মানুষ আর শিম্পাঞ্জির মিলনের ফল! ১৯২০ সালের যেভাবে তৈরি হয়েছিল হিউম্যানজি!

Humanzee : রাশিয়ান জীববিজ্ঞানী লিয়া ইভানোভিচ সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ উপায়ে হিউম্যানজি তৈরির চেষ্টা করেছিলেন।

বিবর্তনের দীর্ঘ পথ হেঁটে এসেছে আধুনিক মানুষ। বানরজাতিকে নিজেদের পূর্বপুরুষ ভাবতেও এখন অবাক লাগে। তবে বিবর্তনের সেই সময়কাল থেকে এতখানি দূরত্বে এসে মানুষই কিন্তু একদা স্বপ্ন দেখেছে মানুষ আর শিম্পাঞ্জির হাইব্রিড পশু তৈরির। এই হিউম্যান-শিম্প হাইব্রিডের নামও ভাবা হয়েছিল, 'হিউম্যানজি'। শুনতে যতই অদ্ভুতুড়ে, বিজ্ঞানের খেয়াল মনে হোক না কেন, হিউম্যানজি গড়ার প্রচেষ্টা নেহাত কম করা হয়নি।

রাশিয়ান জীববিজ্ঞানী লিয়া ইভানোভিচ সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ উপায়ে হিউম্যানজি তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তবে নৈতিক কিছু কারণ এবং বানরের বীর্যের অভাবের কারণে হিউম্যানজি তৈরি করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু নানা প্রতিবেদন থেকেই জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে 'শিউম্যান' অর্থাৎ শিম্পাঞ্জি আর হিউম্যান ভ্রূণ তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে। এরই মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। খবর ছড়িয়ে পড়েছিল সেবার, হাইব্রিড হিউম্যান-শিম্প জন্মগ্রহণ করেছে। বিবর্তন বিষয়ক মনোবিজ্ঞানী গর্ডন গ্যালপ ২০১৮ সালে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড সংবাদপত্র দ্য সানকে বলেছিলেন, এই হাইব্রিড হিউম্যানজি ১৯২০-র দশকে ফ্লোরিডার অরেঞ্জ পার্কের একটি প্রাইমেট গবেষণা কেন্দ্রে জন্মগ্রহণ করেছিল। তবে তাকে পরে স্বেচ্ছামৃত্যু দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- বিবর্তনের টাইমমেশিন আবিষ্কার! চিকিৎসায় নোবেলজয়ী প্যাবোর গবেষণা বদলে দেবে ইতিহাস

গর্ডনের দাবি, একটি স্ত্রী শিম্পাঞ্জির দেহে একজন মানুষের বীর্য প্রবেশ করিয়ে দিয়ে গর্ভধারণ করানো হয়েছিল। কোন মানুষ এই বীর্য দান করেছিলেন তা গোপন রাখা হয়। এই গর্ভাবস্থা স্থায়ী হয় এবং পূর্ণ মেয়াদের পরে শাবকের জন্মও হয়! তবে কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতেই বিজ্ঞানীরা এই গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে নৈতিকতার বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ওই শিম্পানি এবং মানুষের শিশুটিকে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথে নিয়ে যাওয়া হয়।

একজন মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির মধ্যে মিলন শুক্রাণু ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে হাইব্রিড শাবক প্রসব সম্ভব কিনা তা অবশ্য এখনও অস্পষ্ট। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন যে, মানুষের পূর্বপুরুষ এবং শিম্পাঞ্জিরা ৪ মিলিয়ন বছর আগে আন্তঃপ্রজনন করতে পারত। মানুষের শেষ পূর্বপুরুষ ৬-৭ মিলিয়ন বছর আগেও বেঁচে ছিল। তবে শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের মধ্যে X ক্রোমোজোমের দৃশ্যত সংক্ষিপ্ত ফারাক আছে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এই ঘটনাটিকে ব্যাখ্যাও করেছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন- দু’পেয়ে প্রথম পাওয়া গিয়েছিল ভারতেই, উঠে এল যে চমকপ্রদ তথ্য

শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের সঙ্গে অনুরূপ জিনগত পার্থক্য সহ অন্যান্য প্রাণী - যেমন ঘোড়া এবং জেব্রারও শাবক উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। যদিও পরবর্তীকালে দেখা গেছে এই শাবকরা বংশ বিস্তারে অক্ষম। ভ্রূণ তৈরি করার জন্য জেনেটিক্যালি একই রকম হলেই যে হাইব্রিড করতেই হবে, তাই বা কেন? মানুষের সঙ্গে অন্য প্রাণীর হাইব্রিড ঘটানোর ফলে যে যে নৈতিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দেবে, তার ফল কেনই বা একজন পশুকেও ভুগতে হবে? এই সব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চানি হয়তো বিজ্ঞানীরাও। তাই হাইব্রিড হিউম্যানজি তৈরির চেষ্টাটিও গেছে অতলে।

More Articles