শেষ জীবিত যাত্রী ছিলেন ভারতেরই বাসিন্দা, টাইটানিক নিয়ে যে তথ্য অজানা অনেকেরই

Titanic : টাইটানিকের শেষ জীবিত যাত্রী ছিলেন নাকি ভারতের বাসিন্দা

সেই অমোঘ দৃশ্য। আটলান্টিকের বরফগলা জলে ভাসছে দরজার একটা পাল্লা। সেটুকুকেই খড়কুটোর মতো আঁকড়ে রয়েছেন নায়িকা। নায়ক জ্যাকও লুটোচ্ছে প্রাণপণ ওই ভাসমান পাল্লা আঁকড়েই। পরে অবশ্য একটি স্পিডবোট এসে নায়িকা রোজকে বাঁচায় তবে নায়ক হারিয়ে যান অতল গভীরেই। ছবির নাম ‘টাইটানিক’। ১৯৯৭-এ মুক্তি প্রাপ্ত হলিউডি এপিক। যা কেবল ইংরেজি ভাষাই নয় ঘোর ধরায় অন্যান্য ভাষাভাষীদেরও। যদিও সিনেমা বানাতে গেলে দৃশ্যের পর দৃশ্য সাজাতে হয়। তাতেই কখনও উঠে আসে ট্র্যাজিক পরিণতি। যা এসেছিল নায়ক জ্যাকেরও। ১৪টি অস্কার পাওয়া ওই ছবির পরিচালক জেমস ক্যামেরন নিজেই জানান, জ্যাকের মৃত্য না দেখালে ছবিটা ঠিক জমত না। তবে এ ট্রাজেডি যে কেবলমাত্র সিনেমার প্রয়োজনে তা বলা ভুল হবে, ‘টাইটানিক’ নামটি আজও মস্ত বিভীষিকা। আর তা কেবল সিনেমার জন্য নয়, বাস্তব ঘটনার জন্যই।

১১০ বছর আগেকার সেই ইতিহাস, আর তাতে বেশ খানিকটা রোমান্স, খানিকটা মশলা দিয়ে বানানো হয় সিনেমা। সিনেমার হাত ধরেই যে আবার নতুন করে প্রচারের আলো পেয়েছিল এ ঘটনা তা অবশ্য অস্বীকার করা যায় না। আর আলোচনার কেন্দ্রে আসতেই নানারকম অভ্যন্তরীণ তথ্যও উঠে আসে এ ঘটনা থেকে।

এরই মধ্যে আবার উঠে আসে নতুন এক ‘ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব’, আদৌ ডুবেছিল ‘টাইটানিক’ নাকি অন্য কিছু রয়েছে এর অন্তরালে? এ প্রশ্ন নিয়েও বিস্তর আলোচনা চলে। পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে শিরোনামে। জানা যায়, ডুবন্ত টাইটানিকের শেষ জীবিত যাত্রী ছিলেন নাকি ভারতের বাসিন্দা। নাম রুথ বেকার। যদিও এ দেশের নাগরিক তিনি ছিলেন না, কিন্তু টাইটানিক হিস্ট্রি সোসাইটির একজন ইতিহাসবিদ ডন লিঞ্চ সম্প্রতি প্রকাশ্যে আনেন, ভারতেই জন্ম হয়েছিল রুথ বেকারের। ১৯৭৫ সালে প্রথম রুথের জীবন সম্পর্কে তথ্য হাতে পান গবেষক। ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল যখন টাইটানিক দুর্ঘটনাটি ঘটে তখন জাহাজেই ছিলেন রুথ। বয়স মাত্র ১২ বছর। সেই থেকে আমৃত্যু বয়ে বেড়িয়েছেন সেই ভয়াবহ দিনের ঘটনাকে। ১৯৯০ সালে ৯০ বছর বয়সে মারা যান রুথ বেকার।

আরও পড়ুন : কোনওদিন ডোবেইনি আসল টাইটানিক! আড়ালে ছিল কোন ষড়যন্ত্র?

ভারতের সঙ্গে গভীর যোগসূত্র ছিল রুথের। আদতে আমেরিকান হলেও ভারতেই বড় হয়ে ওঠেন তিনি। রুথ বেকারের বাবা অ্যালেন ওলিভার বেকার কাজ করতেন ভারতের একটি মিশনারিতে। বাবার কর্মসূত্রে ১৮৯৯ সালে ভারতেই তাই জন্ম হয় রুথের। প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয় কোদাইকানালের একটি বোর্ডিং স্কুলে। শুধু রুথই নয়, তাঁর দুই ভাইবোনেরও জন্ম হয়েছিল ভারতেই। পরবর্তীকালে ১৯১২ সালের ৭ মার্চ মাসে ভারত ছেড়ে ফিরে যান তাঁরা। যাত্রা শুরু করেন জাহাজপথে। মাদ্রাজ থেকে লন্ডন তারপর সেখান থেকে ১০ এপ্রিল ট্রেনে চেপে পৌঁছন সাউদাম্পটনে। এরপরই আসে সেই অভিশপ্ত রাত। ১২ এপ্রিল শুরু হয় তাঁদের টাইটানিকে যাত্রা। আরও দুদিন পর ১৪ এপ্রিল দুর্ঘটনায় হারান পরিবারের সবাইকে। ভাগ্যের ফেরে একাই সেদিন বেঁচে যান রুথ।

‘টাইটানিক’ নিছক দুর্ঘটনা নাকি জাহাজডুবির কোনও ছক, উত্তর মেলেনি এমন আরও অনেক প্রশ্নের। কিন্তু যা ঘটার তা তো ঘটে গিয়েছ কবেই। রুথের মুখেই কেবল থেকে গিয়েছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত টাইটানিক দুর্ঘটনার বিবরণ। জানা যায়, তাঁর এই বিস্তারিত বর্ণনাগুলি থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে জেমস ক্যামেরন তাঁর সিনেমার একাধিক সংলাপ তৈরি করেছিলেন। ‘রোজ’ চরিত্রটির মধ্যেও যেন রুথের ছায়াই তুলে ধরতে চেয়েছেন পরিচালক। তাই রুথের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতাকে হুবহু সংলাপ হিসেবে বসিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী গ্লোরিয়া স্টিউওয়ার্ট-এর মুখে। সত্য ঘটনায় খানিক মশলা পরিচালক মিশিয়েছিলেন ঠিকই তবে আসল ইউএসপি ছিল রুথের বলা বাস্তবটুকুই।

More Articles