অবিবাহিত মহিলাদের কাজ বেআইনি! আফগানিস্তানে যে ভয়াবহ 'শাসন' চালাচ্ছে তালিবান
Taliban in Afghanistan: তালিবানি শাসনে ভালো নেই আফগানিস্তান। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি সম্ভবত মেয়েদেরই। তাঁদের একাধিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। পড়াশোনা থেকে শুরু করে চাকরিবাকরি, প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই তালিবানের লালচোখ।
তালিবান শাসন মানেই মানবাধিকার তলানিতে। ফের আফগানিস্তানে জারি নয়া ফতোয়া। এবার অবিবাহিত মহিলাদের কাজের অধিকার ছিনিয়ে নিল তালিবান। যাদের কোনও পুরুষ অভিভাবক নেই, অর্থাৎ যারা অবিবাহিত, তাদের থেকে কেড়ে নেওয়া হল একাধিক সুযোগসুবিধা। সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের রিপোর্ট তেমনটাই জানিয়েছে।
তালিবানি শাসনে ভালো নেই আফগানিস্তান। নানা রকমের নিষেধাজ্ঞা, আইনকানুন জারি করেছে সেখানে তালিবানেরা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি সম্ভবত মেয়েদেরই। তাঁদের একাধিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে। পড়াশোনা থেকে শুরু করে চাকরিবাকরি, প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই তালিবানের লালচোখ। এমনকী কেড়ে নেওয়া হয়েছে মেয়েদের সুন্দর থাকার অধিকারটুকুও। বিউটি পার্লার বস্তুটিকেই সেখানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। না, সেখানে মেয়েদের সাজার অধিকার রয়েছে, না বিউটি পার্লারে কারওর কাজ করার।
মেয়েদের চাকরি করা নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি তালিবানদের। সম্প্রতি আফগানিস্তানের ভাইস অ্যান্ড ভার্চুটি মন্ত্রকের কর্মকর্তারা এক মহিলাকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চাকরির শর্ত হিসেবে বিয়ে করার পরামর্শ দেন। তাঁকে জানানো হয়, একজন অবিবাহিত মহিলার যে কোনও রকম কাজ করাই ঠিক কথা নয়। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে ফের ক্ষমতায় আসে তালিবান। আর তার পর থেকেই শুরু হয়েছে ভয়াবহ দিন। স্বাভাবিক জনজীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত সেখানকার বেশিরভাগ নাগরকিই। মেয়েদের ষষ্ঠ শ্রেণির পর পড়াশোনার অধিকার নেই আর।
আরও পড়ুন: তালিবান শাসনের দু’বছর পূর্তি! কেমন আছেন আফগানিস্তানের মেয়েরা?
ইতিমধ্যেই ড্রেসকোড চালু করা হয়েছে আফগানিস্তানে। হিজাব ও ইসলামিক হেডস্কার্ফ পরার অনুশাসন যাঁরা অমান্য করবেন, তাঁদের গ্রেফতার করছে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার। ২০২২ সালের মে মাস নাগাদ একটি ফতোয়া জারি করে তালিবান জানায়, মেয়েদের শুধু চোখ দু'টি ছাড়া শরীরের কোনও অংশই দেখা যাবে। এর আগে যখন আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এসেছিল তালিবান, অর্থাৎ ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও আফগানিস্তানের মহিলাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত বোরখা পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ফের সেই নির্দেশ দেশে বলবৎ করেছে তালিবান সরকার।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। তিনি জানিয়েছেন, যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে আফগানিস্তানে মানুষের বসবাসই অকল্পনীয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত বছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট পেশ করেছে জাতিসঙ্ঘ, সেখানে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে যেসব মেয়েদের পুরুষ অভিভাবক নেই, তাদের সম্পূর্ণ রূপে ব্রাত্য করার চেষ্টা করছে তালিবান সরকার। তাঁদের সামাজিক জীবন নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
গত অক্টোবর মাসে তিন জন মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে আটক করে আফগান সরকার। জানিয়ে দেওয়া হয়, পুরুষ অভিভাবক অর্থাৎ স্বামী ছাড়া কাজ করতে পারবেন না কোনও মহিলা। ধৃত তিন জনকে লিখিত হলফনামা দেওয়ার পরেই ছাড়া হয়েছিল। ভাইস অ্যান্ড ভার্চুয়াল মন্ত্রক পাকতিয়া প্রদেশে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া কোনও মহিলাকে স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তালিবানের নীতিপুলিশরা নিয়মিত স্কুল, কলেজ, অফিস এবং পাবলিক প্লেসগুলিকে নজরদারি চালাচ্ছে। ডিসেম্বরে কান্দাহার প্রদেশে বাস টার্মিনালগুলিতে কড়া নজরদারি চালানো শুরু হয়, যাতে কোনও স্বামীহীন মহিলা দীর্ঘ দুরত্ব যাতায়াত না করতে পারেন। বাসচালকদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে একা নারীদের বাসে উঠতে না-দেওয়া হয়। এমনকী গর্ভনিরোধক কেনার জন্যও মেয়েদের গ্রেফতার করা হচ্ছে দেশে। যদিও এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত ঘোষিত কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা অলীক স্বপ্ন, তালিবানের অধীনে যেভাবে দিন কাটে আফগানিস্তানের মেয়েদের
সব মিলিয়ে আফগানিস্তানে লাগাতার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। যদিও তালিবানের তরফে দাবি, জাতিসঙ্ঘ ইসলামিক আইনকে সমালোচনা করার জন্যই এই ধরনের ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করছে। তবে তালিবান যা-ই বলুক না কেন, আফগানিস্তানে যে পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কবে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন আফগানিস্তানবাসী, সেই আশা বোধহয় সেই তিমিরেই।