১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী, কীভাবে জন্ম হল টেডি বিয়ারের?
Teddy Bear History : নানা রঙের ভালুকের মাঝে বসে, সেসব চটকিয়েই আনন্দ সবার। বাড়ির খুদে থেকে প্রেমিকা, এমনকী বয়স্করাও টেডি বিয়ারে মজে।
ভ্যালেনটাইন্স ডে এলেই নিজের প্রিয় মানুষটির জন্য গোলাপ, চকোলেট কিনে আনছেন। একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। সেসবের পাশাপাশি দু’জনের সঙ্গে বসে আছে ছোট্ট একটি ভালুক। এখন অবশ্য মানুষের ঘরে ঘরে তার উপস্থিতি। নানা রঙের ভালুকের মাঝে বসে, সেসব চটকিয়েই আনন্দ সবার। বাড়ির খুদে থেকে প্রেমিকা, এমনকী বয়স্করাও টেডি বিয়ারে মজে। টেডি বিয়ারের নাম শোনেনি, বা একটু হলেও দেখেনি, এমন মানুষ বোধহয় কমই আছে। কেনার সামর্থ্য না থাকুক, দোকানে সাজানো এই লোমশ খেলনার জনপ্রিয়তাই অন্য পর্যায়ের।
আদতে এটি একটি সফট টয়। ছোট বাচ্চারাও টেডি বিয়ারকে জাপটে ধরে শুতে যায়। মন খারাপ হলে অনেকেরই মধ্যরাতের সঙ্গী হয় টেডি বিয়ার। প্রেমের সম্পর্কেও এই ছোট্ট ভালুকের অবদান অনেক। একটা টেডি উপহার হিসেবে পেলেই প্রিয় মানুষটি গলে জল হয়ে যায়। আজ থেকে নয়, যুগ যুগ ধরে মানুষের দৈনন্দিন ওঠা-পড়া, সুখ দুঃখের সঙ্গে একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই টেডি বিয়ার। ইতিমধ্যেই তার বয়স ১০০ পেরিয়েছে। ২০২৩ সালের হিসেবে টেডি বিয়ারের বয়স ১২০ বছর! এতগুলো বছর পেরনোর পরও জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি এতটুকুও। কীভাবে জন্ম হল টেডি বিয়ারের? কেমন ছিল সেই ইতিহাস?
আরও পড়ুন : প্রেমিকা নেই? গরুকে জড়িয়ে ধরেই কাটবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে! আক্ষেপ মোচনের যে পথ দেখাল কেন্দ্র
টেডি বিয়ারের জন্মের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রেসিডেন্ট। তিনি থিওডোর রুজভেল্ট। কিন্তু তার সঙ্গে টেডি বিয়ারের কী সম্পর্ক? এখান থেকে শুরু হয় ইতিহাসের পথ চলা। একটু ফিরে যাওয়া যাক ১৯০২ সালে। নতুন একটা শতাব্দী সবে শুরু হয়েছে। সেই সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন এই থিওডোর রুজভেল্ট। ১৯০২ সালে একবার বন্দুক নিয়ে শিকারে বেরন তিনি। মিসিসিপির জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। মন-মেজাজ অনেকদিন ধরেই ভালো নেই। তার ওপর অনেকক্ষণ ঘুরেও একটা ভালো শিকার পর্যন্ত করতে পারছেন না। মুখ কালো করে বসে রইলেন রুজভেল্ট।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনমরা হয়ে বসে আছেন! এই দৃশ্য দেখতে পারলেন না তাঁর সঙ্গীরা। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ছুট লাগালেন জঙ্গলের ভেতর। দেখলেন, একটি কালো, ছোট্ট ভালুক জঙ্গলের ভেতর বসে রয়েছে। একেবারেই বাচ্চা সে। তাকেই ধরে নিয়ে এলেন তাঁরা। সামান্য আহতও হয়ে গিয়েছিল ওই ছোট্ট ভালুকছানাটি। সেই অবস্থাতেই তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে গিয়ে বলা হয়, একটি ভালুক পাওয়া গিয়েছে। নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে মারলেই খেল খতম।
বন্দুক নিয়ে সেই ভালুকছানার কাছে গিয়ে অবাক হয়ে যান প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। ছোট্ট একটা ছানা, কী দোষ করেছে সে? এভাবে অসহায়ভাবে তাকে মারতে হবে! না, সেদিন ওই কাজটি করতে পারলেন না প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। নির্দেশ দিলেন, ওই ভালুকছানাটিকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে এই খবর ছড়িয়ে পড়ল আমেরিকায়। খেয়াল রাখতে হবে, বিংশ শতকের শুরুর সময় সেটা। পশু শিকার নিয়ে তখনও কড়া আইন ছিল না কোনও। তারইমধ্যে খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের এমন মানবিক কাজ দেখে মুগ্ধ হলেন অনেকে।
আরও পড়ুন : আম্বানি, আদানিও এই গোলাপ কিনতে পকেট হাতড়ান! বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলাপ এটিই
আমেরিকার সংস্কৃতির মধ্যেও প্রভাব ফেলল এই একটি ঘটনা। খবরের কাগজে কার্টুন বেরোল। সোশ্যাল মিডিয়া তখন দূর জগতের গ্রহ; কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই সেই কার্টুন ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। ব্রুকলিনের একটি খেলনার দোকানের মালিক মরিস মিশমের নজরে পড়ে সেই কার্টুন ও ভালুকের কাহিনি। এখান থেকেই অনুপ্রাণিত হলেন তিনি। নিজের দোকানে বিক্রি বাড়ানোর জন্য নতুন একটি সফট টয় তৈরি করলেন মরিস। ওই ভালুকের মতো চেহারা তার; ছোট্ট, মিষ্টি, কিউট একটা নরম খেলনা। ব্রুকলিনের সেই মরিস মিশম নতুন এই সফট টয়ের নাম রাখলেন ‘টেডি বিয়ার’।
কিন্তু ‘টেডি’ কেন? কারণ, প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের ডাকনাম ছিল টেডি। প্রেসিডেন্টকে উৎসর্গ করেই এই খেলনার জন্ম, তাই এমন নাম। যাই হোক, প্রথম প্রথম ব্রুকলিনে নিজের দোকানে এই টেডি বিয়ার সাজিয়েরাখলেন মরিস। কিন্তু হঠাৎই দেখা গেল, সেই খেলনা কেনার জন্য লোকে বারবার দোকানে আসছে। সবার একটাই বক্তব্য, তাঁদের এই খেলনা চাই। বাধ্য হয়ে খোদ প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অনুমতি নিতে হয় মরিসকে। তারপরই ১৯০৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে টেডি বিয়ার তৈরি শুরু হয়। আজও সেই টেডি মানুষের নিত্যসঙ্গী।