কৃত্রিম জ্যাকেট পরে বাইরে থেকেই পাওয়া যাবে ভ্রূণের স্পন্দন, যে ভবিষ্যত দেখাচ্ছে এক্টো লাইফ
Artificial Reproduction : কৃত্রিম প্রজননের নতুন দিশা দেখাচ্ছে বিজ্ঞানী হাশিম আল ঘাইলির এক্টো লাইফ
২০২২ শেষ হতে চললো। যদি শুধুমাত্র বিজ্ঞানের চোখ দিয়েই দেখা যায় তাহলে ২০২২ ছিল এক দুর্দান্ত বছর। মহাকাশে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ পাঠানোই হোক বা সূর্যের শক্তিকে বাক্সবন্দি করে ফেলা, বিজ্ঞান শিরোনামে এসেছে বারবার। তবে যে দুটি উদাহরণ সামনে এল, সেখানে বিতর্ক বা কারোর আপত্তির বিশেষ স্থান নেই। যা হচ্ছে ভালই তো হচ্ছে। হোক না। না, এই বিষয়গুলি আড্ডার ঠেকে আলোড়ন তোলেনা, দুর্ভাগ্যবশত এখনো "সাধারণ" মানুষই হোক বা "বুদ্ধিজীবী" কারোর কাছেই এই বিষয়গুলির যথেষ্ট আবেদন নেই। তা সে যতো যুগান্তকারীই হোক না কেন। তবে বছরের শেষে বৈজ্ঞানিক ধারাভাষ্যকার এবং জৈবপ্রযুক্তি বিজ্ঞানী হাশিম আল ঘাইলি এক বিরাট বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। জন্ম দিয়েছেন বলা ভুল হবে, বরং বলা ভালো, এক বিতর্ককে আরও তীব্র ভাবে উস্কে দিয়েছেন। বিজ্ঞানের যে দরজার সন্ধান পাওয়া গেছে, তাকে ধাক্কা মেরে খোলার চেষ্টা করেছেন।
ধরুন, ২০৫০ সাল। পৃথিবীতে আর এমন কোনও দম্পতি নেই যার সন্তান ধারণের ইচ্ছা অপূর্ণ থাকে। আর এমন কোনও নারী নেই যাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। আর এমন কোনও শিশুও নেই যার জন্ম হওয়ার আগেই মৃত্যু হয় বা সময়ের অনেক আগেই পৃথিবীর আলো দেখার দুর্ভাগ্য হয়। সমস্ত কর্পোরেট দুনিয়াতে মেটার্নিটি লিভ-এর ধারণার আর অস্তিত্ব নেই। কর্পোরেট দুনিয়া কেন, যেকোনও পেশার সাথে যুক্ত থাকা কোনও নারীকেই নিজেদের কাজ থেকে বিরতি নিতে হয়না।
কি মনে হচ্ছে? অলীক কল্পনা? এও কি সম্ভব? সম্ভব হলেও কীভাবে সম্ভব?
বিজ্ঞানী হাশিম আল ঘাইলির কথা উল্লেখ করেছি লেখার শুরুতে। তিনি সম্প্রতি তাঁর নতুন ভিডিওতে সামনে এনেছেন এক্টো লাইফের কথা। একটি সংস্থা, যারা সম্পূর্ণভাবে নবায়ণযোগ্য শক্তির ব্যবহার করে তাদের পরীক্ষাগারে জন্ম দেবে বছরে ত্রিশ হাজার শিশুর। কৃত্রিম গর্ভের মাধ্যমে। হ্যাঁ, কৃত্রিম গর্ভ, যেখানে মাতৃ ভ্রুণকে মায়ের শরীর থেকে বার করে রাখা হবে একটি যন্ত্রে, তাকে সেখানে লালন করা হবে যতদিন না তার শরীরের গঠন সম্পূর্ণ হচ্ছে। সেই সমস্ত ধরণের পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে যা এক শিশু সাধারণত তার মায়ের শরীরের মধ্যে দিয়ে যায়। সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করা হবে, এমনকী তার মায়ের কন্ঠের আওয়াজও শোনানো হবে যাতে সে তার মায়ের কন্ঠের এবং মাতৃভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়। সে বড় হবে এমন একটি যন্ত্রের ভিতর, যেখানে কোনও সংক্রামক রোগ তাকে ছুঁতে পারবেনা। হাশিম এই যন্ত্রটিকে বলছেন Growth Pod। এই গ্রোথ পডে থাকবে বিভিন্ন ধরণের সেন্সর যা শিশুর রক্তচাপ, হৃদ কম্পন, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, শরীরের তাপমাত্রা, নিশ্বাস প্রশ্বাসের সব তথ্য ধরে রাখবে। এই পডের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিশুর শারীরিক গঠন নিখুঁত ভাবে ব্যাখ্যা করবে, সেই সঙ্গে জিনগত কোনও ধরণের সমস্যা যদি থাকে তাহলে তাকে নির্মূল করবে। এতে থাকবে একটি স্ক্রিন, যা শিশুর বেড়ে ওঠা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য দিতে থাকবে প্রতি মুহূর্তে, যা আপনার মোবাইল ফোন থেকেই একটি অ্যাপের মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন। পডের ভিতরে থাকছে একটি ক্যামেরা যার মাধ্যমে সারাক্ষণ আপনি আপনার শিশুকে দেখতে পাবেন, এমনকি টাইমল্যাপ্স প্রযুক্তির মাধ্যমে তার বড় হয়ে ওঠা দেখতে পারবেন কয়েক মিনিটে। যেহেতু শিশুরা গর্ভের ভিতর ভাষা শুনতে পারে, শব্দ শিখতে পারে, তাই তাদের শোনানো হবে আপনার পছন্দ মত শব্দ, সঙ্গীত। আপনি চাইলে নিজেও গান গাইতে পারেন যা সরাসরি পৌঁছে যাবে শিশুর কানে। আপনার মনে হতে পারে, আমার শিশু আমার শরীরের বাইরে বেড়ে উঠছে, তার অনুভূতিতো আমি পাচ্ছিনা। তার জন্যেও এক্টো লাইফ বন্দোবস্ত করেছে এক জ্যাকেটের যার সেন্সরের মাধ্যমে আপনি অনুভব করবেন শিশুর লাথি মারা। প্রত্যেকটি পড যুক্ত থাকবে দুটি প্রধান বাও রিয়াক্টরের সঙ্গে। যার মধ্যে একটি শিশুকে সারাক্ষণ প্রয়োজনীয় পরিপোষক পদার্থ এবং অক্সিজেন সরবরাহ করবে, এবং অন্যটি শিশুর শরীর থেকে সৃষ্ট সমস্ত বর্জ্যকে নির্মূল করবে। এই পডের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রত্যেক শিশুর প্রয়োজন অনুযায়ী এই ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
এবার আসা যাক দ্বিতীয় পর্যায়ে। শিশুর জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন পিতার শুক্রাণুর মাত্রা এবং তার স্বাস্থ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এক্টো লাইফের মাধ্যমে বেছে নেওয়া হবে আপনার সবথেকে শক্তিশালী এমব্রেয়োকে।
এই প্রযুক্তি আরও এক ধাপ এগোচ্ছে। বলা যেতে পারে, কল্পবিজ্ঞানের এমন এক পৃষ্ঠাকে ওল্টানো হচ্ছে যার জন্যে হয়েতো এই মুহূর্তে মানবজাতি প্রস্তুত নয়। CRISPR নামক কোনও প্রযুক্তির নাম শুনেছেন? জিন এডিটিং? ডিজাইনার শিশু? হ্যাঁ, এক্টো ল্যাব আপনাকে সেই সুযোগও দিচ্ছে। আপনার পরিবারের ইতিহাসে, জিন বাহিত যেকোনও ধরনের রোগ থেকে আপনার শিশুকে আপনি রক্ষা করতে পারবেন। এখানেই শেষ নয়, আপনার শিশুর চুল, চোখের মণি, ত্বক, শারীরিক শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, সব কিছু আপনি আগে থেকে ঠিক করে নিতে পারবেন। শুধুমাত্র মানব জিনে সামান্য বদল করেই এই যুগান্তকারী চরিত্র বদল সম্ভব। আর সেই প্রযুক্তির ওপর ভর করেই কল্প বিজ্ঞান হয়ে উঠছে বাস্তব। প্রশ্ন উঠছে, প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করা এমন প্রযুক্তির প্রয়োজন কেন হচ্ছে? একজন শিশু কেন তার মায়ের শরীরের বাইরে বেড়ে উঠবে?
প্রত্যেক মানব শিশুর নিজের মায়ের শরীরে সম্পূর্ণ গঠনের জন্যে প্রয়োজন ৩৭ সপ্তাহ। তার পরেই সে সুস্থ ভাবে জন্ম নিতে পারে। কিন্তু, সব শিশুর সেই সৌভাগ্য হয়না। প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি শিশু নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই পৃথিবীর আলো দেখে। তার মধ্যে কমপক্ষে ১০ লক্ষ শিশুর মৃত্যু হয়। তার কারণ, খুব কম করে হলেও, অন্তত ২৪ সপ্তাহ মায়ের শরীরে না কাটানোর দরুণ তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে গঠিত হয়না। যে শিশুরা বেঁচে যায়, তাদের অনেকেই প্রায় সারা জীবন ফুসফুস এবং মস্তিষ্কের সমস্যায় ভোগে। এই ধরণের সমস্যার জন্যে Baby Incubator নামক যন্ত্র আছে ঠিকই, তবে তারও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু এক্টো লাইফের এই যন্ত্র দাবী করছে যে তারা শিশুর অকাল জন্মের সমস্যাকে চিরকালের মতো মেটাতে পারে।
তবে হাশিমের এই ভবিষ্যৎ সংস্থা কিন্তু প্রথম নয়। জানলে অবাক হতে হয়, কৃত্রিম গর্ভের এই ধারণা প্রথম আসে ১৯৫০ এর দশকে। ১৯৫৫ সালে ইমান্যুয়েল গ্রিনবার্গ নামক এক বিজ্ঞানী প্রথম কৃত্রিম গর্ভের নকশা প্রকাশ করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল অকালে জন্মানো শিশুদের রক্ষা করা। কিন্তু সেই নকশা কাগজে কলমেই থেকে যায়। তারপর ৯০-এর দশকে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি ছাগলকে কৃত্রিম গর্ভে জন্ম দেন। তারা ভ্রুণকে প্রথমে মায়ের শরীর থেকে আলাদা করেন, তারপর তাকে রাবারের কৃত্রিম গর্ভে স্থাপন করেন। ঠিক ১৭ দিনের মধ্যে তার জন্ম প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়। ২০০২ সালে বিজ্ঞানীরা গর্ভ থেকে কোষ বার করে মানব শরীরের বাইরে তার প্রতিরুপ তৈরি করেন। সেই সময়েও এই কাজ এগোতে দেওয়া হয়নি। তবে সাম্প্রতিক অতীতে চাঞ্চল্যকর এক সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৭ সালে আমেরিকার চিল্ড্রেনস হসপিটাল অব ফিলাডেলফিয়া কৃত্রিম গর্ভের এক পুরোনো নকশাকে কাজে লাগিয়ে এক ভেড়ার জন্ম দেন। সেই ভেড়ার ভ্রুণের অকাল জন্ম হয়েছিল এবং তাকে কৃত্রিম গর্ভে প্রবেশ করিয়ে চার সপ্তাহ রাখা হয়। তারপর? জন্ম হয় এক সুস্থ, সম্পূর্ণ ভাবে গঠিত ভেড়ার।
স্বাভাবিক ভাবেই হাশিম এর এই ঘোষণা জন্ম দিয়েছে এক বিরাট বিতর্কের - "Humans playing God। মায়ের থেকে মাতৃত্বের সুখ কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যাওয়া হচ্ছে। এই ধরণের প্রযুক্তি আসলে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের ভবিষ্যৎ হরণ করে নিচ্ছে। মাতৃত্ব আসলে মেয়েদের সবথেকে বড় শক্তির জায়গা। তা কেড়ে নেওয়া অন্যায়। একেই পৃথিবীর জনসংখ্যা এত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার ওপর এই ধরণের প্রযুক্তি এলে সমস্যা আরও বাড়বে। এ হল শেষের শুরু।"
ইতিহাস সাক্ষী, বিজ্ঞানে, বিশেষ করে জীববিজ্ঞান বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে যখন চূড়ান্ত বৈপ্লবিক কোনও বদল ঘটে, যখন যুগান্তকারী কোনও আবিষ্কার হয়, এই ধরণের প্রতিরোধ অথবা সমালোচনা আসে। বিশেষ করে মানুষ যদি সেই প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত না থাকে, তা যদি সময়ের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকে তাহলে তো কোনও কথাই নেই। এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে এই প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষ করে জিন বদল করে ডিজাইনার শিশুর জন্ম দেওয়া আমাদের প্রকৃতির নিয়মকে ধাক্কা দেয় ঠিকই। কিন্তু এ কথা কি কখনও আমরা ভেবে দেখেছি যে কীভাবে, প্রতিনিয়ত মানুষ প্রকৃতির নিয়ম ভেঙে চলেছে? আমাদের আধুনিক পৃথিবীর ভিত্তি বা ভবিষ্যতের রূপরেখা, সবটাই আমাদের তথাকথিত প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক নিয়মের ধারণাকে চুরমার করে তৈরি হচ্ছে?
সবথেকে বড় যে বিষয়টি, তা হল এটা বোঝা, যে এই নতুন প্রযুক্তি ঠিক কোন কোন সমস্যার সমাধান করতে চলেছে। WHO -এর দেওয়া তথ্য দাবী করছে, প্রায় প্রত্যেক দিন ৮৩০ জন নারীর মৃত্যু হয় সন্তান প্রসব করতে গিয়ে। প্রত্যেক দিন কোটি কোটি শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্মায়। সারাজীবন তারা সেই চিহ্ন বহন করে চলে। এছাড়াও, আমাদের গোটা পৃথিবীর জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ জিনগত কোনও না কোনও রোগ বহন করেন। এছাড়াও অনেক নারীর জরায়ু বাদ দিতে হয় বিভিন্ন রকমের রোগের কারণে। তাছাড়া সমলিঙ্গ দম্পতিরাও আছেন যারা সন্তান সুখ পান না। এছাড়াও এটা বলাই বাহুল্য যে, সন্তান প্রসব করার মধ্যে তীব্র সুখ থাকলেও তা আসে চরম যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে। চরম স্বার্থত্যাগের মধ্যে দিয়ে। আধুনিক যুগে অনেক সফল নারীকেও পিছিয়ে যেতে হয় শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্যে। আর নারীত্বে আঘাত নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন, তাদের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন, নারী কি এই একবিংশ শতাব্দীতেও মাতৃত্বের ঘেরাটোপেই আবদ্ধ? নিজের শরীরে সন্তান ধারণ না করলে তার নারীত্ব কি আজও পূর্ণতা পাচ্ছেনা?
এই প্রযুক্তি উ পরে উল্লেখ করা সেই সমস্ত সমস্যাকে মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এত কিছু বলার পরেও উল্লেখ করতেই হয় যে, এই সব কিছুই প্রতিশ্রুতি। এখনও আমরা জানিনা আসলে কি হতে চলেছে, বা এর প্রভাব আমাদের সমাজে ঠিক কেমন ভাবে পড়বে। সেই সঙ্গে এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র কতিপয় বিত্তবানদের হাতেই কুক্ষিগত হয়ে থাকবে কিনা। বিশেষ করে প্রশ্ন উঠছে জিন বদল প্রযুক্তি নিয়ে, কারণ তা শুনতে সহজ মনে হলেও আদপেও সহজ নয় এবং ভীষণভাবে ব্যয়বহুল। আশঙ্কা থাকছে সহজে আরও অসাম্য বৃদ্ধি পাওয়ার। এই প্রযুক্তি তখনই সফল হতে পারবে যখন তা প্রথম বিশ্ব থেকে তৃতীয় বিশ্ব, সবার জন্যেই উপলব্ধ হবে।
তবে এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ বন্ধ হওয়ার কথা তোলাও চূড়ান্ত সমস্যাজনক। তা অনেকটা এরকম শোনাবে, যদি আপনি এখন পরমাণু শক্তি নিয়ে গবেষণা বন্ধ করতে বলেন, বা ভাইরোলজি নিয়ে কাজকে প্রতিহত করেন। সব বিষয়েরই দুটি দিক থাকে, তার ভালো দিককে তুলে ধরা, তাকে মানব উন্নয়নে কাজে লাগানো এবং সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটাই আজ আমাদের এই জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। পোলিওর টিকাকরণ এককালে ভয়ংকর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল। অথচ টিকার জন্যই আজ সেই রোগটির অস্তিত্ব প্রায় নেই।
শেষ করার আগে লেখার শুরুতে ফিরে যাব। উল্লেখ করব বিজ্ঞান নিয়ে চর্চার অভাবের কথা। বৈজ্ঞানিক ধারাভাষ্যকারের অভাবের কথা এবং সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের এই কাজে অলসতার কথা। এই একবিংশ শতাব্দীতেও বিজ্ঞানের বহু বিষয়ে অজ্ঞতা রয়েছে এবং সঠিক তথ্য ছাড়াই মতামত তৈরি হওয়ার প্রবনতা রয়েছে। সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া যোগ হয়ে তা পরিণত হয়েছে মহামারীতে। ২০২২ সাল শেষ হওয়ার আগে এটাই সব থেকে বড় উপলব্ধি যে, মানব সভ্যতাকে পরের ধাপে যেতে হলে এই পরিস্থিতির বদল প্রয়োজন। নাহলে আমরা যুদ্ধবাজ, দাঙ্গাবাজদের সমর্থন করব এবং একদিন হয় নিজেরা যুদ্ধ করে শেষ হব, অথবা পরিবেশ দূষণ আমাদের শেষ করে দেবে। নতুবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ হবে এবং আমরা তার দাসে পরিণত হব। এই পৃথিবীর গণ্ডি আর ছাড়ানো হবেনা আমাদের।