"পরবর্তী পাকিস্তান হবে বাংলাদেশ", কেন বলছেন শেখ হাসিনার পুত্র জয়?
Sheikh Hasina Bangladesh: হাসিনা পুত্র বলছেন, পরিস্থিতিকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের হাত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ আর হাসিনা, এই দুইয়ের সম্পর্ক চিরতরে যে শেষ, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন হাসিনার পুত্র জয়। শেখ হাসিনার বাবা মুজিবুর রহমানের হাত ধরে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করছিলেন হাসিনা। দীর্ঘ সম্পর্ক ছিন্ন হলো বাংলাদেশ কাঁপানো এক আন্দোলনে। শুরুটা ছাত্র আন্দোলন দিয়ে হলেও, পরে সেই আন্দোলন আওয়ামী লীগ বিরোধীরা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন বলেই আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। মুজিবের হাতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে সেই মুজিবের মূর্তিই বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন হাসিনা। হাসিনার সরকার নির্মমভাবে দমন করতে চেয়েছিল ছাত্রদের আন্দোলন। প্রায় ৩০০ মানুষের প্রাণ গেছিল এক সপ্তাহের মধ্যে। সেই জের ধরেই আওয়ামী সরকারের পতন। তবে এসবে হাসিনা ভুল কিছু করেননি, এমনটাই দাবি তাঁর পুত্রের।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ছিলেন তাঁর প্রাক্তন সরকারি উপদেষ্টাও। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ নিয়ে 'হতাশ', বলছেন জয়। ইন্ডিয়া টুডে-কে এক টেলিফোনিক কথোপকথনে জয় বলেছেন, তাঁর মা কিছু ভুল করেননি। তিনি দেশকে সেরা সরকার দিয়েছেন। তবে এবার সেই পর্ব শেষ। হাসিনা এখন বাংলাদেশ নিয়ে 'বীতশ্রদ্ধ'। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর হাসিনা ফিরবেন না, এমনই ইঙ্গিত দিয়ে জয় বলেছেন, "তিনি এখন তাঁর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাবেন।"
আরও পড়ুন- বন্ধু হাসিনার বিদায়! ভারতে আবার উদ্বাস্তু সঙ্কট? কী পরিকল্পনা করছেন মোদি?
শেখ হাসিনার পুত্র বলছেন, হাসিনা বাংলাদেশ থেকে যা পেলেন তাতে তিনি হতাশ, হতোদ্যম। হাসিনা কঠোর হাতে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। জয় বলছেন, "হাসিনা বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। তিনি যে সময়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন করুণ অবস্থা ছিল দেশের। বাংলাদেশ গরিব দেশ ছিল কিন্তু আজ বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম শক্তি।’’ "মায়ের বয়স ৭৭, এবার আর নয়!” বলছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সজীব এখন লন্ডনে থাকেন। শেখ হাসিনা লন্ডনে যাওয়ার পরিকল্পনাই করেছেন। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তবে সেই আশ্রয় বিষয়ে যুক্তরাজ্য কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জানা যায়নি। যদিও হাসিনার পুত্র এই আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন জল্পনা বলেই।
হাসিনা-পুত্র জয় বলছেন, দেশের রাজপথে রক্তপাত চান না বলেই তাঁর মা বাংলাদেশ ছেড়েছেন। জয়ের দাবি, গত ৩ অগাস্টই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর মা। তবে, বিক্ষোভকারীরাই চায়নি যে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হোক। তাই এই অশান্তি, হিংসা! জয় বলছেন, ছাত্রদের উস্কানি দেওয়া এবং পরিস্থিতিকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই জড়িত থাকতে পারে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বলছেন, বাংলাদেশ এবার আগামী পাকিস্তান হবে এবং এখান থেকেই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু ও খ্রিস্টানদের উপর হামলা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জয়।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার দুপুরেই গোপনে একটি সামরিক বিমানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং ভারতে অবতরণ করেন। হাসিনার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শ'য়ে শ'য়ে মানুষ গণভবনে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় শেখ মুজিবের মূর্তি।
আরও পড়ুন- বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি! বাংলাদেশ আবার মৌলবাদীদের হাতেই?
হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করছেন। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হওয়া নির্বাচন বয়কট করে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনে হাসিনা রেকর্ড চতুর্থবার এবং পঞ্চম মেয়াদে নির্বাচিত হন।
হাসিনা যদি নির্মমভাবে পড়ুয়া-শিশু-আমজনতাকে দমন না করতেন, যদি ৩০০ মানুষের মৃত্যু না হতো, তাহলে কি পরিস্থিতি এমন হতো? জয় বলছেন, "এখানে পুলিশকে পিটিয়ে মারা হচ্ছিল। গতকাল পর্যন্ত ১৩ জন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। জনতা যদি পুলিশকে এভাবে পিটিয়ে মারে তো পুলিশ কী করবে?” অর্থাৎ হাসিনাকে ক্লিনচিটই দিচ্ছেন পুত্র। কোটা নিয়ে আদালত আন্দোলনকারীদের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। তবে এত এত মানুষের মৃত্যুতে আন্দোলন আরও পোক্ত হয়ে ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আবারও পথে নামে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘অসহযোগ কর্মসূচি’ ঘিরে যে অশান্তির সূত্রপাত হয়, তাতে কেবল রবিবারেই অন্তত ৯৮ জনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ১৪ জন পুলিশকর্মীও। সোমবার ছিল লং মার্চ। আর সোমবারই দুপুরে অবসান হয় হাসিনা সরকারের।