বাড়ি তৈরিতে লেগেছে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ! কোথায় রয়েছে অষ্টম শতাব্দীর হারানো ‘কুটুমবাড়ি’ মন্দির?
Dwarahat : অষ্টম শতাব্দীর হারানো মন্দির এটি, কোথায় রয়েছে বিখ্যাত কুটুমবাড়ি?
উত্তরাখণ্ড মানেই ভারতের পর্যটন মানচিত্রে যার জায়গা যথেষ্ট পাকা। প্রসিদ্ধ নৈনিতাল থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটারের পথ, সেখানেই রয়েছে রানিখেত।এই রানিখেত থেকে দেড় ঘণ্টার মতো দূরত্বে আলমোড়া। এই আলমোড়া শৈলশহরের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে উত্তরাখণ্ডের আরেকটি সুন্দর গ্রাম, যার নাম দোয়ারাহাট। উত্তরাখণ্ডের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলির মত জনপ্রিয় নয় ঠিকই, তবে এই দোয়ারাহাট গ্রামের মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে এক অন্যরকমের ইতিহাস।
আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে এই পাহাড়ি গ্রামেই খুঁজে পাওয়া গিয়েছে একটি বিশেষ মন্দির। ২০০০ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল এই মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ। আলমোড়ার কাছে দ্বারাহাটে অবস্থিত এই মন্দিরটির নাম কুটুমবাড়ি মন্দির। এক সময় ঝোড়ো হাওয়ায় ভেঙে গিয়েছিল এই মন্দিরটি। তাই আর্কিওলোজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার শীর্ষ কর্তৃপক্ষ অষ্টম শতাব্দীর এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটিকে হারিয়ে যাওয়া নিদর্শন বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল।
যদিও এই ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিস্তম্ভটির আসল রূপের কোনও অস্তিত্বই অবশিষ্ঠ নেই আজ আর। তবে এর ধ্বংসাবশেষের টুকরোগুলো আজও স্মৃতি হিসেবে পড়ে রয়েছে আশেপাশের অনেক বাড়িতেই। জানা যায়, গ্রামবাসীরা অনেকেই নিজেদের বাড়ি তৈরির সময় এই মন্দিরের অবশিষ্ট উপকরণগুলি ব্যবহার করেছিলেন৷ পাশাপাশি এও জানা গিয়েছে যে, স্থানীয়রা নাকি সৌভাগ্য আনার অভিপ্রায়ে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষকে নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু এর ঐতিহাসিক প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেননা বিশেষ কেউই।
ASI-এর দেরাদুন সার্কেলের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, অবশিষ্টাংশগুলিকে গ্রামবাসীরা তাঁদের উঠোন, বারান্দা এবং এমনকী দরজার অংশ তৈরিতেও ব্যবহার করেছিলেন। অথচ এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ঠিক কতটা হতে পারে সে নিয়ে বিশেষ কোনও আলোচনার সুযোগ পর্যন্ত হয়নি। ASI-এর একজন সিনিয়র আধিকারিক সূত্রে জানা যায়, দোয়ারাহাটে প্রায় বারোটি এমন বাড়ি তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন যাতে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের সামগ্রী ছিল।
আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার সুপারিনটেনডেন্ট তথা প্রত্নতাত্ত্বিক মনোজ কুমার সাক্সেনা বলেছেন যে, কুটুমবাড়ি মন্দিরটি ২৬ মার্চ, ১৯১৫ তারিখে অন্যান্য সাতটি স্মৃতিস্তম্ভের সাথে এই বিভাগের সুরক্ষার অধীনে আসে। যার সর্বশেষ উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯৫৭ সালের একটি প্রতিবেদনে। যদিও পরবর্তীকালে ১৯৬৪ সালের একটি জরিপে, মন্দিরের ভৌত প্রমাণ খুব কমই মাটিতে পাওয়া যায় বলে জানা যায়।
যদিও পর্যটন মানচিত্রে দোয়ারাহাটের জনপ্রিয়তা উত্তরাখণ্ডের মতো নয়, তবুও এখনকার এই সব প্রাচীনকালে তৈরি মন্দিরগুলোর জন্যই আজও মানুষ ভিড় জমায় দোয়ারাহাটে। এমনকী এই গ্রাম বহু পর্যটকদের কাছে দোয়ারাহাট মন্দির নামেও পরিচিত। দোয়ারাহাটের অর্থ হল ‘স্বর্গের পথ’। অর্থাৎ অনেকটাই বিশ্বাস করেন, এই গ্রাম থেকে নাকি স্বর্গে যাওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তাই অনেকেই ভ্রমণের জন্য বেছে নেন এই স্থানটিকে। ধর্মীয় তাৎপর্য ছাড়াও দোয়ারাহাটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। নীল খোলা আকাশ আর সবুজে ঘেরা পাহাড় সঙ্গে চারিদিকের নিদারুণ নিস্তব্ধতা, মন ভালো করতে বাধ্য। কেউ যদি নিরিবিলি জায়গার খোঁজে থাকেন, একান্তে কিছুটা সময় প্রকৃতির সঙ্গে কাটাতে চান তাহলে ঘুরে যেতে পারেন দোয়ারাহাট। যাতায়াতের সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হল, কাঠগোদাম পর্যন্ত ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে একটি ব্যক্তিগত ট্যাক্সি বা বাসে করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছনো। আকাশপথে ভ্রমণের জন্য, কাঠগোদাম থেকে 30 কিলোমিটার দূরে পান্ত নগরের বিমানবন্দরটি সবচেয়ে কাছের বিকল্প।