আবিষ্কার করেছিলেন বাঙালি প্রত্নতাত্ত্বিক, শতবর্ষ পেরিয়েও যে রহস্য বয়ে বেড়াচ্ছে ‘মৃতের শহর’
Mohenjo-daro : শতবর্ষ আগে এক বাঙালি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার করেছিলেন এই শহর, কেমন আছে প্রাচীন মহেঞ্জোদারো?
ইতিহাস বইয়ের পাতায় অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবের মাটিতে আজ বিলুপ্তির পথে শেষ নিদর্শনটুকুও। একশো বছর সময় পেরিয়ে গিয়েছে অচিরেই, কালের স্রোতে বদলে গিয়েছে প্রাচীন অস্তিত্ব, তবে ইতিহাসের তো বদল হয় না। তাই সেই পথে আজও রয়েছে প্রাচীন রহস্যের খোঁজ। ‘মহেঞ্জোদারো’ নামটার সঙ্গে অবশ্য কম-বেশি সকলেই পরিচিত আমরা। স্কুল পাঠ্য হিসেবে ইতিহাস সিলেবাসে রয়েছে এর অস্বিত্ব। আজ থেকে প্রায় শতবর্ষ আগে ১৯২২ সালে প্রথম হদিশ মেলে এই প্রাচীন সভ্যতার।
ব্রিটিশ ভারতে, এক বাঙালি গবেষকের হাত ধরেই প্রথম প্রচারের আলোয় এসেছিল মহেঞ্জোদারো নামক জায়গাটি। সিন্ধু অঞ্চলের লারকানা জেলায় মাটি খুঁড়ে আস্ত একটা শহর আবিষ্কার করেন বাঙালি প্রত্নতাত্ত্বিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবিষ্কারেই শেষ নয়, এরপর শুরু হয় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তা থেকেই জানা যায়, মিশর ও মেসোপটেমিয়া-র সমসাময়িক এই নগরকেন্দ্রীক সভ্যতার সূচনা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে।
আরও পড়ুন - কেবল যিশু খ্রিস্টই ক্রুশবিদ্ধ হননি, বিশ্বের ভয়ংকর এই শাস্তির পেছনে রয়েছে কোন ইতিহাস?
তখনও ভারত ভাগ হয়নি, অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের হরপ্পা অঞ্চলে শুরু হল প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্বাবধানে খোঁজ পাওয়া গেল কয়েক হাজার বছরের প্রাচীন এক নগরসভ্যতার। পরের বছর খননকাজ শুরু হল সিন্ধুপ্রদেশের মহেঞ্জোদরোতে। যদিও দেশভাগের পর এ দু'টি অঞ্চল বর্তমানে পাকিস্তানের অন্তর্গত। কিন্তু ভারতের সঙ্গে এর যোগ যে অবিচ্ছেদ্য তা অস্বীকার করার জো নেই। বিশেষত যখন একজন বাঙালি স্বয়ং জড়িয়ে রয়েছেন এই আবিষ্কারের নেপথ্যে।
সিন্ধু নদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই সভ্যতা ইতিহাসের পাতায় সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত হলেও হরপ্পা মহেঞ্জোদারোকে নিয়ে রয়েছে একটা অন্য রহস্যের হদিশ। এই নগর সভ্যতা আবিষ্কারের হাত ধরেই ভারতীয় সভ্যতার ঊষাকাল এক ধাক্কায় পিছিয়ে যায় তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগে। যদিও এই বিশাল আবিষ্কারের নেপথ্যে একা রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছিলেন না, তার সঙ্গে ছিলেন জন মার্শাল, দয়ারাম সাহানি, মার্টিমার হুইলারের মতো বিশিষ্ট ঐতিহাসিকরাও।
আরও পড়ুন - বিখ্যাত সব ছবি, ভাস্কর্যে পুরুষাঙ্গের আকার এত ছোট কেন? চমকে উঠবেন কারণ জেনে
এখানে মাটি খুঁড়তেই চোখের সামনে ধরা দেয় আস্ত একটা ইতিহাস। রয়েছে পোড়া মাটির তৈরি দো’তলা বাড়ি ও বিরাট এক স্নানাগার। শুধু তাই নয়, ওই নির্দশনস্থলে মিলেছিল বহু মানুষের মৃতদেহ এবং কঙ্কাল। কালের স্রোতে যেন আস্ত একটা সভ্যতা হঠাৎ করেই চাপা পড়ে গিয়েছিল মাটির গর্ভে। সেই কারণেই এই মহেঞ্জোদারোকে ‘মৃতের শহর’ বলে উল্লেখ করেন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পেয়েছিল ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্মিত এই স্থানটি। এটি ছিল প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম জনবসতিগুলির মধ্যে একটি। শুধু তাই নয়, এই বিশ্বের একেবারে প্রথম দিকের শহরগুলির মধ্যেও অন্যতম মহেঞ্জোদারো। ১৯১১ সালের আগে পর্যন্ত অজানাই ছিল এই শহরের অস্তিত্ব। এর পর প্রত্নতাত্ত্বিকরা আভাস পেয়ে সন্ধান শুরু করেন। সিন্ধু নদীর উর্বর সমভূমি বরাবর সমৃদ্ধ এই জায়গাটি কিছুদিন আগেই পড়েছিল প্রকৃতির রোষানলে। পাকিস্তানের বন্যায় নিশ্চিহ্ন হতে বসে মহেঞ্জোদারোর প্রাচীন অস্তিত্ব। এখন কেবল আগামীর হতেই রয়েছে ব্যাটেলটা, প্রাচীন ঐতিহ্য কে তলিয়ে যেতে না দেওয়ার সবটুকু দায়ভার তার ওপরই।