প্রার্থীর সম্পত্তির হিসেব জানার অধিকার নেই ভোটারের! সুপ্রিম কোর্টের যে রায় ঘিরে শোরগোল

Voter's Right: শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, প্রার্থীর সমস্ত সম্পত্তির হিসেব নেওয়ার অধিকার ভোটারের নেই। উল্টে প্রার্থীর গোপনীয়তার অধিকারের পক্ষেই সওয়াল করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

শিয়রে লোকসভা ভোট। দিন কয়েক আগেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানিয়েছিলেন, টাকার অভাবে তিনি নাকি ভোটে লড়তে পারবেন না। তার পরেই শোরগোল ওঠে তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ নিয়ে। এখনও কান পাতলেই শোনা যাবে বিভিন্ন কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রার্থীর সম্পত্তির হিসেব। নির্বাচনী হলফনামায় কে কত সম্পত্তির কথা ঘোষণা করেছেন, সে নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে জোর চর্চা। কিন্তু মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে, জনগণ তথা ভোটারের তেমন কোনও অধিকারই আদতে নেই। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, প্রার্থীর সমস্ত সম্পত্তির হিসেব নেওয়ার অধিকার ভোটারের নেই। উল্টে প্রার্থীর গোপনীয়তার অধিকারের পক্ষেই সওয়াল করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। সিপিআইএম নেতা শতরূপ ঘোষের ২২ লক্ষ টাকার গাড়ি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল বঙ্গে। কমিউনিস্ট যাপনে কেন এত বিলাসিতা, এই প্রশ্ন তুলে শতরূপকে ব্যাপক বিঁধেছিলেন কুণাল ঘোষ-সহ একাধিক তৃণমূল নেতা। প্রশ্ন উঠেছিল, হলফনামায় সম্পত্তির পরিমাণ ২ লক্ষ হলে কীভাবে ২২ লক্ষ টাকার গাড়ি চড়েন শতরূপ? সেই ঘটনার কথা হয়তো মনে আছে সকলেরই। সম্প্রতি বাংলারই প্রথম দফার ভোটের একাধিক প্রার্থীর হলফনামা অনুযায়ী সম্পত্তির পরিমাণ সামনে এসেছে। ১৯ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে লোকসভার ভোট। প্রথম দফায় বাংলার ভোট রয়েছে উত্তরবঙ্গে। সেখানকার ৩৭ জন প্রার্থীর মধ্যে অন্তত দশ জনের কোটি টাকার উপরে সম্পত্তি রয়েছে বলে খবর। সেই তালিকায় শুধু বিজেপি, তৃণমূলই নয়, রয়েছে সিপিআইএম, এসইউসিআই এবং নির্দল প্রার্থীরাও। সেই নিয়ে জোর শোরগোল শুরু হয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। সেই সমস্ত বিতর্কের মুখেই এবার প্রার্থীদের সম্পত্তির হিসেব নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পড়ুন: প্রথম দফাতেই ‘কোটিপতি’দের মেলা! অবাক করবে বাংলার যেসব প্রার্থীর সম্পত্তির পরিমাণ

অবশ্য সম্পূর্ণ পৃথক একটি মামলায় এই রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। অরুণাচল প্রদেশের তেজু বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২০১৯ সালে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন করিখো ক্রি নামে এক নির্দল প্রার্থী। সেই ভোটে জিতেওছিলেন করিখো। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থী নুনি তায়ং করিখোর বিরুদ্ধে গৌহাটি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫১ সালের ধারা ৯০(এ)(সি)-এর অধীনে একটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন।দাবি করেন, ভোটের মনোনয়ন দাখিলের সময়ে করিখো স্ত্রী ও ছেলের মালিকানাধীন তিনটি গাড়ির কথা সম্পত্তির হিসেবের হলফনামায় জানাননি। এই মামলায় করিখোর ভোট বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল গৌহাটি হাইকোর্ট। সেই মামলাটি গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে।

মঙ্গলবার ওই মামলায় গৌহাটি হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস ও সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মনোনয়ন দাখিলের আগে যদি কোনও প্রার্থী নিজের কেনা কোনও যানবাহন উপহার হিসেবে দিয়ে থাকে বা বিক্রি করে দিয়ে থাকে, তাহলে তা সেই ব্যক্তির মালিকানাধীন হিসেবে গণ্য হতে পারে না। করিখোর ক্ষেত্রেও তাঁর স্ত্রী বা পুত্রের গাড়ি কোনওভাবেই তাঁর সম্পত্তির আওতায় গণ্য হবে না। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যে কোনও প্রার্থী যদি না চায়, তাহলে তাঁর বা তাঁর পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিটি অস্থাবর সম্পত্তির হিসেবনিকেশ প্রকাশ না-ও করতে পারে। বিশেষত যদি সে সম্পত্তি যদি যথেষ্ট মূল্যবান না হয় বা তার মাধ্য়মে প্রার্থীর বিলাসবহুল জীবনের দিকে দিকনির্দেশ না করে।

আরও পড়ুন: ‘ভোটে লড়ার টাকা নেই’! কতটা সত্যি বলছেন নির্মলা?

প্রশ্ন হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের অপব্যবহার করা হবে না তো দেশের আসন্ন সমস্ত ভোটে। সামনেই লোকসভা ভোট। ক্রমে সামনে আসতে শুরু করেছে একের পর এক প্রার্থীর ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসেবনিকেশ। একাধিক হলফনামা দেখে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় দেশবাসীর। কারওর কাছে অস্থাবর হিসেবে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। কারওর কাছে বিলাসবহুল বহুমূল্য গাড়ি, বাড়ি। এখনও পর্যন্ত ভোটের আগে জমা করা হলফনামায় সেই সব তথ্য দিতে বাধ্য থাকতেন প্রার্থীরা। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরে সেই জায়গাটা আদৌ রক্ষিত হবে কি! লোকসভা ভোটের আগে ইলেক্টোরাল বন্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে যথেষ্ট হইচই হয়েছে। যার মাধ্যমে কয়েকশো কোটি টাকা ঢুকেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অ্যাকাউন্টে। যে ঘটনাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্নীতি বলে ঘোষণা করেছেন কোনও কোনও অর্থনীতিবিদ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিজেপির প্রণয়ন করা সেই প্রকল্পকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। এসবিআইকে বাধ্য করা হয় সেই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনতে। আর তার পরেই সামনে এসেছে ইলেক্টোরাল বন্ড মারফত একাধিক রাজনৈতিক দলের কোষাগার ভরার বিষয়টি। এবার হলফনামায় সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য জানানোর মতো বিষয়টিকে প্রার্থীর গোপনীয়তার অধিকারের আওতায় ফেলার কারণে ফাঁক গলে জায়গা করে নেবে না তো আরও বড় কোনও দুর্নীতি? উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্নও।

More Articles