মিডডে মিলে মাংস বাদ, শিশুর পাতে নেই দুধটুকুও! কোন পথে আসছে দেশে 'অচ্ছে দিন'?

Midday Meals: শুধুমাত্র যে প্রোটিনেরই উৎস দুধ, তা তো নয়। একই সঙ্গে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২, রাইবোফ্লাভিন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়ামের মতো একগুচ্ছ উপাদান রয়েছে দুধে। যা শিশু বিকাশের জন্য় ভীষণ ভাবে প্রয়োজ...

স্কুলে সাধারণত পড়াশোনাটুকুই করতে যায় শিশুরা। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গিয়ে প্রশ্ন করুন। জানতে পারবেন, শুধু পড়াশোনা নয়, কার্যত একবেলা ভরপেট খেতে পাওয়ার লোভেই স্কুলমুখো হয় অসংখ্য শিশু। তাঁদের মা-বাবারাও যে সন্তানদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে ক্ষেতে বা দোকানের কাজে লাগিয়ে দিচ্ছেন না, তারও একটা অন্যতম কারণ বোধহয় ওই মিডডে মিল। সামান্য একটু পুষ্টি, একটু পেট ভরা ভাত, সেটুকুর লোভেই কমেছে স্কুলছুটের হার। সেই মিডডে মিলের মেনু সাধারণত এমন ভাবে সাজানো হয়, যাতে স্কুলগামী শিশুদের ন্যূনতম পুষ্টিটুকু মিলতে পারে। প্রোটিন, কার্বহাইড্রেড এবং অন্যান্য জরুরি জিনিসের পুষ্টিগুণ যাতে বজায় থাকে, তা মেনেই ঠিক করা হয় স্কুলগুলির মিডডে মিলের মেনু।

আর সেই মেনু থেকেই মাংস বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লক্ষদ্বীপ প্রশাসন। না, এই সিদ্ধান্ত অবশ্য আজকের নয়। ২০২১ সালেই এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য এমন সিদ্ধান্তের কথা জানায় সেখানকার প্রশাসন। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, এবার থেকে স্কুলের মিডডে মিলে আর কোনও প্রকাশ মাংস দেওয়া হবে না। ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর ওই বিশেষ এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের জন্যই। শুধু মাংসই নয়, শিশুর পুষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুধ ব্যপারটিকেও তালিকা থেকে একেবারে ছেঁটে ফেলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভারতে বাড়ছে স্কুলছুট, আসল কারণ কী? ভয়াবহ ইঙ্গিত সমীক্ষায়

প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক আবেদনকারী। দুধ এবং মাংসের মতো প্রোটিনপ্রধান খাবারকে তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলার বিরোধিতা করেন তিনি। শুধুমাত্র যে প্রোটিনেরই উৎস দুধ, তা তো নয়। একই সঙ্গে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি ১২, রাইবোফ্লাভিন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়ামের মতো একগুচ্ছ উপাদান রয়েছে দুধে। যা শিশু বিকাশের জন্য় ভীষণ ভাবে প্রয়োজনীয়। ফলে এমন জরুরি দু'টি উপাদান খাদ্যতালিকা থেকে সরিয়ে ফেলা মোটেই ঠিক নয় বলে দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস এবং বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চে ওঠে মামলাটি। তবে সব দিক বিবেচনা করে সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে বিচারপতিদের বেঞ্চ। বিচারপতিরা সেই সিদ্ধান্তের সপক্ষে জানিয়েছেন, কোনও একটি অঞ্চলের শিশুদের খাদ্যের রুচি কেমন হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া আদালতের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।

২০২১ সালে কেরল হাইকোর্টে উঠেছিল আবেদনটি। সেখানেও খারিজ হয়ে যায় এই জনস্বার্থ মামলা। তবে এর পরে আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তবে সেখান থেকেও খালি হাতেও ফিরতে হল তাঁকে। কেরল হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের পক্ষেই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের বেঞ্চ জানিয়েছে, কেরল হাইকোর্টের রায়ে কোনও ত্রুটি খুঁজে পায়নি সুপ্রিম কোর্ট। বেঞ্চ আরও জানায়, মিডডে মিলের খাদ্য়তালিকায় মাছ, ডিমের মতো আমিষ উপকরণ রাখা হয়েছে, যা ওই দ্বীপ অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায়। শীর্ষ আদালত জানায়, এটা একেবারেই প্রশাসনের নীতিগত সিদ্ধান্ত, আর তাতে আইন বা সংবিধানের কোনও রকম লঙ্ঘন হয়নি। আর এ ব্যাপারটি আদালতের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না বলেই জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

The Supreme Court on Thursday junked an appeal challenging the Lakshadweep administration’s 2021 decision to drop meat from the midday meal menu in schools

সম্প্রতি জি-২০ সম্মেলনের আগে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত নৈশভোজের আসরের মেনুতে আমরা দেখেছি নিরামিশ খাবারের বাড়াবাড়ি। শুধু নিরামিশই নয়, সেই মেনুকার্ডের প্রায় সর্বঘটের কাঁঠালি কলা ছিল বাজরা। ফলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে অজ্ঞাত কারণে আমিষবিমুখতার দিকেই কিঞ্চিৎ হেলে। বহুদিন ধরেই খাদ্যতালিকা থেকে মাংস হঠিয়ে দেওয়ার দাবি উঠছে নানা হিন্দুত্ববাদী মহল থেকে। আর সেই প্রভাব এসে পড়ল লক্ষদ্বীপের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্কুলের মিডডে মিলের খাবারের তালিকায়।

আরও পড়ুন: বারবার তালা স্কুলের গেটে, গরমের ছুটি বাড়ার নেপথ্যে আসলে কোন কারণ?

সংবিধান কিন্তু খাদ্য নির্বাচনের সিদ্ধান্ত খাদ্যগ্রহণকারীর রুচির উপরেই ছাড়ে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই মৌলিক অধিকারের উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে প্রশাসন। আর এমনটা যে কেবল আজই হচ্ছে, তেমনটা কিন্তু নয়। এর আগেও এমন তুঘলকি সিদ্ধান্তে দেখেছে দেশ, এখনও দেখছে। ভবিষ্য়তেও যে দেখবে না, তেমন আশার কথা শোনাতে পারছে না কোনও পক্ষই।

More Articles