ওয়েডিং ফটোগ্রাফার হয়ে বিয়ে করার সমস্ত ইচ্ছেই ঘুচে গেল

Wedding Photography: মধ্যবিত্ত বাড়ির পাত্ররা পৃথিবীর সব থেকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত প্রাণীদের একজন।

ছোটবেলায় হিন্দি ছবি দেখে আমারও মনে হতো 'হলদি', 'সঙ্গীত', 'মেহেন্দি' এসব করে সবাইকে চমকে দিয়ে একটা বিয়ে করব। যা থাকে কপালে! আমিই হয়ে গেলাম ওয়েডিং ফটোগ্রাফার! আমার বিয়ে করার সমস্ত ইচ্ছেই চলে গেল। পৃথিবীর সব শব্দকে মধুর মনে হলেও, বিসমিল্লা খাঁ-র সানাই অসহ্য হয়ে উঠল! সারারাত বিয়েবাড়িতে খেটে পরের দিন অন্য বিয়েবাড়ি গিয়ে ঝিমোচ্ছি, একটু পরেই গায়ে হলুদ হবে। সুন্দরী মহিলারা এগিয়ে আসছেন আমার দিকে! আচমকা বিসমিল্লা খাঁ তাঁর টিপিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বাজিয়ে আমার ঝিমুনি ভাঙিয়ে দিলেন! কার না মাথা গরম হয় বলুন?

মধ্যবিত্ত বাড়ির পাত্ররা পৃথিবীর সব থেকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত প্রাণীদের একজন। তারা এইদিক-ওইদিক মাঝেমধ্যেই দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে তাড়ায় হেঁটে চলে বেড়ান। সারাদিন তাঁরা ভাবেন, এই বুঝি ঝামেলা লাগল! মাঝেমধ্যে সামান্য শান্তির আশায়, বিয়েতে আসা বাল্যবন্ধুর সঙ্গে বাড়ির আশেপাশে গলিটলিতে লুকিয়ে সিগারেট টানেন আর "ধুর! বহুত ঝামেলা, বিয়ে করা" বলে দুশ্চিন্তার দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। আমি হলাম সিংহের পাশে লুকিয়ে থাকা হায়না। আমি জানি এই সিগারেট হাফ হওয়ার আগেই তাঁকে কেউ একটা ফোন করবেই। আর আমি লাফ দিয়ে "আমাকে দিয়ে দাও" বলে ফার্স্ট কাউন্টারে পুরো সিগারেটটা পেয়েই বাজিমাত করব।

আমি বিয়েবাড়িতে ছবি তুলতে যাচ্ছি মানেই, থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর কানে হেড ফোন। মিনিমাম হিউম্যান ইন্টার‍্যাকশন (অদরকারি) রেখে ছবি তোলায় ফোকাস। মাঝেমধ্যে আমি গানও চালাই না, শুধুই কানে হেডফোন গুঁজে রাখি যাতে লোকে ভাবে আমি গান শুনছি। এইসময় নিজেকে মনে হয়, ব্যাটম্যান! আমি কোনও এক বিশেষ ক্ষমতায় নিজেকে অদৃশ্য করে ফেলেছি, আমার পেছনে বসে থাকা কাকীমারা অবলীলায় তাই বলে চলেন, "ছাড় তো! যত ঢং! আমার জানা আছে এদের কত পয়সা! খালি দেখনদারি"! তারপর তাঁরা ওই দেখনদারেরই পয়সার লুচি গেলেন। এইসব অগণিত ঘটনা আমাকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে চরম ডিমোটিভেট করে দিয়েছে!

আরও পড়ুন- “আমি আপনার স্ত্রীকে বিয়ে করতে চাই” : নির্ভীক প্রেমিক জগজিৎ সিং রইলেন আড়ালেই

তবে সব থেকে বাজে ঘটনাটা লিখি। ২০১৭ সাল। এক সম্ভ্রান্ত বাঙালি বিয়ে। বরযাত্রী আসায় বিয়েবাড়িতে হঠাৎ হইচই। একজন ফটোগ্রাফার-ভিডিওগ্রাফার দরজায়, একজন ফটোগ্রাফার-ভিডিওগ্রাফার মেয়ের সামনে, আর আমি আর একজন ভিডিওগ্রাফার সিঁড়ির মাঝামাঝি। আমাদের সামনে পাত্রীপক্ষের কয়েকজন সিঁড়ি আটকে টাকা পয়সা চাইছে। এরপর উত্তর, প্রতুত্তর। তারপর হঠাৎ মিলেনিয়াম পার্ক হয়ে গেল অগ্নিগর্ভ নন্দীগ্রাম! পাত্রপক্ষের একজন বুড়ো মান্যবরের পাঞ্জাবীতে কাঁচা খিস্তি দিতেই, ভয়ে আমার এবং আমার ভিডিওগ্রাফারের থরহরি কম্প শুরু হলো। আমার ভিডিওগ্রাফার এইসব পরিস্থিতিতেও নার্ভ অফ স্টিল! আমাকে কানের কাছে এসে বলল, "দাদা ক্যামেরাটা পেছন দিকে নিয়ে নাও, মারামারি লাগলে, কেউ গায়ে এসে পড়লে ক্যামেরাটা যাবে।" এরপর আমরা দু'জন ক্যামেরা সমেত হাত পিঠের দিকে দিয়ে, রবীন্দ্রনাথ স্টাইলে ঝামেলা উপভোগ করতে লাগলাম আর মিটিমিটি হাসতে লাগলাম। সেদিন বুঝলাম, ভদ্রলোকদের মুখে খিস্তি আমার প্রিয় শব্দবন্ধের একটি! বিসমিল্লা খাঁয়ের সানাইয়ের জায়গায় এইসব কেউ বিয়েবাড়িতে বাজালে আমি বিয়ে করতাম।

যাই হোক এরপর পাত্র এবং পাত্রী দু'জন সকলকে- "আমরা বিয়ে করছি, যাদের থাকার থাকো, যাদের চলে যাওয়ার চলে যাও" বলে বিয়ে করতে বসল। পাত্রের বাবা চলে যাওয়া গ্রুপের একজন। ফলে পুরো বিয়ে জুড়ে অস্বস্তির আবহওয়া! বিয়ে শেষ করে আমার ভিডিওগ্রাফার আমাকে বলে, "অভিজিৎদা আর যদি কোনওদিন বিয়ে করি, আমার নাম শালা কুত্তা! কুত্তা!কুত্তা!" আমিও বললাম- "হ্যাঁ আমি করলেও আমার নাম কুত্তা কুত্তা কুত্তা"!

More Articles