আরজি কর মর্গ দুর্নীতি: গভীর রাতে যে সব ভয়াবহ কুকর্ম চলত মর্গে!
RG Kar Morgue Scam: অত রাতে কীভাবে কেন কারা মর্গে ঢুকতেন? অত রাতে মর্গে কী এমন কাজ?
আরজি কর হাসপাতার প্রতিটি ইঁট-পাথরে অজস্র রহস্য। তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পর ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে এমন সব ঘটনার কথা যা শুনলে শিউরে উঠতে হয়! অজস্র সাধারণ মানুষের ভরসার সরকারি হাসপাতালের অন্দরে যে কী কী চলত তা অকল্পনীয়। এর আগে, ইনস্ক্রিপ্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল নেক্রোফিলিয়া নিয়ে। শোনা গিয়েছিল, ধর্ষণে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর পর ধর্ষণ করে। মৃতের সঙ্গে সহবাস, যৌন সম্পর্ককেই নেক্রোফিলিয়া বলে। এখন জানা যাচ্ছে, আরজি করের মর্গে মৃতদেহ নিয়ে এমন নানা কুকীর্তিই চলত, যার সঙ্গে একা সঞ্জয় নন, আরও অনেকেই যুক্ত।
ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের অবাধ আনাগোনা ছিল হাসপাতালে তা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সহজেই বোধগম্য। মেডিক্যাল কলেজের মর্গেও সঞ্জয়ের অবাধ যাতায়াত ছিল। অন্যদিকে, মৃতদেহ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে গ্রেফতারও হয়েছেন তিনি। এবার জানা যাচ্ছে, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় ছাড়াও দুর্নীতির সিন্ডিকেটের বিভিন্ন মাথাদের অবাধ আনাগোনা ছিল মর্গে। এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এই আনাগোনা বাড়ত রাত বাড়লেই। অত রাতে কীভাবে কেন কারা মর্গে ঢুকতেন? অত রাতে মর্গে কী এমন কাজ?
আরও পড়ুন- চড়া দামে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, গ্লাভস, তুলো, প্রস্রাবের ব্যাগ বিক্রি করেছেন সন্দীপ ঘোষ?
সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি, ধৃত সঞ্জয় রায়ের মোবাইল থেকে অনেক ভিডিও উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ভিডিওই পর্নোগ্রাফি এবং বিকৃত পর্নোগ্রাফি। তাছাড়া অনেক ভিডিওতে আরজি করের মর্গের ভিতরের দৃশ্যও রয়েছে। ওই ভিডিওগুলিতেই দেখা গেছে মৃতদেহের সঙ্গে সঞ্জয়ের অন্তরঙ্গ দৃশ্য। সঞ্জয় নেক্রোফিলিয়ায় আক্রান্ত এমনটা তদন্তে আগেই উঠে এসেছে। তাই কি এমন ভিডিওর আধিক্য বেশি? তদন্তকারীরা বলছেন, শুধুই নিজের বিকৃত কামের জন্য এই ভিডিওগুলি নাও রাখা হতে পারে। মরদেহ নিয়ে পর্নোগ্রাফির কোনও চক্রও এখানে থেকে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা।
কলকাতা পুলিশ যখন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে তার পরপরই পর্নোগ্রাফির ভিডিও উদ্ধার নিয়ে পুলিশ কিছু তথ্য প্রকাশ করে। ওই ভিডিও মধ্যে মৃতদেহের সঙ্গে সহবাসের নানা দৃশ্যও ছিল। সিবিআই বলছে, যে ভিডিওগুলি উদ্ধার হয়েছে, তার বেশ কিছু আরজি করেরই মর্গে তোলা! তাহলে এই ভিডিওগ্রাফি করল কারা? দুর্নীতির সিন্ডিকেটই কি মৃতদেহের সঙ্গে যৌনতার ভিডিও তুলে তা বিদেশে চড়া দামে বিক্রি করত? আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ধৃত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধেও মৃতদেহ কেনাবেচায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। অর্থাৎ খোদ অধ্যক্ষও মৃতদেহের ব্যবসাতে যুক্ত এটি প্রমাণিত।
জানা গিয়েছে, মর্গের কত দেহ এসেছে, বেরিয়েছে তার হিসেবে অত্যন্ত গরমিল রয়েছে। ২০২১ সাল থেকে এই গরমিলের শুরু। প্রতি অর্থবর্ষেই অন্তত ৬০-৭০টি করে দেহের হিসাব পাওয়া যায়নি। আর দেহাংশ এবং কঙ্কাল নিয়ে গরমিল তো আকাশছোঁয়া। কোন দেহের, দেহাংশের, কঙ্কালেও ঠিকঠাক হিসেবই নথিভুক্ত নেই মর্গের খাতায়। ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান প্রবীর চক্রবর্তীর কাছে এই গরমিল নিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন- আরজি করের তরুণীকে হত্যার পর ধর্ষণের অভিযোগ! কী এই বিরল অসুখ ‘নেক্রোফেলিয়া’?
এখানে উল্লেখ্য, মর্গের প্রধান ডোমকে অন্যত্র সরয়ে দিয়েছিলেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষই! কোনও বদলির কাগজপত্র ছাড়া মৌখিক নির্দেশে অন্য বিভাগে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের এক ডোমকে এখানে নিয়োগ করা হয়। কেন এই বদল? নিজের হাতে থাকা ডোমকে নিয়োগ করে কোন কোন দুর্নীতি করছিলেন সন্দীপ এবং তাঁর লবির লোকজন? নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি দিনই সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে মর্গ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর এই মর্গের সব ঘরের চাবিই মর্গের মূল কার্যালয়ে জমা থাকে। কেবল মূল দরজার চাবি থাকে প্রধান ডোমের কাছে। রাতে কোনও মৃতদেহ এলে তা রাখার জন্য মর্গের পিছনের দরজা খোলা হয় যার চাবি রাখা থাকে অন্য এক কর্মীর কাছে। অথচ রাতে এই মর্গেই সন্দীপের লবির লোকজনের অবাধ যাতায়াত ঘটেছে, তারা চাবি পেলেন কীভাবে? তাহলে সন্দীপ-নিযুক্ত প্রধান ডোমের কি এইটাই কাজ ছিল?
মর্গে মদের আসর বসত বলেও জানিয়েছেন সেখানের কর্মীদের অনেকে। চুনোপুঁটিদের প্রতিবাদ সাজে না, কারণ তাতে বদলি বা চাকরি যাওয়ার হুমকি ধেয়ে আসে। ফলে মর্গে যে চরম নৈরাজ্য চলত তাতে সেই অর্থে বাধা দেওয়ার কেউই ছিল না কারণ খোদ মাথাতেই ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। মর্গে কারা কারা ঢুকত, রাতে চাবি নিয়ে ৪০টির বেশি কোল্ড চেম্বার রাতে কারা কীভাবে খুলত সেই প্রশ্ন উঠছে! সেই সময়েই কি মৃতদেহ বের করে যৌনতা করে তার রেকর্ড করা হতো? এই সমস্ত অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারী অফিসাররা।