অবশেষে যুদ্ধবিরতি! ছয় সপ্তাহ পরে কী ঘটবে গাজায়? রহস্য জিইয়ে রাখল ইজরায়েল

Gaza Ceasefire: চুক্তির ফলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন - যদিও ইজরায়েলের ইচ্ছাকৃত ধ্বংস অভিযানের পরে অধিকাংশ বাড়িই আর অবশিষ্ট নেই।

১৫ মাস! ৪৬০ দিনের কিছু বেশিই। এই কাছাকাছি দেড় বছরে গাজাকে ধ্বংসস্তূপ বললেও সবটা বলা হয় না। ১৫ মাস, অজস্র শিশুর লাশ, অজস্র নাগরিকের মৃত্যু, অগণিত শরণার্থীর দুর্দশা পেরিয়ে অবশেষে ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ইজরায়েল, কাতার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হলো। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মহম্মদ বিন আব্দুলরহমান বিন জসিম আল থানি জানিয়েছেন, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি রবিবার, ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হবে। তবে তিনি এও জানিয়ে দিয়েছেন, ইজরায়েল এবং হামাসের সঙ্গে এই চুক্তির বাস্তবায়ন পদক্ষেপ নিয়ে কাজ চলছে এখনও। ইজরায়েল জানিয়েছে চূড়ান্ত কিছু কাজ। বৃহস্পতিবার ইজরায়েল সরকার চূড়ান্ত পরিকল্পনা জানাবে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চলছে ইজরায়েলের বীভৎসৎম আগ্রাসন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইজরায়েল এখনও অবধি ৪৬,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বড় অংশই শিশু।

চুক্তিতে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। যাতে আপাতত গাজায় চলতে থাকা ধ্বংসযজ্ঞের অবসান ঘটবে, পাশাপাশি গাজায় বন্দি এবং ইসরায়েলের হাতে বন্দি অনেকেই মুক্তি পাবেন। চুক্তির ফলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন - যদিও ইজরায়েলের ইচ্ছাকৃত ধ্বংস অভিযানের পরে অধিকাংশ বাড়িই আর অবশিষ্ট নেই। এই যুদ্ধবিরতির মূলত তিনটি পর্ব রয়েছে।

আরও পড়ুন- একদিনের শিশু, ৩০০০ ভ্রুণকে হত্যা ইজরায়েলের! গাজায় আর শিশুদিবস আসবে?

প্রথম পর্ব

শুরুর ছয় সপ্তাহ চলবে প্রাথমিক পর্যায়টি। এই সময়ে কিছু সংখ্যক বন্দি বিনিময়, গাজা থেকে ইজরায়েলি সৈন্যদের আংশিক প্রত্যাহার এবং এই অঞ্চলে ত্রাণ পাঠানো চলবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইজরায়েলে হামাস যে হামলা চালায়, সেই সময়ে আটক হওয়া মহিলা, শিশু এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সি সাধারণ নাগরিক সহ ৩৩ জন ইজরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে, ইজরায়েলও এই পর্বে বড় সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে, যার মধ্যে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরাও রয়েছেন। মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় ১০০০, যাদের ৭ অক্টোবরের পর আটক করা হয়েছিল।

বন্দিদের বিনিময়ের পাশাপাশিই ইজরায়েল গাজার মূল কেন্দ্র থেকে ইজরায়েলের সঙ্গে গাজার সীমান্তের ভিতরে ৭০০ মিটারের বেশি দূরে নয় এমন এলাকা থেকে নিজেদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করবে। তবে এই নেটজারিম করিডোর থেকে সেনা প্রত্যাহার নাও হতে পারে। এই অংশটিই গাজাকে দ্বিখণ্ডিত করে এবং গাজার অন্দরে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করে। নেটজারিম করিডোর থেকে সেনা প্রত্যাহার বেশ কয়েকটি ধাপে করা হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইজরায়েল এই যুদ্ধবিরতি চুক্ততে অবরুদ্ধ উত্তর অংশে সাধারণ নাগরিকদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেবে। তবে যেহেতু সেখানে সবটাই প্রায় গুঁড়িয়ে গেছে ফলে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। ফলে প্রতিদিন ৬০০-র মতো ট্রাক ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এখানে ঢুকতে পারবে।

এছাড়াও আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসার জন্য গাজা উপত্যকা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেবে ইজরায়েল এবং প্রথম দফার বাস্তবায়ন শুরুর সাত দিন পর মিশরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিংও খুলে দেবে।

ইজরায়েলি বাহিনীর উপস্থিতি কমবে ফিলাডেলফি করিডোরেও। এটি হচ্ছে মিশর এবং গাজার সীমান্ত এলাকা। চুক্তি কার্যকর হওয়ার ৫০তম দিনের মধ্যে সেনাবাহিনী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হবে।

আরও পড়ুন- ফিরিয়েছিলেন ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব, আইনস্টাইনের যে সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্কের শেষ নেই আজও

দ্বিতীয় পর্ব

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে কী কী ঘটবে তা প্রথম পর্যায়ে আলোচনা করা হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনা প্রথম পর্যায়ের প্রাথমিক ছয় সপ্তাহ যদি অতিক্রমও করে যায়, তাহলেও যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে।

ইসরায়েল অবশ্য জোর দিয়েছিল যে, প্রথম পর্যায় সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এবং ইজরায়েলের বন্দিরা ফিরে আসার পরে যে আক্রমণ ফের শুরু করবে না ইজরায়েল এর কোনও লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে না। তবে মিশর, কাতার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে আলোচনা চলবে এবং তিনজনই চুক্তির জন্য চাপ দেবে।

যদি দেখা যায়, সব শর্তপূরণ হয়েছে, হামাস অবশিষ্ট জীবিত বন্দিদের, যাদের বেশিরভাগই পুরুষ সৈন্য- তাদের মুক্তি দেবে। বদলে ইজরায়েলি জেলে বন্দি বাকি ফিলিস্তিনিদেরও মুক্ত করা হবে। ইজরায়েল গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে।

তবে এই শর্তগুলি নিয়ে ইজরায়েলি মন্ত্রিসভা কিন্তু এখনও ভোট দেয়নি। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতায়াহুর মন্ত্রিসভার অনেক ডানপন্থী সদস্যই এতে রাজি নন। নেতানিয়াহুর নিজেও এর আগে বহুবার বলেছেন, গাজায় হামাস নিকেশ না হওয়া অবধি আক্রমণ চলবে।

তৃতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্বে কী কী ঘটবে তা এখনও অস্পষ্টই। দ্বিতীয় পর্যায়ের শর্ত পূরণ করা হলে, তৃতীয় দফায় বাকি বন্দিদের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে। বিনিময়ে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে তিন থেকে পাঁচ বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনা পরিচালনা করতে হবে। যুদ্ধবিরতিকালে কে গাজা পরিচালনা করবে তা নিয়ে বর্তমানে কোনও সমঝোতা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্করণের জন্য চাপও দিয়েছে। ইজরায়েল এখনও গাজায় শাসনের বিকল্প কোনও পরিকল্পনাও দেয়নি।

More Articles