এনকাউন্টারে নিহত, মাথার দাম ১ কোটি! কে ছিলেন এই প্রবীণ মাওবাদী নেতা?

Maoist Leader Chalpati: চালাপতির কাছে বাস্তারের ঘন, দুর্ভেদ্য বন ছিল হাতের তালুর মতো চেনা। ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তিগত রক্ষী থাকত তাঁর নিরাপত্তায়।

বছরের শুরু থেকেই মাওবাদী দমনে উথালপাথাল চলছে ছত্তিশগড়ের জঙ্গল জুড়ে। একাধিক এনকাউন্টাআর, একাধিক মৃত্যু। ওড়িশার নুয়াপড়া জেলার সীমান্ত থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ছত্তিশগড়ের কুলারিঘাট সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মাওবাদীদের উপস্থিতি সম্পর্কে গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান শুরু করে ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি), সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ), ছত্তিশগড়ের কোবরা এবং ওড়িশার স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) নিরাপত্তা কর্মীদের একটি যৌথ দল। ছত্তিশগড়ে এখনও অবধি হওয়া এনকাউন্টারে প্রায় ৪০ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে খবর। গতবছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে এই অঞ্চলে সব মিলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ২০০ জনেরও বেশি মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গত বছর নিহত ২১৯ জন মাওবাদীদের মধ্যে ২১৭ জনই ছিলেন বাস্তার অঞ্চলের। আর ওই একই বছরে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রায় ১৮ জন নিরাপত্তা কর্মী প্রাণ হারিয়েছিলেন। অন্যদিকে মাওবাদীদের আক্রমণে নিহত সাধারণ নাগরিকের সংখ্যা ৬৫। তবে সাম্প্রতিক এনকাউন্টারটিতে এমন একজন মাওবাদী নেতার প্রাণ গিয়েছে, যাঁর মাথার দাম ছিল ১ কোটি টাকা!

২০ জানুয়ারি রাতে ছত্তিশগড়ের গারিয়াবন্দ জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ২০ জন মাওবাদী। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন জয়রাম রেড্ডি। ছত্তিশগড়-ওড়িশা সীমান্তে জঙ্গলে গুলি চলাকালীন নিহত হন তিনি। কে এই জয়রাম রেড্ডি? কেনই বা তাঁর মাথার দাম ছিল ১ কোটি?

আরও পড়ুন- মাথার দাম ৪০ লক্ষ! মাওবাদী কমান্ডার হিডমার নাগাল পেতে কেন মরিয়া নিরাপত্তাবাহিনী?

জয়রাম রেড্ডির একাধিক নাম। কেউ ডাকেন রামচন্দ্র রেড্ডি বলে, কেউ ডাকেন আপারাও বলে। কারও কাছে তিনি রামু, কারও কাছে আবার চালাপতি। মাওবাদীদের বরিষ্ঠ তথা প্রবীণ নেতা চালাপতির বয়স প্রায় ৬০ বছর। অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুরের মদনাপল্লের মানুষ তিনি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। মাওবাদী দলে বিশিষ্ট নেতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মাওবাদীদের সংগঠনের শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্যর (সিসিএম) ক্যাডার হয়েছিলেন চালাপাতি।

এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার অর্থ নিষিদ্ধ এই সংগঠনের সংবেদনশীল অপারেশনগুলির গোপন সমস্ত তথ্য জানতেন তিনি। সেই সময়েই এই মাওবাদী নেতার মাথার দাম নির্ধারিত হয় ১ কোটি টাকা। পুরস্কারের এই বিপুল মূল্য বলে দিচ্ছে, নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ নিশানা ছিলেন জয়রাম রেড্ডি।

চালাপতির কাছে বাস্তারের ঘন, দুর্ভেদ্য বন ছিল হাতের তালুর মতো চেনা। ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তিগত রক্ষী থাকত তাঁর নিরাপত্তায়। AK-47 এবং SLR রাইফেলের মতো উন্নত অস্ত্রচালনায় দক্ষ চালাপতি মূলত মাওবাদীদের আক্রমণের কৌশল তৈরিতে এবং অপারেশনে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কৌশলগত দক্ষতা, নেতৃত্বের দক্ষতা এবং দুর্গম অঞ্চলে সম্পদ একত্রিত করার ক্ষমতার জন্যই এই অঞ্চলের 'মোস্ট ওয়ান্টেড' মাওবাদী নেতাদের একজন হয়ে উঠেছিলেন চালাপাতি।

মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় ক্রমেই এনকাউন্টারের পরিমাণ বাড়তে থাকায় গারিয়াবন্দ-ওড়িশা সীমান্তে অবুঝহমাদে কয়েক মাস আগেই নিজের নতুন ঘাঁটি স্থাপন করেন চালাপতি। ভাবা হয়েছিল, এই জায়গাটি সম্ভবত নিরাপদ, যেখান থেকে নিজেদের অভিযান চালাতে পারবেন চালাপাতি। তবে সেই জায়গাতেই নিহত হলেন তিনি।

More Articles