কেজরি ছাড়া পেলেও হেমন্তের কপালে শুধুই ভর্ৎসনা! কেন সুপ্রিম কোর্টে জামিন পেলেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী?

Hemant Soren: শুধু যে জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে তা নয়, সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে হেমন্ত সোরেন ও তাঁর আইনজীবীকে।

লোকসভা ভোটের মুখে মুখে তিহাড় জেল থেকে অন্তর্বর্তী জামিনে ছাড়া পেয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আশা ছিল, কেজরির দেখানো পথেই মুক্তি পাবেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেনও। তবে তেমন কিছু ঘটল না বাস্তবে। বরং সুপ্রিম কোর্টে খারিজ হয়ে গেল তাঁর জামিনের আবেদন। ঝাড়খণ্ডে ২ দফার ভোটগ্রহণ ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে গত ১৩ এবং ২০ মে তারিখে। আগামী ২৫ মে ও ১ জুন তারিখ, শেষ দুই দফাতেও ভোট রয়েছে ঝাড়খণ্ডে। তার আগে প্রচারের জন্য জেল থেকে কিছুদিনের জন্য হলেও ছাড়া পাবেন হেমন্ত, আশা ছিল এমনটাই। ইডির গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদনও করেছিলেন তিনি সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু ফল হল উল্টো।

শুধু যে জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে তা নয়, সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে হেমন্ত সোরেনকে। সুপ্রিম কোর্টে গ্রেফতারি বিষয়ক দু’টি পৃথক মামলা করেছিলেন সোরেন। একটি ছিল গ্রেফতারির বিরুদ্ধে। অন্যটি ছিল জামিনের আবেদন জানিয়ে করা মামলা। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চে মামলাগুলি শুনানির জন্য ওঠে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ হেমন্তের বিরুদ্ধে নিয়ে আসে আরও গুরুতর অভিযোগ। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, আদালতের কাছে তথ্য গোপন করেছেন সোরেনের আইনজীবীরা। তাই সোরেনের আবেদনে সাড়া দেয়নি আদালত।

আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্ত কেজরিওয়াল, সুপ্রিম কোর্টের এক সিদ্ধান্তে বদলে যাবে দিল্লি ভোটের ফলাফল?

গত ৩১ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডে জমি দুর্নীতি সংক্রান্ত বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতা ও রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। সম্প্রতি লোকসভা ভোটে প্রচারের জন্য অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন জানান তিনি সুপ্রিম কোর্টে। গত ১৩ মে ‘বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইন’(পিএমএলএ) সংক্রান্ত রাঁচির বিশেষ আদালত হেমন্তের জামিনের আবেদন খারিজ করেছিল। সেই আর্জি নিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন জেএমএম প্রতিষ্ঠাতা শিবু সোরেনের পুত্র। তাঁর আর্জি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের মতো তাঁকেও লোকসভা ভোটে প্রচারের সুযোগ দেওয়া হোক।

তবে এদিন শুনানিতে আদালত জানিয়ে দেয়, সোরেনের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ, ইতিমধ্যে নিম্ন আদালতে সেগুলি বিচারাধীন। সেই তথ্য সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়নি। বিচারপতি দত্তের মন্তব্য, ‘‘আপনি তো সমান্তরাল ভাবে দু’জায়গায় প্রতিকার খুঁজছেন। সত্যকে ধামাচাপা দিচ্ছেন।’’ সোরেনের আইনজীবী কপিল সিব্বলের উদ্দেশে বিচারপতির আরও মন্তব্য, ‘‘এ ভাবে সত্য গোপন করে আদালতে আপনি আসতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে আপনাকেও দোষমুক্ত বলা যায় না। আমরা আশা করেছিলাম, আপনার মক্কেল অকপটে আদালতের সামনে আসবেন। কিন্তু আপনারা তো তথ্য গোপন করছেন।’’

আরও পড়ুন: ইডি-র হাতে গ্রেফতার হেমন্ত সোরেন, কোন পথে এবার ঝাড়খণ্ডের রাজনীতি?

ভোটপ্রচারের জন্য আম আদমি পার্টির নেতা কেজরিওয়ালের আবেদন মঞ্জুর করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বেঞ্চের মতে, কেজরিওয়ালকে যখন ১০ মে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি বিচারাধীন আদালতে আদৌ জামিনের আবেদন করেননি। এমনকী নিম্ন আদালতেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রাথমিক অপরাধ তেমন প্রমাণিত হয়নি। এদিকে, ঝাড়খণ্ডের বিচারাধীন আদালতে সরকারি অর্থ তছরুপ আইনে সোরেনের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রাথমিক তথ্য মিলেছে বলে জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আর সে কারণেই শীর্ষ আদালতে ফের ধাক্কা খেতে হল ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। ২৫মে ভোট মেটার পর ২ মে নাগদ ফের জেলে ফিরে যেতে হবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালকে। তবে তার মধ্যে দেদার প্রচারে দেখা গিয়েছে কেজরিকে। কিন্তু হেমন্ত সোরেনের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল না কেজরির মতো। গোটা প্রচার এবং ভোট পর্ব জেলেই কাটাতে হবে জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেনকে।

More Articles