সিগারেট যারা কখনই খান না, তারাই বেশি আক্রান্ত ফুসফুসের ক্যান্সারে! কেন?
Non Smoker Lung Cancer: যারা কখনও ধূমপান করেননি তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার-সম্পর্কিত মৃত্যুর পঞ্চম প্রধান কারণ হিসাবে মনে করা হয়।
মাঝেমাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ার মিমভূমিতে একটি মজার কথা ঘুরে বেড়ায়, যাতে যারপরনাই মজা পান ধূমপায়ীরা। বলা হয়, সিগারেট নয়, জন্মই মৃত্যুর কারণ। সিগারেট মানেই ক্যান্সার— এই ধারণাটি নস্যাৎ করে দেওয়ার বিবিধ যুক্তি ধূমপায়ীদের মধ্যে আছে। তবে বিজ্ঞান বলে, ধূমপান ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ায়। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, যারা ধূমপান করেননি কখনও, তাঁদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঘটনা বাড়ছে! এবং এই বৃদ্ধিতে অবদান থাকতে পারে বায়ু দূষণেরও। বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে দ্য ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিন জার্নালে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (IARC), ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন সহ বিভিন্ন গবেষকরা, গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি ২০২২-এর তথ্য সহ নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে চারটি উপপ্রকারের স্তরের ফুসফুসের ক্যান্সারের বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছেন - অ্যাডেনোকার্সিনোমা, স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা, ছোট- এবং বড়-কোষের কার্সিনোমা।
অ্যাডেনোকার্সিনোমা হচ্ছে এমন একটি ক্যান্সার যা শ্লেষ্মা এবং হজমের মতো তরল তৈরি করে এমন গ্রন্থিগুলিতে শুরু হয়। গবেষকরা দেখেছেন, পুরুষ এবং মহিলাদের দুইয়ের মধ্যে এই ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে।
২০২২ সালে দেখা গেছে, ফুসফুসের ক্যান্সারের এই প্রকারটি, ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখে। বিশ্বজুড়ে কখনও ধূমপান করে না এমন ৫৩-৭০ শতাংশ ব্যক্তিদের মধ্যে এই ক্যান্সার পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলছেন, ফুসফুসের ক্যান্সারের অন্যান্য ধরনগুলির তুলনায়, অ্যাডেনোকার্সিনোমার ঝুঁকি সিগারেট খাওয়ার সঙ্গে খানিকটা সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়। দ্য ল্যানসেট রেসপিরেটরি মেডিসিন জার্নালে লেখা হয়েছে, "বিশ্বব্যাপী অনেক দেশেই ধূমপানের প্রবণতা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। তবে যারা কখনও ধূমপান করেননি তাদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সারের অনুপাত বেড়েছে।"
গবেষণার প্রধান লেখক ফ্রেডি ব্রে বলছেন, "ধূমপানের ধরনে পরিবর্তন এবং বায়ু দূষণের সরাসরি প্রভাব ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকির ধরন পরিবর্তনের প্রধান নির্ধারকগুলির মধ্যে একটি।" আর ফুসফুসের ক্যান্সার হচ্ছে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ।
লেখক আরও বলছেন, "যারা কখনও ধূমপান করেননি তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার-সম্পর্কিত মৃত্যুর পঞ্চম প্রধান কারণ হিসাবে মনে করা হয়। এটি বেশিরভাগই অ্যাডেনোকার্সিনোমা হিসাবে ঘটে এবং সাধারণত মহিলাদের ও এশিয়ান জনসংখ্যার মধ্যে বেশি ঘটে।"
গবেষণায় লেখা হয়েছে, ২০২২ সালে দেখা গেছে, মহিলাদের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ফুসফুসের ক্যান্সারের ৯০৮৬৩০ টি নতুন সংক্রমণ ঘটে। যার মধ্যে ৫৪১৯৭১ টিই (৫৯.৭ শতাংশ) অ্যাডেনোকার্সিনোমা ছিল।" ২০২২ সালেই বিশ্বব্যাপী অ্যাডেনোকার্সিনোমায় আক্রান্ত মহিলাদের ৮০,৩৭৮ জনের মধ্যে দূষণ পদার্থের সন্ধানও মেলে।
গবেষকরা বলছেন, যারা তামাক এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে নানা কৌশ ও পন্থার বিকাশ ঘটাতে চাইছেন, বাস্তবায়ন ঘটাতে চাইছেন, সেই ক্যান্সার প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ এবং নীতি-নির্ধারকদের জন্য এই অবস্থাটি যথেষ্ট খতিয়ে দেখার বিষয়। ২০১৯ সালের একটি গবেষণা আগেই জানিয়েছিল, বিশ্বের প্রায় প্রত্যেক মানুষই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত বায়ুমানের মানদণ্ড পূরণ করে না এমন এলাকায় বসবাস করছেন। ফলে দূষণজনিত অসুস্থতা ও ক্যান্সার ধীরে ধীরে মহামারী হয়ে যাবে না, তা নিশ্চিত করে আর বলা যায় না।