বিমানে সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাব, কী ভাবে পুলিশ খুঁজে পেল শঙ্করকে
Air India : বিমানের মধ্যে মহিলার গায়ে প্রস্রাব, পরপর একই অপ্রীতিকর ঘটনা এটার ইন্ডিয়ার বিমানে
পরপর দুটি ঘটনা। অভিযোগের তীর খোদ বিমান কর্তৃপক্ষের দিকেই। গত ২৬ নভেম্বর, নিউ ইয়র্ক থেকে দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ঘটা একটি ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই শোরগোল তুঙ্গে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন করে একই বিশ্রী ঘটনার সাক্ষী থাকলো বিমান যাত্রীরা।
অভিযোগ উঠেছিল, ওই দিন বিমানে মত্ত অবস্থায় বৃদ্ধা সহযাত্রীর গায়ের উপরে প্রস্রাব করে দেন মুম্বইয়ের শঙ্কর মিশ্রা নামে এক ব্যক্তি। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে বিমান কর্মীদের জানিয়েছিলেন বৃদ্ধা যদিও শুধুমাত্র গায়ের পোশাকটি পরিবর্তনের ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোনও রকম পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি বিমান কর্তৃপক্ষ এমনটাই জানিয়েছেন ওই বৃদ্ধা। এমনকী, মূত্রে ভিজে যাওয়া আসনের উপরে কাপড় বিছিয়ে সেখানেই তাঁকে বাকি পথটা বসে কাটানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন বিমানকর্মীরা। ওই বৃদ্ধা বিমানের মধ্যে ঘটা অপ্রীতিকর ঘটনার কথা নেটপাড়ায় জানান। শুধু তাই নয়, এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়ে চিঠিও লেখেন।
এখনও চলছে তদন্ত প্রক্রিয়া। এদিকে সেই ঘটনা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই ঘটলো দ্বিতীয় ঘটনাটি। মাত্র ১০ দিনে মাথায় আবার অপ্রীতিকর ঘটনা। গত ৬ ডিসেম্বর প্যারিস দিল্লির বিমানে এক মহিলার কম্বলের ওপর প্রস্রাব করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তবে এক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের গাফিলতির ছবিটা স্পষ্ট। অভিযুক্তের কাছ থেকে শুধুমাত্র লিখিত 'ক্ষমা' নিয়েই গোটা পর্বে ইতি টানা হয়েছে, বলেই জানিয়েছেন মহিলা। পরপর এরকম দুটি ঘটনাকে ঘিরে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে পরিবহন নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিমানের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথম ঘটনায়, অভিযুক্ত শঙ্কর মিশ্রা নিখোঁজ ছিলেন প্রাথমিক ভাবে এবং তাঁর বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশ জারি করা হয়েছিল। শঙ্কর মিশ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ নভেম্বরে নিউ ইয়র্ক- দিল্লি বিমানে তিনি বিজনেস ক্লাসে নিজের প্যান্টের চেন খুলে এক মহিলার উপর প্রস্রাব করেন। পরে তিনি ওই মহিলার কাছে ক্ষমা চেয়ে অনুরোধ করেন যাতে পুলিশে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ না করেন ওই সহযাত্রী। কিন্তু এহেন একটি ঘটনা চাপা থাকার কথা নয়। জল গড়িয়েছে অনেকদূর ইতিমধ্যেই। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাঁর কর্মস্থল থেকেও বরখাস্ত করা হয়েছে বলেই খবর সূত্রের।
বিমানের মধ্যে এরকম ঘটনা এই প্রথম নয়, এর আগেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ঘটেছে এহেন অপ্রীতিকর ঘটনা। তবে প্রতি ক্ষেত্রেই শাস্তি হয়েছে জোরালো। জেল খাটতে হয়েছে অভিযুক্তকে। সেখানে ভারতের বিমানের ক্ষেত্রে কেবল লিখিত একটা ক্ষমা চাওয়াতেই কেন ইতি টানতে চাইলেন কর্তৃপক্ষ?
নেটপাড়ায় এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখে অবশেষে নড়েচড়ে বসে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩০ দিনের জন্য তাঁর বিমানে ওঠায় নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়েছে। অভিযুক্ত প্রাথমিকভাবে ভাবে পলাতক থাকলেও অবশেষে খোঁজ মিলল তার। বেঙ্গালুরুর একটি গেস্ট হাউসে একাই লুকিয়ে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাকে।
তদন্তে উঠে এসেছে দুই পক্ষের বক্তব্য। জানা গিয়েছে,ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে ১৫০০০ টাকা দিয়েছিলেন শঙ্কর মিশ্রা। যদিও সে টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছিলেন বৃদ্ধার মেয়ে একথাও উঠে এসেছে ওপর পক্ষে। অন্যদিকে অভিযোগের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অভিযুক্তের বাবা শ্যাম মিশ্রা। বলেছেন, তাঁর ছেলের পক্ষে এই ঘটনা করা সম্ভব নয়। সে বিবাহিত, মায়ের বয়সী একজনের প্রতি এরকম আচরণ সে কিছুতেই করতে পরে না, ঘটনা মিথ্যা বলেই তাঁর দাবি। পাশাপাশি, বিমানে ওঠার আগে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ঘণ্টা ঘুম হয়নি ছেলের, এ কথাও জানান তিনি। গোটা ঘটনায় ভয় পেয়েই নাকি ফেরার হয়েছিল শঙ্কর মিশ্রা। কিন্তু এহেন একটা ঘটনার দায় কি সত্যিই এভাবে ঝেড়ে ফেলা সম্ভব? প্রশ্ন তো থেকেই যাচ্ছে। জারি থাকছে তদন্তও।
কিন্তু বিমানে এরকম অভব্য আচরণের বিরুদ্ধে কী বলছে আইন? বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা ডিজিসিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমানে কেউ অভব্য আচরণ করলে বিমানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসাবে অভিযোগ দায়ের করেন পাইলট। তারপর বিমান সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ একটি কমিটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে থাকে। ৩০ দিনের মধ্যে এই কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়। একই ব্যক্তি বারংবার অভব্য আচরণ করে থাকলে শাস্তির পরিমাণ এবং মেয়াদ দ্বিগুণ হতে থাকে। অভিযুক্ত যাত্রীর বিরুদ্ধে যত দিন তদন্ত চলে, তত দিন তাঁকে দেশের কোনও বিমানে উঠতে দেওয়া হয় না। শুধু প্রস্রাব করাই নয়, অপ্রীতিকর ঘটনা বলতে গালিগালাজ, কটূক্তি ইত্যাদিও পড়ে। তবে এতো কিছু নিয়ম থাকতেও কেন এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে কার্যত ধামা চাপা দিতে চেয়েছিলেন ঘটনার সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!