কেন সোনম ওয়াংচুকদের আন্দোলনে নীরব কেন্দ্র সরকার?
Sonam Wangchuk Ladakh Protest: ওয়াংচুক এবং তাঁর সমর্থকরা লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলেছেন।
সোনম ওয়াংচুক বলতেই যে সিনেমাটির কথা মনে পড়ে, লাদাখ যে সেই রুপোলি বাস্তবতার জায়গা থেকে ঢের পৃথক তা ওই পাহাড়ি অঞ্চলের আন্দোলনই প্রমাণ করে দিয়েছে। সোনম ওয়াংচুক একজন ইঞ্জিনিয়ার, পরিবেশবাদী এবং শিক্ষা সংস্কারক হিসেবে কাজ করে চলেছেন। দুর্গম এলাকায় প্রকৃতিকে বাঁচাতে চেয়েছেন, রাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে প্রকৃত উন্নয়নের কথা বলেছেন। সোনম এখন আরেক বিক্ষোভের মুখ। সামনের সারিতে এসে আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি, অনশন করছেন সমর্থকদের নিয়ে। নীরব অনশন।
উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চল লাদাখের বাসিন্দা ওয়াংচুক বলছেন, লাদাখের জমি কীভাবে ব্যবহার করা হবে এবং শাসন করা হবে এই বিষয়টির উপর আরও নিয়ন্ত্রণ দরকার। ওয়াংচুক এবং তাঁর সমর্থকরা লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলেছেন। এই দাবিতে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। এখানে উল্লেখ্য, লাদাখের জমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে আছে জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুটি। লাদাখের পূর্বে আছে চিন এবং পশ্চিমে পাকিস্তান। এই দুই দেশই ভারতের মিত্রশক্তি নয়। ফলে লাদাখ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু লাদাখকে সরাসরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ২০১৯ সালে ভারত সরকার যে সিদ্ধান্ত নেয় তাতে লাদাখের মানুষরা ক্ষুব্ধ হন।
আরও পড়ুন- লাদাখকে দেওয়া কথা রাখেননি মোদি! রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে জম্মু-কাশ্মীর?
যদিও কেন্দ্রের প্রচারে মেতে গিয়ে শুরুতে লাদাখের বাসিন্দারা এই পরিবর্তনে আনন্দিতই হয়েছিলেন। লাদাখের মানুষজন ভেবেছিলেন, এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনন্য ও স্বতন্ত্র পরিচয় এবং সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত। তবে এই রেশমি পর্দা সরে গিয়েছে এখন। অনেকেই বুঝতে পারছেন, লাদাখের প্রকৃত উন্নয়ন সোনার পাথরবাটি মাত্র।
গত মাসে সোনম ওয়াংচুক এবং তাঁর সমর্থকদের একটি দল লাদাখের বৃহত্তম শহর লেহ থেকে দেশের রাজধানী নয়াদিল্লি অবধি প্রায় ৫০০ মাইল ট্রেক করেছে। ভারত সরকার লাদাখ ইস্যুতে ফের আলোচনা শুরু করতে রাজি না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানেই থেকে প্রতিবাদ করার পরিকল্পনা করেন। সেই মতোই শুরু হওয়ার কথা ছিল নীরব অনশনের।
আরও পড়ুন- লাদাখ আর কিছু দিন, দায় কার?
গত মার্চেও আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু নিষ্পত্তি হয়নি। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই সময় একটি বিবৃতিতে বলেছিল, সরকার লাদাখকে "প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সুরক্ষা প্রদান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ"। সরকার অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে বর্তমান বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সোনমদের এই বিক্ষোভকে যে আর পাঁচটা সরকার বিরোধী আন্দোলনের মতোই দমন করতে হবে সেই নির্দেশ অন্তত পুলিশদের কাছে এসে গিয়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। নীরব অনশনে অংশ নিতে লাদাখ ভবনের বাইরে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি ১৪৪ ধারা অমান্য করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
সোনম ওয়াংচুক বলেছেন, "আমরা নয়াদিল্লির লাদাখ ভবনের বাইরে নীরব অনশন শুরু করতে যাচ্ছিলাম। এতে অংশ নেওয়ার জন্য প্রচুর লোক জড়ো হয়েছিলেন, আমরা বলেছিলাম যে আমরা কোনও স্লোগান তুলব না। শুধুমাত্র নীরব অনশন করব। তবুও মানুষদের জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ বাসে করে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের আটক করে। আমাদের বলা হয়, আমরা ১৪৪ ধারা অমান্য করেছি। কেবল আমাদের জন্য নয়, চারতের গণতন্ত্রের জন্য এই ঘটনা দুঃখজনক। আমাদের আজ ভারতবর্ষের জন্য দুঃখ হচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে নিজেকে প্রকাশ করতে পারার অক্ষমতা বাক স্বাধীনতা ও আন্দোলনের স্বাধীনতা সহ মৌলিক অধিকারকেই লঙ্ঘন করে।"