রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আসলে জিতছে কি আমেরিকাই?
প্রায় মাস দেড়েক হয়ে গেল, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ যেন শেষ হতেই চাইছে না। ইউক্রেনের মতো একটি ছোট রাষ্ট্রের ওপর রাশিয়ার মতো একটি সুপারপাওয়ারের আক্রমণ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির দাঁতে দাঁত চেপে পুতিনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, ইউক্রেনের মানুষের আত্মমর্যাদা এবং জন্মভূমির প্রতি অগাধ ভালবাসা- সব মিলিয়েই এই যুদ্ধের আখ্যান নির্মিত হলো। তবে, এই লড়াইয়ে আসল জয় হলো কার? পুতিনের সুপারপাওয়ারের, নাকি ইউক্রেনের হার না-মানা মনোভাবের? ওয়াকিবহালরা বলেন, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধে যারই জয় হোক না কেন, আসলে জয়লাভ করল কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্র-সরবরাহকারী দেশগুলোই।
পশ্চিমা বিশ্বের এই সমস্ত দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে সাহায্য করছে। রাশিয়ার আক্রমণ মাথাচাড়া দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা কিন্তু ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র সরবরাহ ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু এই অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট, অ্যান্টি-আর্মর সিস্টেম, উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ড্রোন, হেলিকপ্টার, হাউটজার, রাডার, ইত্যাদি দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কী লাভ? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই বলেছে, তারা অতিরিক্ত ৮০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র এবং গোলাবারুদ পাঠাবে ইউক্রেনে। এছাড়াও অন্যান্য নিরাপত্তা-সহায়তা পাঠানোর ব্যাপারেও আশ্বাস দিয়েছে তারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র এবং অংশীদাররা ইউক্রেনকে যে অস্ত্র সরবরাহ করেছে, তা রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।' কিন্তু, তারা কি শুধুমাত্র সাহায্যের জন্যই এত কিছু করল? এই ৫০ দিনের যুদ্ধে তাদের কি কোনও লাভ সত্যিই ছিল না?
২৪ ফেব্রুয়ারি, রাশিয়ান বাহিনী যখন সীমানা অতিক্রম করে ইউক্রেনে প্রবেশ করল এবং ইউক্রেনে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করল, সেই সময় থেকেই ইউক্রেনের সঙ্গে সখ্য শুরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাতে ইউক্রেন পরাজিত না হয়, তার জন্য কিয়েভকে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সামরিক সহায়তা সরবরাহ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্টিংগার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট সিস্টেম, জ্যাভলিন অ্যান্টি-আর্মর সিস্টেম, সুইচব্লেড ড্রোন, এয়ার সার্ভিলেন্স রাডার, এমআই১৭ হেলিকপ্টার, ১৫৫ মিলিমিটারের হাউইটজার ইত্যাদি অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন হয়ে উঠল স্বয়ংসম্পূর্ণ।
আরও পড়ুন: বুলিই সার, জেলনস্কির পাশে দাঁড়ানোর বেলায় কেন ঠুঁটো জগন্নাথ সবাই!
কার লাভ, কার ক্ষতি?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একা নয়, ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এল কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, তুরস্ক এবং ইতালিসহ পশ্চিমা বিশ্বের ৩০টি দেশ। তাদের দেশের রাষ্ট্র-সমর্থিত এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো যে ধরনের অস্ত্র তৈরি করতে পারে, সেই সমস্ত অস্ত্র দিয়ে তারা সাহায্য করল ইউক্রেনকে। কিছু ইউক্রেনীয় প্রতিবেশী, যেমন পোল্যান্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য নিজস্ব সামরিক হার্ডওয়ার পাঠাল কিয়েভে। যুদ্ধ হলো ঠিক সময়মতো, নিহত হলো হাজার হাজার মানুষ, লক্ষ লক্ষ মানুষ হলেন বাস্তুচ্যুত, ধ্বংস হলো একাধিক শহর, ক্ষতি হলো দু'টি দেশেরই।
অস্ত্র এবং গোলাবারুদ কেনার জন্য ইউক্রেনকে নগদ সহায়তাও পাঠাল কিছু দেশ। ৭ এপ্রিল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৫৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিল ইউক্রেনের জন্য। এই ৫৪৩ মিলিয়ন ডলার মিলিটারি সাহায্যের প্রতিশ্রুতির পরে ইউক্রেনের জন্য এই সাহায্যের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াল ১.৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অঙ্কে। এছাড়াও, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়াও, কিয়েভের সরকারকে রক্ষা করতেও ইতিমধ্যেই এগিয়ে এসেছে পশ্চিমা বিশ্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিমধ্যেই পশ্চিমা সামরিক জোট অর্থাৎ, ন্যাটোকে কাজে লাগানো শুরু করেছেন। ইউক্রেন সরাসরিভাবে তাদের সদস্য না হলেও, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ন্যাটো। তবে, পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো যে ইউক্রেনকে এতটা সাহায্য করছে, তাতে এই দেশগুলির লাভ কোথায়?
এসবের আগে সবথেকে বড় প্রশ্নটা হল, এই সমস্ত বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের জোগান কোথা থেকে আসে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের কথা বলতে গেলে, এই দু'টি দেশের সামরিক অস্ত্র তৈরির এবং জোগান দেওয়ার প্রধান উৎস হল এই দু'টি দেশের একাধিক বেসরকারি অস্ত্র-নির্মাতা কোম্পানি। সাধারণত এই দু'টি দেশ বাইরের দেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করে না। যখন এদের মধ্যে কোনও একটি সরকার সামরিক সহায়তা ঘোষণা করে, তখন গৃহীত ব্যবস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হয়ে ওঠে প্রতিরক্ষা। যে-সমস্ত সংস্থাগুলো ওই দেশের জন্য অস্ত্র তৈরি করে, তাদেরকে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে অতিরিক্ত অস্ত্র তৈরি করার বরাত দেওয়া হয়। সেই অস্ত্র সরাসরি চলে যায় ওই সুবিধাভোগী দেশের কাছে।
আরও পড়ুন: অস্ত্রেও রাশিয়াকে টেক্কা, ‘চাণক্য’ জেলেনস্কির কূটবুদ্ধির জোরে এগিয়ে ইউক্রেন
অন্যদিকে, ওই সুবিধাভোগী দেশটিকে ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে সুদসমেত ওই ঋণ পরিশোধ করতে হয়। সুদের পরিমাণ মোটামুটি বিশ্বমানের সুদের পরিমাণের সমান থাকে, অর্থাৎ মূল পরিমাণের সর্বাধিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে, যদি জাপান থেকে ঋণ নেওয়া হয় তাহলে আরও দীর্ঘ পরিশোধের সময়সীমা দেওয়া হয় জাপান সরকারের তরফ থেকে। তবে চিনের ক্ষেত্রে এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা মাত্র ১৫ বছর। এই কারণেই এই ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে, চিন ভাল বিকল্প কখনওই নয়। অন্যদিকে, যদি কোনও সুবিধাভোগী দেশ ওই ঋণ পরিশোধে অপারগ হয়, তাহলে ঋণদাতা সরকার তার দেশীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিক্ষোভের সম্মুখীন হতে পারে। ওই দেশের করদাতারা জিজ্ঞাসা করতে পারেন, কেন আমরা অন্য দেশকে অস্ত্র দেব এবং তাদের দেশকে রক্ষা করব?
কিন্তু, এই অস্ত্র দান এবং ইউক্রেনের সুরক্ষা, এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাভ কোথায়? আসলে রাষ্ট্রসংঘের আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা যুক্ত হতে চায় না। সেই আলোচনায় থেকে অনেক দেশ অনেক দিক থেকে বিরোধিতা করে। পাশাপাশি, রাষ্ট্রসংঘের জোটে সাহায্য করা হলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রথম বিশ্বের দেশের কাছে সুদ আদায় সমস্যার কাজ হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে যখন ইউক্রেনের দিকে অনেক দেশ সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, সেখানেই নিজেদের অবদান রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই অতিরিক্ত সুদের পরিমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের মূল কারণ। তবে, এক্ষেত্রে একটা সমস্যা রয়েছে। যদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে একেবারে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠেন এবং তিনি ইউক্রেন থেকে নিজেদের সেনা না সরান, তাহলে কিন্তু আমেরিকার অস্ত্রভান্ডার অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনিতেই, সোভিয়েত ইউনিয়নের পূর্ব সদস্য বেশ কিছু দেশ রাশিয়ার নাগপাশ থেকে বেরিয়ে এসে পশ্চিমা বিশ্বকে আপন করে নিতে শুরু করেছে। এই বিষয়টিও রাশিয়া খুব একটা ভাল চোখে দেখেনি। পাশাপাশি সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের মতো দু'টি দেশ ন্যাটোর সঙ্গে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছে। এই বিষয়টিও পুতিনের জন্য একটি বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যে যতই বলুক না কেন, যে সমস্ত দেশ অস্ত্র তৈরি করতে পারে তাদের কাছে যুদ্ধ অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবথেকে বড় অস্ত্র নির্মাতা এবং অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। অন্যদিকে, ঠিক দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়া। সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল অস্ত্রভান্ডার এবং অস্ত্র রপ্তানির নিরিখে রাশিয়ার অংশীদারিত্ব মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বিশ্বের সবথেকে বড় দশটি অস্ত্র নির্মাতা সংস্থার মধ্যে পাঁচটি কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব। এই মার্কেটে সবচেয়ে বড় সংস্থাটি হলো লকহিড মার্টিন, এবং এই সংস্থাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সংস্থা।
অনেকেই মনে করছেন, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার পরে এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। এর আগেও কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রপ্তানি খুব একটা কম ছিল না। রাশিয়ার হামলার পরে অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ অবশ্যই বেড়েছে, কিন্তু ইউক্রেনে এর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র রপ্তানি করত। পুরনো পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে ৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র কেনার অনুমতি দিয়েছিলেন। ট্রাম্পের সবুজ সংকেতের পর ২০১৮ সালে এই অস্ত্র সরবরাহের বরাত দেওয়া হয় লকহিড মার্টিন কোম্পানিকে। ইউক্রেনে পাঠানো হলো জ্যাভলিন মিসাইল। সেই সময়ে ওয়াকিবহালরা ইউক্রেনকে সতর্ক করেছিলেন, এই পদক্ষেপ কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধের পন্থা গ্রহণে বাধ্য করবে। কিন্তু তার পরেও লাগাতারভাবে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠিয়ে গিয়েছে আমেরিকা। এমনকী, জো বাইডেন আসার পরেও অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত থেকেছে। বছরদুয়েক আগে থেকেই এই অস্ত্র সরবরাহের পরিমাণ যেন আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। পুতিনের আশঙ্কা আরও বাড়তে থাকে। সেই সময়েই ইউক্রেনকে সতর্ক করেছিলেন পুতিন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পুতিনের সতর্কবাণীকে তেমন একটা আমল দিতে চায়নি তৎকালীন ইউক্রেন সরকার। যার ফল ছিল অবশ্যম্ভাবী।
সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে
ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে যে স্ট্র্যাটেজিক বাফার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার সাক্ষী বিশ্ব এর আগেও একবার হয়েছিল। ২০০৮ সালে জর্জিয়া-রাশিয়া যুদ্ধের সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জর্জিয়াকে অস্ত্র সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। রাশিয়া আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য। কিন্তু পুতিনের হুঁশিয়ারিকে কোনও তোয়াক্কা না করেই জর্জিয়াকে অস্ত্রসাহায্য করেন জর্জ বুশ। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, যদি রাশিয়ার কারণে জর্জিয়ায় কোনও যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে তার সম্পূর্ণ মোকাবিলা করবে ন্যাটো। এখানে বলে রাখা ভাল, জর্জিয়া কিন্তু ইউক্রেনের মতোই ন্যাটোর সদস্য নয়।
এই অস্ত্রের অতিরিক্ত চালানের ফলে জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাসভিলি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে উদ্যত হয়ে ওঠেন। ঠিক এরকমই একটি ঘটনা ইউক্রেনেও এর আগে ঘটেছিল। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ডনবাশ অঞ্চলে এরকম একটি সামরিক অভিযান চালানো হয় ইউক্রেন সরকারের তরফ থেকে। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারি মাসেও এরকমই একটি অভিযান হয় ওই একই অঞ্চলে। যার ফলে ক্ষুব্ধ হন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নয়ের দশক থেকেই জর্জিয়ার ওই এলাকাটি বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত। সেই এলাকায় রাশিয়ান শান্তিরক্ষা বাহিনীর কর্মীদের নির্বিচার হত্যা পুতিনকে পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য করে। কিন্তু, জর্জিয়া রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযানে নামেনি আমেরিকা। পরিবর্তে, তারা শুধুমাত্র জর্জিয়াতে অস্ত্রসাহায্য করে। যে ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখলাম ইউক্রেনে।
লাভের গুড় যারা খেল
অস্ত্র তৈরি এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেন শুধুমাত্র বেসরকারি কোম্পানিগুলির ওপরেই নির্ভরশীল থাকে। এই দু'টি দেশে কোনও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত অস্ত্র নির্মাণকারী সংস্থা নেই। তাই, এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনের লাভের পরিমাণ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তারা কীভাবে লাভ করে এবং তারা কীভাবে এই অস্ত্র রপ্তানির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়, সেই বিষয় নিয়ে এখনও পরিষ্কার কোনও ধারণা নেই। তবে ওয়াকিবহালরা মনে করেন, যে দেশে তারা অস্ত্র পাঠাচ্ছে, সেই দেশ থেকে আসা সুদের অঙ্কটাই তাদের কাছে লাভ। আর এই সুদের অঙ্কটাও কিন্তু খুব একটা কম কিছু নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কিছু দেশ এমন আছে, যারা যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে আয় করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হোক কিংবা জার্মানি এবং রাশিয়ার যুদ্ধ, যুদ্ধে ইন্ধন জোগাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জুড়ি মেলা ভার। রাশিয়া এবং জার্মানির যুদ্ধে তারা দু'টি দেশকে পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য বাধ্য করেছিল, যার ফলে ২৫ মিলিয়ন রাশিয়ান নাগরিককে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল ওই যুদ্ধে। অন্যদিকে, জার্মানির ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ছিল ৭ মিলিয়ন। কিন্তু, যে দেশগুলো অস্ত্রসাহায্য করেছিল, তাদের কিন্তু কিছুই ক্ষতি হলো না, তারা শুধুমাত্র লাভের হিসেবটা বুঝে নিলেন।
যুদ্ধের এখনই শেষ নয়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য তারা আরও অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও বেশি অস্ত্র পাঠায়, তাহলে তারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে সময় নেবে না। সেক্ষেত্রে কিন্তু সারা বিশ্বেই অস্ত্রের আকাল পড়তে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি রাশিয়া যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারবে না। সেক্ষেত্রে, যে সমস্ত প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলি পশ্চিমা বিশ্বকে আপন করে নিয়েছে, তাদের ওপরে আক্রমণ চালাতে পারে রাশিয়া। সেক্ষেত্রে আবারও অস্ত্রসাহায্য প্রয়োজন, আর সেই প্রয়োজন কে পূরণ করতে পারে? আমেরিকা।
তাই এই লড়াই শেষ হওয়ার নয়। যদিও বুধবার বাইডেন বলেছেন, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে লাগাতার অস্ত্র চালান অব্যাহত থাকে, তাহলে ভ্লাদিমির পুতিনকে পিছু হটতে বাধ্য হতে হবে। কিন্তু সত্যিই কি সেরকমটা হবে? না কি অজান্তেই আরও বড় বিপদ ডেকে আনবে আমেরিকা?