রশ্মিকাদের পরে ডিপফেক-ফাঁদে সচিনও , আপনার-আমার বিপদ ঠিক কতটা?

Sachin Tendulkar Deepfake Video: অবিকল একই রকম কণ্ঠ। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে সচিনকেও। সেখানে আবার তার মুখে বসানো হয়েছে, সচিনের মেয়ে সারাও নাকি এই গেমের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত।

কখনও রশ্মিকা মান্দানা তো কখনও কাজল, কখনও আবার ক্যাটরিনা কাইফ। ডিপ ফেক সংক্রমণের সাম্প্রতিক শিকার এবার সচিন তেন্ডুলকর। সম্প্রতি একটি ভিডিও ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যেখানে 'অ্যাভিয়েটর' নামে একটি গেম অ্যাপের হয়ে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে ভারতের এই প্রাক্তন ক্রিকেটারকে। অবিকল একই রকম কণ্ঠ। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে সচিনকেও। সেখানে আবার তার মুখে বসানো হয়েছে, সচিনের মেয়ে সারাও নাকি এই গেমের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত। সেখান থেকে আয়ও করেন তিনি। কিন্তু এই গোটাটাই আসলে মিথ্যে, যাকে বলে ডিপফেক। সেই ভিডিওর নেপথ্যে কোথাও সচিন তো নেই-ই, বরং গোটাটাই প্রযুক্তির কামাল। সচিন তেন্ডুলকারের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে জানানো হয়েছে, তিনি ওই বিজ্ঞাপন বা প্রচার কোনওটাই করেননি। গোটাটাই প্রতারণা। 

এক্সে নিজের সেই পোস্টটি মহারাষ্ট্রের সাইবার পুলিশ, কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখরকে ট্যাগ করেন সচিন। যেখানে তিনি এই ধরনের ফেক ভিডিও বিরক্তিকর এবং প্রযুক্তির অবব্যবহার বলে চিহ্নিত করেছেন। পাশাপাশি ওই ডিপ ফেক ভিডিওটিকে রিপোর্ট করার জন্যও অনুরোধ করেছেন সচিন। এই ধরনের ডিপ ফেক ছড়িয়ে পড়া আটকাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিও যাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে, সেই আবেদনও করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: এবার হাতের লেখা, সইও নকল করবে এআই! আপনি নিরাপদ তো?

প্রযুক্তি সভ্যতার আশীর্বাদ। তবে তার অপব্যবহারে যে কত বড় বড় অপরাধ সংঘটিত হতে পারে, তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ বোধহয় এই ডিপফেক। আজকাল এআই-য়ের দৌলতে কিনা সম্ভব। অরিজিৎ সিংয়ের গাওয়া গান গাইয়ে নেওয়া সম্ভব মুকেশ কিংবা রফি-কে দিয়ে। এমনকী যারা গায়ক নন আদৌ, তাঁদের কণ্ঠেও বসিয়ে দেওয়া সম্ভব সুরেলা গান। শুধু গলা নয়, সেই প্রযুক্তির মাধ্যমে একজনের মাথা, আরেকজনের নাক, তৃতীয় জনের হাত আর চতুর্থ জনের শরীরকেও জুড়ে ফেলা যায় একই সঙ্গে। আর এর প্রাদুর্ভাব আমরা গত কয়েক মাসে বারবার দেখেছি।

 

কয়েক মাস আগেই ছড়িয়ে পড়েছিল রশ্মিকা মান্দানার একটি ডিপ ফেক ভিডিও। যেখানে একজন জরা প্যাটেল নামে অন্য এক অভিনেত্রীর শরীরের উপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল রশ্মিকা মান্দানার মুখ। সেই ভিডিও ঘিরে কম হইচই হয়নি। ব্যাপারটির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন রশ্মিকা নিজে। তার পাশে এসে দাঁড়ান অমিতাভ বচ্চন-সহ বলিউডের অনেক তাবড় শিল্পীরাই। তারপর ক্যাটরিনা কাইফ অভিনীত 'টাইগার থ্রি' সিনেমার একটি দৃশ্য ব্যবহার করে বানানো হয়েছিল একটি ডিপ ফেক ভিডিও। ছড়িয়ে পড়েছিল অভিনেত্রী কাজলেরও একটি পোশাক পরিবর্তনের ভিডিও। পরে জানা যায়, সেটিও প্রযুক্তির কারিকুরি। বারবার তারকাদের এই ডিপ ফেক ভিডিও সামনে আসা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল বলিউড। ব্যাপারটা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছিল কেন্দ্র সরকার। তড়িঘড়ি ডিপফেক রুখতে পদক্ষেপ করার কথাও বলে কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির সঙ্গে বৈঠকও করেছিল কেন্দ্র সরকার। ডিপফেক রুখতে ফোর্থ পিলার স্ট্র্যাটেজি আনার কথাও ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র।

Sachin Tendulkar busts deepfake video claiming daughter Sara earns through app, wants swift action

এই প্রথম নয়, এর আগেও অনলাইনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সচিনেক পরিবার। গত নভেম্বর মাসে সারা তেন্ডুলকারের নাম ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতে ফের ডিপফেক প্রযুক্তির শিকার হলেন সচিন। ২০১৮ সালে সারার নকল টুইটার (অধুনা এক্স) অ্যাকাউন্টে তৈরি করার জন্য মুম্বইনিবাসী এক ৩৯ বছরের ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনায় অফিশিয়ার এফআইআর দায়ের করেছিলেন সচিন।

আরও পড়ুন: ভাইরাল ভিডিওর নারী রশ্মিকা মান্দানা নন, কী ভাবে চিনবেন ডিপফেক?

সচিনের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটার পর স্বভাবতই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই তাঁর টুইটের উত্তরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, অতি দ্রুত ডিপফেক রুখতে কড়া পদক্ষেপ করবে কেন্দ্র সরকার। শিগগিরই কড়া তথ্যপ্রযুক্তি আইন আনতে চলেছে কেন্দ্র। ভারতীয় সোশ্যালমিডিয়া ব্যবহারকারীর সুরক্ষার পক্ষে বিরাট ঝুঁকি হয়ে দাড়িয়েছে এই ধরনের এআই ব্যবহার। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির সঙ্গে কথা বলে ডিপফেক রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। রশ্মিকা, ক্যাটরিনা কিংবা সচিন তেন্ডুলকারের মতো তারকা বা প্রভাবশালীদের উপর ডিপফেকের যদি এই প্রভাব হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ বিশেষত মহিলা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের জন্য এই ডিপফেক কতটা আশঙ্কার, তা আঁচ করা কঠিন নয়। কবে আসবে ডিপফেক রোখার আইন, স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র সরকার।

More Articles