মোদি বিরোধিতার স্পষ্ট বার্তা? রাষ্ট্রপতির ডাকা জি-২০ নৈশভোজ কেন এড়াচ্ছেন বিরোধী-মুখ্যমন্ত্রীরা?

G-20 Dinner: রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে দিল্লিতে জি-২০ নৈশভোজের আসর। অন্তত ৬ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অনুপস্থিত থাকতে চলেছেন সেই আয়োজনে। আর সেই সবকটি রাজ্যেরই গদি নাকি রয়েছে বিরোধীদের দখলে।

এই বছর ভারতেই বসেছে জি-২০-র আসর। দেশ-বিদেশ থেকে ভারতে এসেছেন অতিথিবর্গ। প্রথম বিশ্বের সমস্ত দেশনায়কেরা হাজির নয়াদিল্লিতে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতকে তুলে ধরছেন বিশ্বমঞ্চে। সেই প্রধানমন্ত্রী যিনি এক দেশ এক নির্বাচনের ধ্বনি তুলেছেন, এক ভারতকে উপস্থাপনার স্বপ্ন দেখেছেন, অথচ বিশ্বমঞ্চের সামনে দেশের একতাকে তুলে ধরতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছেন কার্যত।  জি-২০ সম্মেলনকে মাথায় রেখেই শনিবার এক বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। যেখানে প্রতিনিধি দেশের রাষ্ট্রনায়কদের পাশাপাশি ডাক পেয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও।  জানা গিয়েছে, জি-২০ সম্মেলনের নৈশভোজে যোগ দিচ্ছেন না দেশের সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। যে যে রাজ্যের গদি বিরোধী দলের দখলে, সেই সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাই থাকতে চাইছেন না নৈশভোজের আসরে।

সূত্রের খবর, অন্তত ৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অনুপস্থিত থাকতে চলেছেন ওই আয়োজনে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে থাকতে পারছেন না প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও এইচ.ডি দেবেগৌড়া। বয়সজনীত কারণে তাঁদের অসুস্থতা না হয় মানা গেল। তাই বলে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত নৈশভোজে রাজস্থান, কর্ণাটক, ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রী দিল্লি আসার সৌজন্যটুকুও দেখালেন না। বলাই বাহুল্য, সেই সবকটি রাজ্যেই রয়েছে বিরোধী শক্তি।

আরও পড়ুন: জি ২০: মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে

 রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের হাড় ভেঙে যাওয়ার জখম নাকি এখনও সারেনি। ফলে চিকিৎসকেরা তাঁকে ঠাঁইনাড়া হতে নিষেধ করেছেন। এই মর্মে আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীও সিদ্দারামাইয়াও শারীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে আমন্ত্রণ এড়িয়েছেন। এদিকে আবার ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল জানিয়েছেন, দিল্লি জুড়ে আকাশপথে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণেই রাজধানীতে আসতে পারছেন না তিনি। কেন্দ্র যদিও তাঁর সেই অভিযোগ উড়িয়ে জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালদের উড়ানে কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। যদিও তার পরেও যে ভূপেশ বাঘেল যোগ দেবেন আসরে, এমন কোনও আশার কথা কিন্তু শোনা যায়নি ছত্তীসগঢ়ের মুখ্য়মন্ত্রীর দফতরের তরফে। 

শুধু কি রাজস্থান বা কর্ণাটক, অন্যান্য বেশ কয়েকটি  রাজ্যের মুখ্য়মন্ত্রীরাও হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে তাঁরা দিল্লি যাচ্ছেন না। তবে তার কারণ স্পষ্ট করেননি তাঁরা।  যেমন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আয়োজিত নৈশভোজে হাজির থাকছেন না তেলঙ্গানার মুখ্য়মন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। মুখ্যমন্ত্রীর অফিস সূত্রের খবর, দিল্লি যাওয়ার আশা নেই চন্দ্রশেখরের। যাচ্ছেন না অন্ধ্রপ্রেদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন মোহন রেড্ডিও। আপাতত তিনি লন্ডনে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের আগে দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই তাঁর । এভাবে নৈশভোজ এড়ানোর কারণ কি শুধুমাত্র বিজেপি বিরোধিতা, নাকি অন্য কিছু। নিন্দুকদের মাথায় ঘুরছে এমন হাজারও সমীকরণ ও প্রশ্ন।

তবে বিরোধী রাজ্যগুলির মধ্যে বেশ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী নৈশভোজে হাজির থাকার কথাও জানিয়েছেন। থাকছেন তামিলনাড়ুর মুখ্য়মন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। দিল্লি যাওয়ার কথা রয়েছে বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। নৈশভোজে হাজির থাকবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিবালও। আমন্ত্রণ এড়াচ্ছেন না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মন ও হিমাচলের মুখ্য়মন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখুও।

আরও পড়ুন:বিলাসবহুল গাড়ি, লিফট! জি ২০ সম্মেলনে কোথায়, কীভাবে থাকছেন বাইডেন, সুনাকরা?

তবে আশ্চর্য ভাবে, শনিবার রাষ্ট্রপতির ডাকা নৈশভোজের অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে। না, অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের প্রধানও অবশ্য ওই সভায় আমন্ত্রণ পাননি। তবে কি পরিকল্পনা করেই রাজনীতির বাইরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল জি-২০-এর নৈশভোজকে? যেখানে হাজির থাকবেন অন্য সমস্ত দেশের রাষ্ট্রনেতারা। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বা আয়োজকদের তরফে তেমন সদিচ্ছা থাকলেও বিরোধীরা সেখানেও রাজনীতির গন্ধ খুঁজে নিয়েছেন ঠিকই। যে জি-২০ সামিটকে ঘিরে বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'-কে দুর্বল করার চেষ্টা করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী অবিরাম, অবিরাম চেষ্টা চলছে দেশের নাম থেকে 'ইন্ডিয়া' শব্দের অস্তিত্ব খসানোর, সেই জি-২০-রর নৈশভোজকে এড়িয়ে কি ফের একবার মোদি-বিরোধিতার আঁচকেই উস্কে দিতে চাইছেন বিরোধী রাজ্যের কাণ্ডারিরা। রাজনৈতিক অভিজ্ঞদের কেউ কেউ অবশ্য তেমনটাই মনে করছেন।

More Articles