বিছানা ছাড়তে গায়ে জ্বর? আপনার জন্যই পুরস্কার হাতে অপেক্ষা করছে অলস চ্যাম্পিয়নশিপ

‘Laziest Citizen’ Competition: অলস বলে যতই নিন্দামন্দ করা হোক না কেন, আসল অলস হওয়া কিন্তু মুখের কথা নয়। তার জন্য়ও চাই যথেষ্ট মনোবল ও নিষ্ঠা। আর তেমনটাই বুঝিয়ে দিল এই প্রতিযোগিতা।

আরব বেদুইন হওয়ার 'দুরন্ত আশা; আর কত জনেরই বা থাকে বলুন। তবে ঘুমোতে ভালবাসেন না, এমন মানুষ দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া কঠিন। নিন্দুকেরা যতই মন্দ বলুক না কেন, সুস্থ জীবনের পাশাপাশি সুখের গোপন চাবিও কিন্তু লুকিয়ে ওই ঘুমেই। তবে ইদানীং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের মানসিক চাপ, স্ট্রেস যা জন্ম দিচ্ছে অবসাদের। যা কেড়ে নিচ্ছে শান্তির ঘুমও। সেই শান্তির ঘুম ফেরাতেই অভিনব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হল সারবিয়াতে।

পড়াশোনায় সেরা, মেধায় সেরা, নাচ-গানে সেরা কিংবা নানা ধরনের খেলাধুলায় সেরা- এমন বহু প্রতিযোগিতাই তো দেখি আমরা চারপাশে। এমনকী সেরা সৌন্দর্য্য খুঁজে নেওয়ার প্রতিযোগিতাও। তবে সেরা অলস খুঁজে নেওয়ার এমন অভিনব দৌড়ের কথা কি শুনেছেন কেউ কস্মিনকালেও। তবে তেমনই ব্যাতিক্রমী আয়োজন করে তাক লাগিয়েছে সারবিয়া। সেখানকার ব্রেঞ্জা শহরের একটি রিসর্টে বসেছিল সেরা অলস খোঁজার আসর।

আরও পড়ুন: যে কোনও স্থানে মাত্র ১২০ সেকেন্ডে গভীর ঘুমাতে পারেন আপনি এই মিলিটারি কৌশলে, কীভাবে?

তবে অলস খোঁজার লড়াই হলে কী হবে। এই প্রতিযোগিতার শর্তও ছিল বেশ কঠিন। সেই হবেন এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী, যিনি একবারও না উঠে টানা শুয়ে থাকতে পারবেন। যে কোনও প্রতিযোগীকে ন্যূনতম ৪৬৩ ঘণ্টা শুয়ে থাকতেই হবে। এই প্রাথমিক শর্ততেই প্রতিযোগিতায় যোগ দিন অংশগ্রহণকারীরা। অলসতম অংশগ্রহণকারী জিতে নেবেন আয়োজকদের তরফে এক হাজারটি ইউরো। এমনটাই বলা হয়েছিল আয়োজকদের তরফে।

মোট ২১ জন নেমেছিলেন এই অলস খোঁজার লড়াইয়ে। তবে শেষ পর্যায়ের লড়াইয়ে টিকে যান মাত্র সাত জন। সেই সাত জনের মধ্যে হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে প্রতিযোগিতা চলাকালীন অংশগ্রহণকারীরা চাইলে খাবারদাবার খেতে পারেন, সুস্বাদু পানীয়তে চুমুকও দিতে পারেন। এমনকী ঘাঁটতে পারেন ফোন এবং ল্যাপটপও। তবে শর্ত একটাই বিছানা ছেড়ে ওঠা যাবে না। যে কোনও মূল্যেই আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে থাকতে হবে প্রতিযোগীকে। তবে প্রতি আট ঘণ্টা অন্তর অন্তর দশ মিনিট করে বিরতি পাবেন প্রতিযোগীরা। যে সময়ে তারা শৌচালয়ের কাজ সারতে পারেন।

২০২১ সালে এই প্রতিযোগিতায় সেরার সেরার খেতাব জিতে নিয়েছিলেন দুবরাভকা আক্সিক নামে মহিলা। তার মুকুটে উঠেছিল ২০২১ সালের সেরা অলসের খেতাব। গোটা প্রতিযোগিতাটাই দারুণ উপভোগ করেছিলেন দুবরাভকা। উদ্যোক্তাদের তরফে যে সাহায্য বা প্রশ্রয়, সে সময় তিনি পেয়েছেন, তা ভোলার নয় বলেই জানিয়েছেন ২০২১ সালের খেতাববিজয়ী।

আজ থেকে ১২ বছর আগে শুরু হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা। মন্টেনিগ্রিন অর্থাৎ দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের শহর মন্টেনিগ্রোর বাসিন্দারা স্বভাববশতই অলস, এমন একটা ধারণা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। আর সেই ধারণা ভাঙতেই প্রাথমিক ভাবে আয়োজন করা হয়েছিল অভিনব এই প্রতিযোগিতার। সেই ধারণা আদৌ ভেঙেছিল কিনা জানা নেই, কিন্তু প্রতিযোগিতার সেই ধারা এখনও চলে আসছে। গত বছর যিনি প্রথম হয়েছিলেন তিনি বিছানায় শুয়েছিলেন মোট ১১৭ ঘণ্টা। ইতিমধ্য়েই সেই রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে।

এই প্রতিযোগিতা যিনি আয়োজন করেছেন, সেই রডজোনা ব্লাগোজেভিক একাধারে ওই রিসর্টের মালিকও। তিনি জানিয়েছেন, গত বছরের রেকর্ড ভেঙে এই প্রতিযোগিতা এখনও চলছে। এখনও সেখানে রীতমতো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন চূড়ান্ত ৭ প্রতিযোগী। আগে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হল মেপল গাছের ছায়ায়। তবে আবহাওয়াগত অসুবিধার কারণে এ বছর প্রতিযোগিতার জায়গা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন আয়োজকেরা। আপাতত মাথার উপরে ছাদ আছে এমন জায়গাতেই সেরা অলস খোঁজার কঠিন প্রতিযোগিতা চলছে।

আরও পড়ুন: বেশি অথবা কম ঘুম দুইই কাল হতে পারে শরীরের! জানেন সুস্থ থাকতে কোন বয়সে কতটা ঘুম জরুরি?

ফলে বুঝতেই পারছেন, অলস বলে যতই নিন্দামন্দ করা হোক না কেন, আসল অলস হওয়া কিন্তু মুখের কথা নয়। তার জন্য়ও চাই যথেষ্ট মনোবল ও নিষ্ঠা। ফলে পরের বার কাউকে কুড়ে বা অলস বলার আগে কিন্তু সেই কথাটা একবার ভাবতে ভুলবেন না মোটেও। অলস চ্য়াম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীদের কথাও ভাবতে পারেন একটিবার।

More Articles