চিৎকার করলে সাপেরা কি সত্যিই শুনতে পায়? যে সত্যি সামনে আনল সাম্প্রতিক গবেষণা
Snakes hearing ability new research : গবেষণায় উঠে এসেছে অবিশ্বাস্য কিছু তথ্য। দেখা গিয়েছে, হাওয়ায়, বাতাসে শব্দ করলেও সাপেরা সাড়া দেয়!
জলে হোক বা ডাঙায়, এই প্রাণীটিকে এঁকেবেঁকে চলতে দেখলে অধিকাংশ মানুষই লাফিয়ে কয়েকহাত দূরে চলে যায়। তার ছোবলের ভয় থরহরি কম্প দেয় অনেকের। বাংলার সিনেমা হোক বা রাজনীতি, সব জায়গাতেই তার অবাধ বিচরণ। কথা হচ্ছে সর্প, অর্থাৎ সাপকে নিয়ে। দুধকলা দিয়ে কালসাপ পোষার কথা হলেও, সাপকে কেউ কোনওদিন দুধ খেতে দেখেছে কিনা জানা নেই। তাকে নিয়ে নানা মিথ, নানা গুজব, নানা ভয় ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানী মহলে সাপের মাহাত্ম্য কমেনি এতটুকুও।
সাপ নিয়ে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন কথা প্রচলিত রয়েছে। তার মধ্যেই অন্যতম হল, সাপ নাকি কালা! সে কানে শুনতে পায় না। তবে কেবল মিথ নয়, পরবর্তীকালে বিজ্ঞানও এমনটা বলেছে। সাপের শরীরে কোথাও কান বা কানের মতো কোনও অঙ্গ নেই। অন্যান্য প্রাণীদের তো রয়েছে। তাহলে কী করে প্রতিক্রিয়া দেয় সাপেরা? বিজ্ঞান এতদিন ধরে বলেছে, সাপ মূলত মাটির কম্পনের মাধ্যমে সবকিছু বুঝতে পারে। সেজন্য খেয়াল করলে দেখা যাবে, সাপ বেশিরভাগ সময় মাটিতে মুখ লাগিয়ে চলে। আর নিজের চেরা জিভটা বারবার বের করে।
আরও পড়ুন : মানুষ এক ছোবলেই ছবি! তবে কোন রহস্যে সাপের তীব্র বিষেও বেঁচে যায় বন্য প্রাণীরা?
এছাড়াও বিজ্ঞান বলে, সাপের কান একেবারে যে নেই, তা নয়। সাপের খুলির অংশেই থাকে অভ্যন্তরীণ কান, যার সঙ্গে বাইরের কোনও যোগাযোগ নেই। যখনই মাটিতে কোনও কম্পন হয়, তখন সেটি নির্দিষ্ট একটি হাড় দিয়ে সেই অভ্যন্তরীণ কানে পৌঁছে যায়। তারপর সেখান থেকে মস্তিস্কে। কিন্তু বাতাসে কোনও শব্দ হলে সাপ বুঝতে পারবে না। এতদিন এটাই জেনে এসেছি আমরা।
কিন্তু সাম্প্রতিক একটি গবেষণা সব হিসেব কিছুটা হলেও উল্টে দিল। পিএলওএস ওয়ান (PLOS One) নামের একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিজ্ঞানীদের দাবি, মাটির কম্পনের মাধ্যমে সাপেরা শব্দ ‘বুঝতে পারে’, এতদিন সেটাই জানত সবাই। কিন্তু এই গবেষণায় উঠে এসেছে অবিশ্বাস্য কিছু তথ্য। দেখা গিয়েছে, হাওয়ায়, বাতাসে শব্দ করলেও সাপেরা সাড়া দেয়! আরও দেখা গিয়েছে, সেখানে এক একরকম সাপ, এক একরকম ভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে।
ঠিক কী করা হয়েছে এই গবেষণায়? সাতটা প্রজাতির প্রায় ১৯টি সাপ এই পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছিল। প্রথমে একটা সাউন্ডপ্রুফ ঘরে এনে তাদের রাখা হয়। যেহেতু সাউন্ডপ্রুফ, তাই বাইরের কোনও শব্দ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। এবার ১-১৫০ হার্ৎজ, ১৫০-৩০০ হার্ৎজ ও ৩০০-৪৫০ হার্ৎজ এই তিনটি আলাদা আলাদা কম্পাঙ্কের শব্দ করা হয়। এবং পুরো শব্দটাই করা হয় হাওয়ায়; তার সঙ্গে মাটির কোনও যোগ নেই। আওয়াজ আসার পর সাপেদের মধ্যে কোনও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে কিনা, সেটা পর্যবেক্ষণ করা হল।
আরও পড়ুন : জ্যান্ত বিষধর সাপের পুজো! এই মন্দিরে মানুষ ও সাপের সম্পর্ক আজও অটুট
এরপরই ঘটে মিরাকল! বিভিন্ন প্রজাতির সাপ বিভিন্নভাবে সেই শব্দগুলিতে সাড়া দেয়। যেমন ধরা যাক ওয়োমা পাইথন। অস্ট্রেলিয়ার এই পাইথন ওই শব্দ শুনে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেয়। যত সময় যায়, তার চঞ্চলতাও বাড়তে থাকে। এবং একসময়, শব্দ যেখান থেকে আসছে, সেদিকে সত্যিই এগোতে শুরু করে! আরও তিন প্রজাতির সাপ সেই শব্দ শুনে একটু দূরে সরে যেতে থাকে। এই তথ্যই এতদিনের বিশ্বাসকে ভেঙে দেয়।
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, মাটিতে যাতে কোনওরকম কোনও কম্পন না ছড়ায়, সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছিল। সেজন্য মাটিতে কোনওভাবে তরঙ্গ কম্পন ছড়ায়নি। তাহলে হাওয়ায় ভেসে আসা শব্দ আমার আপনার মতোই শুনতে পায় সাপেরা! সাপ্রতিক গবেষণা তো তাই বলছে। তবে বিজ্ঞানীদের এও বক্তব্য, ৬০০ হার্ৎজের নিচের কম্পাঙ্কের শব্দই একমাত্র শুনতে পায় সাপেরা। আর মানুষের কথাবার্তা? এই বিষয়ে এখনও সঠিক করে কিছু বলতে পারেননি গবেষকরা। তবে তাঁদের বক্তব্য, আমরা যদি জোরে জোরে কথা বলি, তখন সেই কথা সাপ ঠিকই শুনতে পায়!