মৃতকেই দুষেছিলেন, আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ আসলে কে?

RG Kar Rape Case গাফিলতি, দুর্নীতির পরও কেন রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ?

আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। শুক্রবার থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। যদিও জরুরি পরিষেবা বিভাগগুলি খোলা রাখা হয়েছে। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কাজে ফিরবেন না বলেই জানিয়েছেন আন্দোলনরত ডাক্তাররা। তাঁরা অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ইতোমধ্যেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে আরজি কর ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক টানাপোড়েনও তুঙ্গে। স্লোগানে উঠছে 'বিচার চাই'। তারই সাথে আন্দোলনরত ডাক্তাররা আরজি কর - এর অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগের দাবি তুলছেন। কেন জুনিয়র, সিনিয়র ডাক্তাররা সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন? আরজি করের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ রয়েছে? খোলসা হওয়া দরকার।

গত কিছু বছর ধরেই আরজি করের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনায় অবহেলা করা, চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করা, হাসপাতাল পরিকাঠামো সংক্রান্ত বিষয়ে গাফিলতি প্রতি ক্ষেত্রেই দুর্নীতির অভিযোগ। আরজি করের প্রাক্তন নন মেডিক্যাল ডেপুটি সুপার আখতার আলি প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে বদলির অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল বায়ো মেডিক্যাল ওয়েস্ট এবং মধ্যরাতে বরাত বদল নিয়েও। এরপর থেকেই সন্দীপ ঘোষের বদলির দাবি উঠতে থাকে। বিতর্কের আবহে বদলির নিদের্শও জারি করে স্বাস্থ্যভবন।

কিন্তু সত্য হল এত টালবাহানার পরেও আজও তিনি আরজি করের অধ্যক্ষ। প্রতি বার অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর কী হত?

২০২৩ সালের মে মাসে আরজি কর- এর প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষেরর বদলির নির্দেশ জারি হয়েছিল। তার পর তাঁকে মুর্শিদাবাদের মেডিক্যাল কলেজের অস্থি রোগ বিভাগের প্রফেসর পদে ট্রান্সফার করা হয়। আরজি করে তাঁর বদলিতে আনা হয় উলুবেড়িয়ার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সনৎ ঘোষকে। তিনি আরজি করে এসে দেখেন সন্দীপ অফিসে নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর স্বাস্থ্য ভবনে ই-মেল করে জয়েনিং রিপোর্ট দেন তিনি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই গল্প ঘুরে যায়, প্রিন্সিপাল সন্দীপের বদলির নির্দেশিকা বাতিল করে দেওয়া হয়। পুনরায় তাঁকেই আরজি করে ফেরানো হয়।

পাঁচ মাস পর ওই বছরই সেপ্টেম্বরে ফের সন্দীপের বদলির নির্দেশ জারি হয়। সে বার সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ কয়েক জন প্রাক্তনী ও বহিরাগত বিক্ষোভ করেন। বারাসাত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরজি করে যোগ দিতেও বাধা দেওয়া হয়। তাঁরা বলেছিলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভরসা করেন। জানা গিয়েছিল, সাংসদ চিকিৎসক শান্তনু সেন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হওয়ার পর পরই সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি শোনা যেতে থাকে। নানা ঘটনার পর শেষে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে মানস কাজে যোগ দিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, আরজি করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ বলেছেন, মহিলা চিকিৎসক একা একা কেন সেমিনার ঘরে গিয়েছিলেন? এই প্রশ্নে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে। প্রশ্ন উঠছে, রাতে একা কর্মক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক অবাধ বিচরণ করলে তাঁকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে? প্রশ্ন উঠছে, সরকারি ব্যবস্থাপনাতেই সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিয়ে। ২০২৩ সাল থেকেই সন্দীপ ঘোষের বদলি নিয়ে নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। বার বার তাঁর বদলির নির্দেশ জারি হতেই শুরু হয়েছে টালবাহানা। প্রশ্ন উঠছে, পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন সুপারের বদলির নির্দেশ এত প্যাঁচ? কেন হাসপাতালের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে অবহেলা, গাফিলতি, দুর্নীতির পর রেহাই পেয়ে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ? প্রশ্ন উঠছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে এখনও কেন পৌঁছল না সন্দীপ ঘোষের কর্মকাণ্ডের কথা?

More Articles