কোনওকালেই নাকি ক্রুশবিদ্ধ হননি যিশু! চাঞ্চল্যকর দাবি বাইবেলে
1500-Year-Old Bible: ২০০০ সালে কয়েক জন দুষ্কৃতি বইটি পাচারের ধান্দায় ছিল। সেই সময়েই বইটির দাম ছিল ২৮ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ফলে বুঝতেই পারছেন কালো বাজারে বইটির গুরুত্ব ঠিক কতটা।
ঘোরতর নাস্তিকেরা বলবেন ঈশ্বর নেই। আর আস্তিকরা অস্বীকার করবেন নাস্তিকদের গোটা অস্তিত্বটাকেই। এই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের খেলা সারাবেলা ধরে চলবে। কিন্তু শেষ কথা বলবে আদতে ইতিহাস এবং প্রমাণ। যিশুখ্রিস্টকে ঘিরে অনেক লোককথা, গল্প-ইতিকথা ভেসে বেড়ায় হাওয়ায়। যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার গল্প বা পুনর্জন্মের গল্প যেন কিংবদন্তি। অতি বড় নাস্তিকও এক বাক্যে সায় দেবেন সে কথায়। তবে ওই যে শেষ কথা বলবে প্রমাণ। আর তুরস্ক থেকে সম্প্রতি মিলেছে এমনই একটি প্রমাণ, যা বলছে যিশুকে নাকি কোনও দিন ক্রুশবিদ্ধই করা হয়নি।
মনে করা হয়, যিশু বেঁচে থাকতে থাকতেই বাইবেল লেখার কাজে হাত দেওয়া হয়েছিল। যিশুর অস্তিত্বের অন্যতম বড় প্রমাণ তাই এই বাইবেল। তবে বাইবেলের প্রতিটা টেস্টামেন্টই একে অপরের থেকে একটু আধটু আলাদা। তবে ওই একটুজ-আধটুই। যিশুখ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকেই সরাসরি নাকচ করে দেয়, এমন বাইবেল এতদিন দেখা যায়নি। তবে এবার তা-ও মিলল, যেখানে মিলবে যিশুকে নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নতর একটি গল্প।
আরও পড়ুন: কেবল যিশু খ্রিস্টই ক্রুশবিদ্ধ হননি, বিশ্বের ভয়ংকর এই শাস্তির পেছনে রয়েছে কোন ইতিহাস?
২০০০ সাল নাগাদ তুরস্ক থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় দু'হাজার বছর আগে লেখা সেই বাইবেল। তবে এ বাইবেল সে বাইবেল নয়। যিশুর অনুগামী পলসের অনুগামীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সেন্ট বার্নাবাস। তিনিই লিখেছিলেন এই বই। ২০০০ সালে কয়েক জন দুষ্কৃতি বইটি পাচারের ধান্দায় ছিল। সেই সময় উদ্ধার হয় বইটি। সেই সময়েই বইটির দাম ছিল ২৮ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ফলে বুঝতেই পারছেন কালো বাজারে বইটির গুরুত্ব ঠিক কতটা। তবে যাই হোক, সেই বার অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল সেই বাইবেল। বিশেষজ্ঞেরা পরীক্ষানিরিক্ষা করে বলেন, এ বইতে বার্নাবাসের গসপেলের উল্লেখ রয়েছে। হাতে লেখা এই বইটি সিরীয় অ্যারামাইক উপভাষায় লেখা। যা হতেও পারে যিশুর মাতৃভাষা হলেও হতে পারে। ভৌগোলিক ভাবে সে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও যায় না। কারণ জেরুজালেম আর সিরিয়ার দূরত্ব কিন্তু খুব একটা বেশি নয়।
বইটি যারা বিশ্লেষণ করেন, সেইসব বিশেষজ্ঞদের দাবি, কম করে হলেও বইটি দেড় হাজার বছর পুরনো তো হবেই। তার বেশি পুরনোও হতে পারে। তবে এই বইয়ের গল্প, বাদবাকি সমস্ত বাইবেলের থেকে একেবারে উলট পূরাণ। কারণ এই গল্পে, যিশু নয়, জুডাস ছিলেন ক্রুশবিদ্ধ। আর জীবন্ত অবস্থাতেই স্বর্গে পৌঁছেছিলেন যিশু। আরও একটি বড় পার্থক্য রয়েছে এ গল্পে। এখানে যিশু ঈশ্বরপুত্র নন, বরং ধর্ম প্রচারক মাত্র, যিনি ঈশ্বরের বাণী পৌঁছে দেন মানুষের কাছে।
এ গল্পে যিশুর অনুরাগী পলকে প্রতারক বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সেটাই এ বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। কারণ এ বইয়ের লেখত সেন্ট বার্নাবাস ছিলেন পলের অন্যতম সহযোগী। তা সত্ত্বেও পলকে প্রতারক হিসেবে দেখালেন কেন বার্নাবাস। নাকি তা দেখাতে বাধ্য হয়েছিলেন! বলা মুশকিল। আরও একটা দিক থেকে আলাদা এই বাইবেল। অন্যান্য বাইবেলে অন্য ধর্মকে ছোট করার কোনও প্রবণতা ছিল না। এই বাইবেল সেদিক থেকে ব্যতিক্রম।
যিশুর স্বর্গে উত্তোরণকে আরও মহিমান্বিত করতেই জীবন্ত অবস্থাতেই যিশুকে স্বর্গে পৌঁছে দিয়েছিলেন লেখক। তবে শেষপর্যন্ত যিশু যে অধর্মের নির্মূল করতে এবং পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে বারবার এই ধরাধামে ফিরে আসবে, সেই আপ্তসমাপ্তীতে কিন্তু ফিরেছে এই বাইবেলও। তবে এই বই আসল না নকল, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছেই। জানা যায়, খ্রিস্টান গির্জার প্রথম কাউন্সিল বার্নাবাসের গসপেলকে বেছে নেয়নি কারণ সেথানে সেন্ট বার্নাবাসের মৃত্য়ু সংক্রান্ত কোনও তথ্যই নেই। তবে তুরস্ক থেকে পাওয়া এই বইটির একেবারে অন্যরকম তথ্যগুলি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল ভ্যাটিকান স্বয়ং। তবে তুরস্ক সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। খালি চোখে অনেকেই বইটিকে নকল বলে দাবি করলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানান, বইটি আসল। তবে সিরিয়ার ওই উপভাষাটি ক্রমবিলুপ্ত। ফলে ওই ভাষা জানা মানুষ আজ খুঁজে পাওয়া কঠিন। বইটির সমস্ত পাতাই পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি, এবং গোটাটাই হাতে লেখা। ফলে বইটি নকল হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একটি পক্ষ।
আরও পড়ুন:‘খ্রিস্ট’ : ঈশ্বর নয়, রোমানদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী যিশুর প্রতিবাদের কাহিনি
শেকসপিয়র বলেছিলেন, পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই ঘটে, সাধারণ যুক্তিবুদ্ধিতে যার বিশ্লেষণ বা ব্যখ্যা হয় না। হাঁ হয়ে সেসব গল্প শোনে কেবল হোরাশিওরা। এই বইটিও যেন তেমনই। সাধারণ বাইবেলে যার ব্যখ্যা হয় না, তেমনই বিরল কিছু তথ্য বুকে নিয়ে কয়েক হাজার বছর ধরে জেগে রয়েছে প্রাচীন এই পুস্তকটি।