আছে উৎপাদন, চলছে রাষ্ট্র।
‘আপনি বলুন মার্ক্স’ কবিতার শেষে কবির তাই আশঙ্কা ‘মেয়েরা বিপ্লবের সেবাদাসী হবে’। অথচ ক্রান্তদর্শী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও যক্ষপুরীর রাজাকে রাস্তায় নামিয়ে আনার জন্য বেছে নিয়েছিলেন নন্দিন-কে। মুখপানা যার সুন্দর, ধানী রঙের শাড়ি, কপাল থেকে খসে পড়ছে রক্তকরবীর মঞ্জরি। তবে কি মেয়েদের জীবন শুধু বিপ্লবীর জন্য ভাত রেঁধে বা চুল বেঁধে কাটেনি? রাষ্ট্র মেরামতির নানা পর্বে নানা প্রাথমিক চাহিদা নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল তারাও।
আরও পড়ুন- ডিয়ার পুরুষ, ‘লড়কিও কি না মে হাঁ নেহি হোতি হ্যায়’
ধর্ম ও রাষ্ট্রকে একসঙ্গে উপেক্ষা করে ইরানের প্রকাশ্য রাস্তায় অন্তর্বাস পরে হেঁটে গেল এক উদ্ধত কিশোরী। মেয়েটির নাম আহু দারিয়াই, তেহেরানে ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। মেয়েটিকে ধরে-পাকড়ে সঙ্গে সঙ্গে তো পাঠানো গেল ‘মানসিক চিকিৎসালয়ে’। তার নাকি ঠিক ছিল না মাথার অবস্থা। নারী স্ব-ইচ্ছা-চারিণী হতে শুরু করলে, অবশ্যই মাথার অবস্থা ঠিক থাকে না কারওই। মেয়েদের লজ্জা নিবারণের জন্য ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব ধারণ। তাতে ভুলচুক হলেই রয়েছে একদল সত্যিকারের ‘মোরাল পোলিস’। শরিয়তি আইন হিসাবে আবশ্যিকভাবে হিজাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয় ইরানের মেয়েদের। রাস্তা দিয়ে চলাফেরার সময়ও ঢিলেঢালা পোশাক পরার নিয়ম। ইরানের বর্তমান ধর্মগুরু আলি খামেনেই-এর কড়া নির্দেশ রয়েছে এই ব্যাপারে। এমনকী, যে মহিলারা হিজাব পরতে চাইছেন না, তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের ক্লিনিকও। এখানে বিশেষভাবে ‘কাউন্সেলিং’ করানো হবে হিজাব পরতে অনিচ্ছুক মেয়েদের। এ ধরনের চিকিৎসা নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কায় ইরানের অনেক তরুণীরা। অনেকেরই মনে করছেন, এ জাতীয় চিকিৎসাকেন্দ্র আসলে দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের আসর। রাষ্ট্র সবার আগেই আব্রু পরাতে চেয়েছে নারীর স্বাধীন দেহভাবনাকে। আবার উৎপাদনের প্রাথমিক শর্তও এই দেহশ্রম। স্বাভাবিকই এর প্রকাশ্য উন্মোচনকে বরাবরই কড়া চোখে রেখেছিল পুরুষতন্ত্রের আমলারা। উৎপাদনে অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে মেয়েদের বরাবরই আটকে রাখা হয়েছিল গৃহশ্রমে।
২০২২ সালে আরেক ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে সঠিকভাবে হিজাব না পরার অপরাধে তুলে নিয়ে যায় ইরানের নীতিপুলিশ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু ঘটেছিল তার। জানা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই চিকিৎসালয়েই মাহসার প্রতি নিদারুণ অত্যাচারের কথা জানিয়েছিলেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। হাসপাতালে মাহসার মৃতদেহের গায়ে ছিল রক্ত আর শতাধিক ক্ষতচিহ্ন। এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল ইরান। কিন্তু দু’বছর পরেও দেখা যাছে একইরকম পরিস্থিতি। হিজাব বাধ্যতামূলক হওয়ায় দলে দলে রাস্তায় নেমেছে ইরানের মহিলারা। প্রকাশ্য রাস্তায় নিজের চুল কেটে, হিজাব পুড়িয়ে ফেলে নিজেদের প্রতিবাদের কথা জানান তারা। ইরানীয় রাষ্ট্রশক্তির মনে ভয় ধরে এবং এই প্রতিবাদকে পশ্চিমি সংস্কৃতির প্রভাব বলে মনে হয় তাদের। সঙ্গেসঙ্গে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়। গণপ্রতিরোধ চলাকালীনই বিশ বছর বয়সী হাদিস নাজাফিকে গুলি খেতে হয় ছয়বার। মুখে, বুকে ও গলায়। গ্রেফতার হয় প্রায় ১২০০ সাধারণ মানুষ। ইরানীয় মেয়েদের এই প্রতিবাদ খানিকটা উঠে আসে সামাজিক মাধ্যমে। হিজাব বিরোধী প্ল্যাকার্ড-স্লোগানে মুখরিত হয় ইরানের জনপথ। কিন্তু এই নারী-আন্দোলনকে গণআন্দোলনের মাত্রা দেওয়া হয় কি? নাকি ধরে নেওয়া হয় নানা সমস্যাপ্রবণ, ভালনারেবল মেয়েদের একটি বিক্ষিপ্ত সামাজিক ইস্যু। আসলে পুরুষশাসিত বৃহত্তর সমাজে মেয়েদের আজও ‘বিপ্লবের অপর নাম মাধবীলতা’ ভেবে নিশ্চিন্ত থেকে যায় অনেকেই।
সম্প্রতি আমাদের পাশের রাষ্ট্রে ঘটে গেল আরেকটি গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের নিয়ে বাংলাদেশের কোটা সংস্কারের জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়, সরকারের অক্ষমতা ও সহিংস নীতির মুখে পড়ে তা পরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। অল্পদিনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ গণআন্দোলনের রূপ নেয়। ছাত্রজনতার নিরন্তর আন্দোলনে আওয়ামী লিগ সরকারের দীর্ঘ সাড়ে পনেরো বছরের শাসনের অবসান ঘটে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া থেকে শুরু করে সমস্ত শ্রেণির নারী পুরুষ ও অন্যান্য লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষরা এগিয়ে আসে এই আন্দোলনে। স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের এই সাধারণ অভ্যুত্থান ও রাষ্ট্রযন্ত্র বিকল করে দেওয়ার ঘটনায় খুশি হয়েছি আমরা অনেকেই। কিন্তু এই আন্দোলনে কোথাও কি এসেছে মেয়েদের মুখ?
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রথমে এসেছে নতুন করে দেশকে সাজানোর আলাপ-আলোচনা। কিন্তু এই সংস্কারসাধনে কোথায় বলা হয়েছে মেয়েদের কথা? ভাবা হয়েছে মেয়েদের জন্য সাধারণ প্রকল্প। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে ক্রমাগত ধর্ম-পরিবার ও রাষ্ট্রের বেড়াজাল বাঁচিয়ে লড়াই করে চলেছে মেয়েরা। লেবার মার্কেটে যোগদান বেড়েছে তাদের, তারসঙ্গে প্রতিনিয়ত পালন করছে পরিবার-মাতৃত্ব ও গৃহশ্রমের কর্তব্য।
কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রথম থেকেই সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ছাত্রীরা। এমনকি মেয়েরা ‘নারী কোটা চাই না’- এমন পোস্টারসম্বলিত প্রতিবাদও নজরে এসেছে। কিন্তু গণজাগরণে একাধিক পুরুষ ছাত্রনেতার নাম উঠে আসলেও একটু কষ্ট করেই খুঁজে পেতে হচ্ছে মেয়েদের নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রাফিয়া রেহনুমা। তিনি জানান, ছাত্রীদের আন্দোলনমুখী করতে তারা নানা তৎপরতা চালিয়েছেন। আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারহানা বিনতে জিগার। জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে আবাসিক হলগুলোতে কাজ করেছেন তাদের দলের নারী প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের এই ছাত্রআন্দোলনকে রাষ্ট্রবিপ্লবের রূপ ধরে নিলে তা থেকে কি করে বাদ দিয়ে ফেললাম আমরা মেয়েদের? না কি আমাদের অবচেতন মনস্তত্ত্বে এখনও বিপ্লব বলতে রয়ে গেছে পুরুষ বিপ্লবীর ছবিই?
আবার বাংলাদেশে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের’ জটলা কি আদৌ সমানাধিকার দিতে পারবে মেয়েদের? সেই নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সংবিধান সংস্কার নিয়ে। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে- যেমন ১৯(১), ১৯(৩), ২৮ (১) ও ২৮(২)–এ সর্বজনীন নীতির অধীনে নারীর সমতা এবং সর্বক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণের বিষয়টি বিস্তৃত। কিন্তু বাংলাদেশে আজও পারিবারিক ও শরিয়াতি বা ধর্মীয় আইনে বিচার করা হয় নারী সমতা ও সুরক্ষার নানা বিষয়। নানা বিভিন্নতা ও ব্যক্তিগত ধর্মীয় নীতি বাদ দিয়ে অভিন্ন ‘ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড’ প্রণয়ন করা বাংলাদেশের মহিলা সংগঠনগুলির অনেকদিনের দাবি।
আরও পড়ুন- আমার বোনেরও বর্ণমালায় ২১ শে ফেব্রুয়ারি! ভাষা আন্দোলনে অনুচ্চারিত মেয়েদের কথা
একটু পুরনো দিনে ফিরে গেলে, আমরা মনে আনতে পারি, ভাষা আন্দোলনের কথা। ১৯৪৭-১৯৫১-র সময়পর্বে বাংলাদেশের বৃহত্তর সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আন্দোলন। পূর্ব বাংলার মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার দাবিতে সক্রিয় হয়েছিলেন নারী-পুরুষ মিলিয়ে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ। কিন্তু আজও আমরা গেয়ে উঠি- ‘ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। আমরা কি দাম দিতে জানলাম না বোনের রক্তের? মাতৃভাষা-মাতৃঅঞ্চলকে বিরাট মহিমায় স্থাপন করার পাশাপাশি আমরা মেয়েদের প্রতিচ্ছবি সীমাবদ্ধ রাখলাম সেই মাতৃত্বেই। পর্দা ও রান্নাঘরের বেষ্টনী ছাড়িয়ে মেয়েরা এসময় বেরিয়ে এসেছিল দলে দলে। প্রতিভাদীপ্ত রাজনৈতিক বোধ ও আত্মত্যাগে তারা কিছুতেই কম যায়নি। প্রথমে তাঁরা সোচ্চার হন লেখনী প্রচারের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে এগিয়ে ছিল তৎকালীন ‘বেগম’ পত্রিকা। প্রবন্ধ, চিঠিপত্র, সম্পাদকীয়- ইত্যাদি প্রকাশের মাধ্যমে ভাষার প্রশ্নে তাঁদের মনোভাব ফুটিয়ে তোলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বেগম আফসারুন্নেসা, মোহেসনা এবং নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের মহিলা সংগঠনের সম্পাদিকা রূকিয়া আনোয়ার। বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার দাবিতে যে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়, তার স্বাক্ষর প্রদানকারী নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আনোয়ারা খাতুন, লিলি খান, লীলা রায়, রুকিয়া আনোয়ার প্রমুখ।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারের সমস্ত বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ছাত্রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেছিল মেয়েরাও। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী হিসেবে আমরা পাই শাফিয়া খাতুন, লায়লা শামাদ, শামসুন নাহার প্রমুখ ছাত্রীর নাম। ধারাভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর ছাত্রদের সঙ্গে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে রাস্তায় নামেন মেয়েরা। যার মধ্যে ছিলেন সুফিয়া ইব্রাহিম, শাফিয়া, সারা তৈফুর প্রমুখ। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রজনতার ওপর সরকারের গুলিবর্ষণের পর প্রতিবাদ আরও জোরালো হয়। নানাস্থানে হতে থাকে প্রতিবাদ সভা। ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আজিমপুর কলোনির মেয়েরা ডেকেছিল সক্রিয় প্রতিবাদ সভা। কিন্তু ইতিহাসের শুধুই লিপিবদ্ধ রইল ভাষা আন্দোলনের পুরুষ শহিদদের কথা।
রক্তকরবীতে এইজন্যই কি রবীন্দ্রনাথ বারবার এনেছিলেন নন্দিনীর সুন্দর মুখের প্রসঙ্গ? আসলে মেয়েদের আমরা বরাবর দেখতে অভ্যস্ত ‘বিপ্লবীর অনুপ্রেরণা’ হিসেবে। তার সহজাত বিচরণের জায়গা রান্নাঘর, সহজাত ধর্ম পরিবার পালন। রাষ্ট্রের প্রাথমিক চিন্তা তাঁর পোশাক নিয়ে। ভেনিজুয়েলায় রাষ্ট্রনেতা নিকোলাস ম্যাডুরোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সশস্ত্র ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়েছিল একা একটি অচেনা মেয়ে। তার দিকে ছুড়ে দেওয়া হয় কাঁদানে গ্যাস। স্থানীয়রা তাকে চেনে ‘ল্য দামা’ বলে। কই? তাকে নিয়ে তো খবর হল না কোনও! বাড়িতে গোরা সাহেবের সৈন্যরা ঢুকলে বঁটি নিয়ে তেড়ে এসেছিল এক ‘বঙ্গবালা’। তাঁর নাম কি আমরা ইতিহাসে পড়েছি? আসলে লজ্জার বদলে বিপ্লবকে নারীর ভূষণ হিসেবে মেনে নিতে আমাদেরই কৌম চেতনায় আঘাত লাগে। আজন্ম প্রতিবাদকে নীরবে নিজের মধ্যে মেরে ফেলে তাই ভাইদের জন্য চিঠি রেখে যান মমতাময়ী দিদি অন্নদা। পেলব মমতার আবরণে বরাবর মেয়েদের মুড়ে রেখেছে সমাজ-সাহিত্য। কাস্তেসমেত নারী শ্রমিকের রুক্ষ হাত স্থান পায়নি তাতে। আসলে শ্রমই যে মুক্তি, বিপ্লবের প্রথম সংগঠন। মেয়েকে বিপ্লবীর বর্ম পরিয়ে দিলে টলে পড়ে গোটা সমাজের অবয়ব। এ কি ইতিহাস লেখনীর ভুল না আমাদের মধ্যে জমে থাকা পুরুষতন্ত্রের অবশেষ? তাহলে কি যৌথ খামারে শুধুই ভাত রাঁধবেন মেয়েরা? পৃথিবী স্বর্গরাজ্য হওয়ার পর অপেক্ষা করবেন পুরুষ বিপ্লবীর ঘরে ফিরে আসার?